'কবিতা মূলত শব্দ ও উপলব্ধির অন্বেষণ'

>
কামাল চৌধুরী। ছবি: সাইফুল ইসলাম
কামাল চৌধুরী। ছবি: সাইফুল ইসলাম
কবি কামাল চৌধুরীর ৬০তম জন্মদিন আগামীকাল। সত্তরের দশকের বিশিষ্ট এই কবির কবিতায় আছে স্বতন্ত্র এক স্বর। জন্মদিনের কয়েক দিন আগে নিজের কবিতার নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলতাফ শাহনেওয়াজ

আলতাফ শাহনেওয়াজ: ২৮ জানুয়ারি আপনার ৬০তম জন্মবার্ষিকী। ষাটে এসে কবি হিসেবে আপনার উপলব্ধি কী?

কামাল চৌধুরী: সব সময় নিজেকে আমি কবিতা-পথের সামান্য পথিক হিসেবে বিবেচনা করি। কবিতার জন্য আমার এই জীবন-অভিজ্ঞতার বহু অংশ আমি অতিবাহিত করেছি, কিন্তু কবিতার অন্বেষণ কখনো শেষ হয় না। কবিতা মূলত শব্দ ও উপলব্ধির অন্বেষণ। একজন কবির জন্য এই পথচলাটা দীর্ঘ এবং অসমাপ্ত। অনেক কবিতা আমি লিখেছি, কিন্তু ভেতরের অতৃপ্তি কখনো ঘোচেনি। এটি ভালো কবিতা লেখার আকুতি। এই অতৃপ্তি না থাকলে হয়তো আমি পথের মাঝখানে থেমে যেতাম। কবিতা নিয়ে আমার একান্ত উপলব্ধি হলো, কবিকে কবিতার পথ থেকে সরানো যায় না।
আলতাফ: এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন, কবিতা হলো একধরনের আত্মকথন—মেমোয়ার্স। এর সূত্র ধরে জানতে চাই, কবিতার প্রতি আপনার আকর্ষণ কি শৈশব থেকেই?
কামাল: শৈশবে কাব্যবোধ ছিল অবচেতনে। কিন্তু কবিতার প্রতি একটা টান বা পক্ষপাত আমার বরাবরই ছিল, এটা বলতে পারি। আমার বই পড়ার অভ্যাস ছিল। আমাদের গ্রামে একটা লাইব্রেরি ছিল। তারচেয়ে বড় কথা, আমার বাবা পড়ুয়া ছিলেন। তাঁর আগ্রহের বিষয় ছিল ইতিহাস। পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্রনাথ-নজরুল পড়তেন। সুকান্ত-জসীমউদ্দীনও তখন গাঁয়ের পাঠকদের কাছে পৌঁছে গেছেন পাঠ্যপুস্তকের কল্যাণে। তবে ত্রিশের আধুনিক কবিরা তখনো গ্রামে পৌঁছাননি। বাবার সংগ্রহ এবং লাইব্রেরি থেকে বিভিন্ন ধরনের বই নিয়ে ওই সময় আমার সাহিত্যপাঠ শুরু হয়। তবে গদ্য-পদ্য মিলে আমার লেখালেখির শুরুটা হলো অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে কবিতার প্রতি আমার ঝোঁকটা বেড়ে যায়। অভিভাবকেরাও বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন এই কারণে।
আলতাফ: উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ঢাকা কলেজে পড়েছেন। যত দূর জানি, এখান থেকেই আপনার কবিজীবনের মোড় ঘুরে গেল। কেমন ছিল সেই সময়টা?
কামাল: ঢাকা কলেজে দারুণ একটা সময় কাটিয়েছি আমি। এখানে এসে আমি কয়েকজন বন্ধু পেয়ে গেলাম। সবাই সাহিত্য-অন্তঃপ্রাণ—রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, জাফর ওয়াজেদ, মঈনুল আহসান সাবের। আন্দালিব রাশদীও তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিল। আমাদের আড্ডাটা ছিল মূলত আমি, রুদ্র আর জাফরকে নিয়ে। আমাদের আরও কিছু সাহিত্যপ্রমী বন্ধুবান্ধব ছিল। আমরা তখন পাঠ্যবিষয়ের ওপর সুবিচার না করে কবিতা-সাহিত্য-দর্শন—এসব নিয়ে পড়ে থেকেছি। আজ বলতে পারি, একই সঙ্গে সৃষ্টিশীলতা ও অপচয়ের সময় গেছে ঢাকা কলেজে। সে সময় ঢাকা কলেজে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে। স্যার তখনো কণ্ঠস্বর পত্রিকাটা বের করতেন, এটা সে সময় বন্ধ হওয়ার পথে। তো, কণ্ঠস্বর-এর শেষ সংখ্যায় সায়ীদ স্যার আমাদের লেখা ছেপেছিলেন। আমার বন্ধু জাফর ওয়াজেদ সাহিত্যের সব ধরনের খবরাখবর রাখত। বিভিন্ন অঞ্চলের পত্রপত্রিকা সে জোগাড় করে নিয়ে আসত, আমরা পড়তাম। সেই সময় আমার লেখা দৈনিক ও পত্রপত্রিকায় ছাপা শুরু হয়। প্রথমে দৈনিক আজাদ-এ কবিতা ছাপা হয়। এরপর ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলার মতো কাগজগুলোতে লিখতে থাকি।
আলতাফ: ঢাকা কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ও আপনাকে নিয়ে কিছু গালগল্প আছে। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের গল্প জানতে চাই।
কামাল: আমি আর রুদ্র খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। সবাই আমাদের চিনত মানিকজোড় হিসেবে। দুজনকে একসঙ্গে মিলিয়ে বলত রুদ্র কামাল। তো, রুদ্র কয়েক বছর ফজলুল হক হলে ৩০৯ নম্বর কক্ষে আমার সঙ্গে থেকেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুদ্র আর জাফর বাংলা বিভাগে ভর্তি হলো, আমি হলাম সমাজবিজ্ঞানে। তখন ষাটের কবিরা আড্ডা দিতেন শরিফ মিয়ার ক্যানটিনে, আমাদের আড্ডা হতো গফুর মিয়ার চায়ের দোকানে। এই আড্ডায় আলী রীয়াজ, শাহজাদী আনজুমান আরা, তুষার দাশ, আলমগীর রেজা চৌধুরী, ইমদাদুল হক মিলন, লুৎফর রহমান রিটন, আবিদ রহমান, ফরিদ কবির, রেজা সেলিম, মুহম্মদ সামাদ, আবু হাসান শাহরিয়ার, সৈয়দ আল ফারুক, আহমদ আজিজ, মোহন রায়হান, আসলাম সানী, মাসুদুজ্জামান, ইকবাল হাসান, মাসুদ বিবাগী, আওলাদ হোসেন, সলিমুল্লাহ খান—আরও অনেকে আসতেন। সত্তর ও আশির দশকের অনেকে আসতেন এই আড্ডায়। কবিতা ও রাজনীতি—দুই বিষয়েই আলাপ করতাম আমরা। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হলে আমরা তখনই ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছি। এই সময়েই আমি ‘মুজিব লোকান্তরে, মুজিব বাংলার ঘরে ঘরে’ স্লোগানটা লিখি। পরে এ লাশ আমরা রাখব কোথায় শিরোনামে একটা পত্রিকা বের হলে আমরা সবাই সেখানে কবিতা লিখলাম। সে সময় আমরা চিন্তা করলাম, কবিতা ও রাজনীতিকে আরেকটু কাছাকাছি নিয়ে আসা দরকার। সেই ভাবনা থেকে মধুর ক্যানটিনে একটা কবিতাপাঠের আসর করেছিলাম। সেই সময়ে আমরা ‘রাখাল’ নামে একটা সংগঠন করি। এর মাধ্যমে শিল্প-সাহিত্যের একটা জনমুখী জাগরণ ঘটাতে চেয়েছিলাম আমরা। কবিরা যেমন রাজনীতিসচেতন হবেন, তেমনি ছাত্ররাজনৈতিক কর্মীরাও কবিতাকে অনুভব করবেন—সংগঠন গড়ে তোলার পেছনে আমাদের অভিপ্রায় ছিল এমন। অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তিক একটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্র সৃষ্টির প্রয়াস ছিল আমাদের ভেতর। নক্ষত্রবীথি নামে কবিতাবিষয়ক একটি পত্রিকাও বের করেছিলাম আমরা।
আলতাফ: ওই সময় আপনাদের কেন মনে হলো কবিতার সঙ্গে রাজনীতির একটা মেলবন্ধন থাকা উচিত?
কামাল: এটা যেমন সচেতন প্রয়াস ছিল, তেমন সময়ের দাবিও ছিল। আমরা কবিরা একটা সময়ের কণ্ঠস্বর হয়ে আবির্ভূত হতে চেয়েছি। কবিতার মধ্যে সমাজ পরিবর্তনের উদ্দীপনা থাকে। তরুণদের ভেতরে আমরা তা সঞ্চারিত করতে চেয়েছি। আর আমাদের ওই সময়টিকে এখনকার বাস্তবতায় মেলানো যাবে না—সে এক উত্তাল সময়।
আলতাফ: আপনাকে সবাই ‘প্রেম ও দ্রোহের কবি’ বলে কেন?
কামাল: এই অভিধাটা খুব ক্লিশে হয়ে গেছে। কেন সবাই এটা বলে, জানি না। কবিমাত্রই তো প্রেম ও দ্রোহের কবি। আসলে প্রেম ও দ্রোহ না থাকলে কবিই হওয়া যায় না।
আলতাফ: আপনার প্রথম বই মিছিলের সমান বয়সী বের হয় ১৯৮১ সালে। কেউ বলেন, আপনার প্রথমদিককার কবিতায় শামসুর রাহমানের প্রভাব ছিল। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
কামাল: আমার তেমনটা মনে হয় না। এটা ঠিক যে সমকালের কোনো না কোনো কবির ছাপ পড়তেই পারে। এটা দোষের কিছু না। শামসুর রাহমান আমাদের সময় তো বটেই আমাদের সাহিত্যেরই প্রধান কবিদের একজন। তাঁর সময় লিখতে এসে অন্যদের কিছুটা প্রভাবাচ্ছন্ন থাকা স্বাভাবিক। আমার প্রথম কবিতাগ্রন্থ মিছিলের সমান বয়সী ছিল সে সময়ের স্পর্ধিত তারুণ্যের প্রতীক। আমরা সেই সময় কবিতার মিছিলে ছিলাম, প্রতিবাদের মিছিলে ছিলাম, দেশকে ভালোবাসার মিছিলে ছিলাম। আসলে আমি এখানে যা বোঝাতে চেয়েছি তা হলো, এই মিছিল তাৎক্ষণিক কোনো মিছিল নয়। এই মিছিল মানুষের সভ্যতা ও অগ্রযাত্রার মিছিল। আমি কলম হাতে সেই মিছিলে শরিক হতে চেয়েছি।
আলতাফ: প্রথম বইয়ের ১০ বছর পর ১৯৯১ সালে বের হলো আপনার দ্বিতীয় কবিতার বই টানাপোড়েনের দিন। দ্বিতীয় বইয়ের ক্ষেত্রে এত দীর্ঘবিরতি কেন?
কামাল: সেই সময় আমি সরকারি চাকরিতে যোগদান করি। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হয়। কবিবন্ধুদের কাছ থেকে দূরে সরে যাই। আবার তখন বিয়েও করেছি। জীবনের নতুন অধ্যায়, সংসার—কবিতার সময়কে হরণ করেছে। তবে একেবারে লিখিনি তা নয়। কম লিখছি। প্রকাশও কম ছিল। কোনো কোনো সময় কবিতারও অবসর দরকার। ধরে নাও এটা এ রকম অবসরকাল।
আলতাফ শাহনেওয়াজ: আপনার একটি বিখ্যাত কবিতা ‘যমজ’। কবিতাটি মনে হয় আত্মজৈবনিক। একটু ব্যাখ্যা করবেন কি?
কামাল চৌধুরী: আমি আসলে যমজ। আমার সঙ্গে আমার এক ভাইয়েরও জন্ম হয়েছিল। তবে জন্মের পরেই সে মারা যায়। ফলে আমার যেদিন জন্মদিন, সেদিন আমার ভাইয়ের জন্মদিন এবং মৃত্যুদিনও। তো, যমজ ভাইটি আমার শরীরেরই একটা অংশ। তাই মাঝেমধ্যে আমার মনে হয়, এই যে আমি লিখছি, এ লেখা আমাদের দুজনের অনক্ষর হাতে শুরু। বেঁচে থাকলে সে-ও হয়তো লিখত। এখন আমি যেন তার হয়ে লিখছি। আমার ‘যমজ’ কবিতায় তা-ই আমি বলতে চেয়েছি।
আলতাফ: রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ মারা গেলেন ১৯৯১ সালে। তখন আপনি লিখলেন ‘রুদ্র তোর স্মৃতি’ শিরোনামের কবিতাটি।
কামাল: এটা ওর মৃত্যুর পরে লেখা। রুদ্র মারা গেল আগস্ট মাসে। আমার চাকরি তখন উখিয়াতে। তবে কী এক কাজে সে সময় আমি ঢাকায় এসেছিলাম। কিন্তু জানতাম না রুদ্রের মৃত্যুর খবর। তো, ঢাকায় এসে পত্রিকায় দেখি যে সে আর নেই। পরের দিন তার মরদেহ দেখি। এটা বোধ হয় মিরাকল। কারণ, আমার তখন ঢাকায় থাকার কথা ছিল না। কীভাবে কীভাবে যেন চলে এসেছিলাম। বন্ধুর সঙ্গে শেষ দেখা হলো।
আলতাফ: আপনার প্রথম দিকের কবিতা যতটা উচ্চকিত, পরবর্তী সময়ের কবিতা ততটা নয়। এর বিপরীতে কবিতাগুলোতে নৈঃশব্দ্যের পরিমাণই বেশি। কী বলবেন?
কামাল: আমি মনে করি, দেশ-সমাজ ও জাতির প্রয়োজনে কখনো কখনো কবিকে উচ্চ স্বরে কথা বলতে হয়, কবিতা লিখতে হয়। কবির সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। কবি বিচ্ছিন্ন মানুষ নন। তাঁকে জীবনযাপনের কোলাহলের ভেতর বাস করতে হয়। কিন্তু কবিতা মূলত একটা পরিশ্রুতির অনুশীলন। অর্থাৎ কোলাহলের ভেতর কবিকে প্রকৃত কবিতার অনুসন্ধানও করতে হয়। উচ্চকিত হলেই যে ভালো কবিতা হবে না, এমন তো নয়। উচ্চকণ্ঠ কিন্তু কালোত্তীর্ণ ও অসাধারণ কবিতার অনেক উদাহরণ আছে। মোদ্দা কথা হলো, ভালো কবিতার শর্ত পূরণ করতে হলে আঙ্গিক, কৌশল, প্রকরণ—সব দিক থেকে কবিকে যত্নবান হতে হবে। আমি চেষ্টা করেছি আমার কবিতায় নিরীক্ষা কাজটা করে যেতে।
আলতাফ: প্রথম দিকের কবিতায় আপনার যে মহাবয়ানের প্রবণতা, শেষদিকে এসে সেটি আর থাকেনি। বিবৃতিধর্মিতার বদলে কবিতায় প্রতীক-চিত্রকল্পের ভাষায় কথা বলার প্রবণতা বেড়েছে। এটা কি পরিকল্পিত?
কামাল: কিছুটা ইচ্ছাকৃত, কিছুটা সময়ের দাবিতে। আমরা বলি যে মহাবয়ানের যুগ শেষ হয়ে গেছে, এখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বয়ানই মহাবয়ান তৈরি করবে—এটা উত্তরাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা যদি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি, মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু একটা মহাবয়ান। এর ভেতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বয়ান আছে। আমরা যখন শুরু করেছি তখন ছিল মহাবয়ানের সময়। কিন্তু এখন পৃথিবীজুড়ে যে বৈচিত্র্যময়তা, তার একটা ঢেউ এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সাহিত্যে এসে দোলা দিয়েছে। আমরা পরিচিত হচ্ছি কবিতার নানা অনুষঙ্গ ও বহুমাত্রিক ভূগোলের সঙ্গে। তবে এটা ঠিক, দার্শনিক তত্ত্বকথা দিয়ে তো কবিতা হয় না। এর জন্য একটা পরিশ্রুত জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে হয়। এর জন্য প্রজ্ঞা, মেধা, সৃজনশীলতা—এগুলোও থাকতে হয়, থাকতে হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এখন আমি যে ভাষায় কবিতা লিখছি, সেভাবে আরও অনেকে কবিতা লিখছেন। মৌলিক বিষয়টা সবাইকে ঘিরেই আবর্তিত। এখন এর ভেতর আমাকে আলাদা হতে হলে প্রচলিত ভাষার ভেতর পৃথক একটা দ্যোতনা সৃষ্টি করতে হবে, যোগ করতে হবে নতুন মাত্রা। কবিতা এমন এক মাধ্যম, যাকে ভাষার একটি মাত্র প্রেক্ষাপট দিয়ে ধরা যায় না। এ জন্য ছন্দ, মাত্রা, গতিশীলতা, সুর, অন্তর্গত শব্দের যে কনোটেশন, ডিনোটেশন ও পরিমিতিবোধ—সবকিছুই প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ভাষার সব দিক যার ভেতর অন্তর্ভুক্ত, সেটা হলো কবিতা। সব সময় আমার চেষ্টা ছিল সমকালীন কোলাহল থেকে আস্তে করে সরে এসে নিজের স্বতন্ত্র একটি স্বর তৈরি করার। আর সে জন্য সব সময় আমি নবায়ন করছি আমার কবিতাকে।

.
.

কামাল চৌধুরী
আমার ষাট
আমার ষাট আমার তরুণকাল
আমি আজও জলোচ্ছ্বাসের ডানা
আছড়ে পড়া প্রতিবাদ ও দ্রোহে
কী অপরূপ বর্ণমালার হানা।
দৃষ্টিসীমার সমান্তরাল রোদে
দাঁডিয়ে আছে একজীবনের গ্রাম
দিনযাপনের মর্মরিত তৃণে
খুঁজছি আমি কবির সর্বনাম।
অভিনতুন মুখর উন্মোচনে
হাঁটছি একা পদব্রজের মাটি
চরণধূলি উড়িয়ে দিয়ে দেখি

আদিগন্তে আমার বসত-বাটি।

তবুও আমি তীব্র বাতায়নে
নিঃসঙ্গতার পতনমুখী পাতা
বাইরে যখন হাওয়ার মাতামাতি
তখন ধূলি, তুমিই আমার খাতা।

২৩ জানুয়ারি ২০১৭, ঢাকা।