Thank you for trying Sticky AMP!!

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: নির্মাণকাজ নিয়ে যত জটিলতা

চট্টগ্রাম নগরের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। গত সোমবার পতেঙ্গা এলাকায়। ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে যেতে কখনো কখনো দুই–আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এই পথ পাড়ি দিতে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্তু ভোগান্তি নিরসনের এই প্রকল্পের কাজ এখন থমকে আছে নানা জটিলতায়।

বিকল্প সড়ক চালু না হওয়ায় নির্মাণকাজ শুরু করতে দিচ্ছে না পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। তাদের দাবি, নির্মাণকাজ শুরু হলে বিমানবন্দর সড়ক সংকুচিত হবে। এতে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তখন চট্টগ্রাম বন্দর ও ইপিজেড থেকে পণ্য আনা-নেওয়া কার্যক্রম ব্যাহত হবে। আবার নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্দরের আপত্তিতে নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। এসব জটিলতায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার পথের ১১ কিলোমিটারের কাজ এক বছরেও শুরু হয়নি। প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বন্দর ও ট্রাফিক বিভাগসহ সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঠিকভাবে সমন্বয় না করায় এসব জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তা মানতে নারাজ সিডিএর প্রকৌশলীরা।

চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়ক, শেখ মুজিব সড়ক ও সিডিএ অ্যাভিনিউর ওপর এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে গত ৮ জানুয়ারি চিঠি দিয়েছেন সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ।

২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকের সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম নগরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে এটাই সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প।

>

সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১১ কিলোমিটারের কাজ শুরু হয়নি এক বছরেও। কাজের অগ্রগতি ২০ শতাংশ। বাড়ছে মেয়াদ ও ব্যয়।

সিডিএর নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিডিএ প্রকল্প এলাকাকে চারটি অংশে ভাগ করে। এর মধ্যে লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং, বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা এবং সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত অংশে কাজ শুরু হয়নি। এর মোট দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার। শুধু সিমেন্ট ক্রসিং থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার অংশে কাজ চলমান রয়েছে।

ট্রাফিকের আপত্তি

চট্টগ্রামের বিমানবন্দর সড়কের পাশেই চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি, চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেড। পতেঙ্গায় অন্তত ছয়টি কনটেইনার ডিপো রয়েছে। আছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা। চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রতিদিন ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এর মধ্যে শুধু বন্দরের ভেতরে আসা-যাওয়া করে ছয় থেকে সাত হাজার ভারী যানবাহন।

সিডিএ ও ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, বিমানবন্দর সড়কের সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং এবং শেখ মুজিব সড়কের দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। নির্মাণকাজের জন্য ৯০ ফুট প্রশস্ত সড়কের ৩০ ফুট অংশে ঘেরাও দিতে হবে। মূল সড়কের প্রশস্ততা কমলে বিমানবন্দর সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যাবে। তখন ভয়াবহ যানজট হবে। তাই বিকল্প সড়ক চালুর আগে নির্মাণকাজ শুরুর ব্যাপারে আপত্তি জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক বিভাগ।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দুই সপ্তাহ আগে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আউটার রিং রোড চালু না হওয়ায় ট্রাফিক পুলিশ কাজ করতে দিচ্ছে না। এভাবে কাজ করতে না পারলে ব্যয় ও মেয়াদ—দুটিই বাড়বে।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. তারেক আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাফিক বিভাগ একা আপত্তি দিয়েছে, বিষয়টি ঠিক নয়। বন্দরের দাবিও ছিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের কারণে আমদানি-রপ্তানির গাড়ি চলাচলে যাতে ব্যাহত না হয়। আউটার রিং রোড চালু না করে নির্মাণকাজ শুরু করলে বিমানবন্দর সড়কে যানজট নিরসন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বন্দরের আপত্তিতে নকশা পরিবর্তন

শুধু ট্রাফিক বিভাগ নয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তির মুখে পড়েছে সিডিএ। নগরের বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত অংশে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিগুলোর অবস্থান। জেটিগুলোর পাশ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করার নকশা করেছিল সিডিএ। কিন্তু জেটির পাশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গেলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে নকশা সংশোধনের অনুরোধ জানায় সিডিএকে। পরে এই অংশে নকশা পরিবর্তন করে সিডিএ। এখন মূল সড়কের পরিবর্তে পাশ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান।

সিডিএ ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় প্রকল্পের কাজ শুরুর পর জটিলতা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যস্ততম বন্দর। গাড়ির প্রচুর চাপ। তাই বিকল্প সড়ক না থাকলে যানজটের আশঙ্কায় বন্দর ও ট্রাফিক বিভাগ আপত্তি দেবে, এটাই স্বাভাবিক। সিডিএর উচিত ছিল আগেই বিকল্প সড়ক প্রস্তুত করা। আর নকশা প্রণয়নে সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করলে এই ধরনের জটিলতা হতো না।