বিড়ালের হাসি

আগে সব সময় সদর রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতেন হক সাহেব। কিন্তু বর্তমানে শুধু বিকল্প আর ছোট রাস্তা খোঁজেন। কারণ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে হক সাহেবের নিজেকে নাই নাই লাগে। আগে এমন লাগত না। এখন মনে হয়, নিজেকে তিনি আর চালান না—বন্দুক উঁচানো কিছু ভিনদেশি তাঁকে চালায়।

এই তো ৩০ মার্চ মঙ্গলবারের ঘটনা। সকালবেলা বাজারে যাওয়ার সময় চিকন গলিটার মুখে যে বড় রাস্তাটা দেখা যায়, সেখানেই দেখা একদল খাকি পোশাকের সৈনিকের সঙ্গে। বুটের আওয়াজে ভয় পেয়ে নিজেকে যখন হক সাহেব দেয়ালের সঙ্গে প্রায় মিশিয়ে দিয়েছেন, তখন তাঁকে চমকে দিয়ে গলির বিড়ালটা তাঁর পাশ কাটিয়ে রাস্তায় উঠে গেল। বিড়ালটা ম্যাও ম্যাও করে রাস্তা পার হওয়ার সময় মিলিটারির চোখ পড়ল ওর ওপর। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল রাইফেল।

কিছুক্ষণ পর তাদের চলে যাওয়ার শব্দে সচেতন হলেন হক সাহেব। এতক্ষণ দেয়ালের সঙ্গে মিশে থেকে যেন দেয়ালের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে গলির মুখে এসে রাস্তার দিকে তাকালেন। রক্ত মাখা ছোট্ট প্রাণীটা পড়ে আছে রাস্তার ঠিক মাঝে।

বহুদিন পা না ফেলা সদর রাস্তায় কী মনে করে উঠলেন হক সাহেব। বিড়ালের পায়ের কাছে এসে দাঁড়ালেন। মুখটা খোলা প্রাণীটার। দাঁতগুলো এমনভাবে বেরিয়ে পড়েছে যেন হক সাহেবকে দেখে হাসছে সে। বলছে দেখ, তুমি না পারলেও আমি পারি। অভিব্যক্তির কতটা হক সাহেব বুঝেছেন তা স্পষ্ট না হলেও হক সাহেবের মাঝে একটা ঝড় বয়ে যায়। উদ্দেশ্যহীনভাবে রাস্তার মাঝ দিয়ে হাঁটতে থাকেন তিনি। দূর থেকে জিপের শব্দ ক্রমাগত এগিয়ে আসে। একটা কণ্ঠ বলে ওঠে, ‘হটো ইহাসে।’ হক সাহেব তবু হাঁটেন। আবার একসঙ্গে গর্জে ওঠে কয়েকটা রাইফেল।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ