অভিনেতা হুমায়ূন

নয় নম্বর িবপদসংকেত ছবির শুটিংয়ে হ‌ুমায়ূন আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো
নয় নম্বর িবপদসংকেত ছবির শুটিংয়ে হ‌ুমায়ূন আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো

হ‌ুমায়ূন আহমেদের পরিচয় বিচিত্র। তিনি জননন্দিত কথাসাহিত্যিক, নাটক-চলচ্চিত্রনির্মাতা, অধ্যাপক, শখের জাদুকর। কিন্তু তিনি কি কখনো অভিনয় করেছেন? এবার অভিনেতা হ‌ুমায়ূন আহমেদের খবর জানা যাক। ১৯ জুলাই এই লেখকের মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা

হ‌ুমায়ূন আহমেদের বাবা (শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান) ছিলেন গানবাজনাপ্রিয়, নাটকপাগল মানুষ। এমন কথা বহুবার শুনেছি খালাম্মার (হ‌ুমায়ূন-জননী আয়েশা ফয়েজ) কাছ থেকে। তিনি একাধিকবার বলেছেন, ‘ওর বাপ বেঁচে থাকলে খবর আছিল। ওর সব নাটকে পাঠ চাইত। না দিয়ে থাকতে পারত না।

হ‌ুমায়ূন আহমেদের সুযোগ হয়নি বাবাকে দিয়ে তাঁর নাটকে অভিনয় করানোর। কিন্তু তিনি নিজে কি ছিলেন না অভিনেতা?

তিনি ছিলেন। তবে খুব বেশি লোক তাঁর অভিনয় দেখেননি।

আমি একবার মাত্র দেখেছিলাম। সেই ২০০৮ সালে, আমার সঙ্গে তৃতীয় দফার নতুন সম্পর্কের সূচনাকালে। এক সন্ধ্যায় তাঁর দখিন হাওয়ার ফ্ল্যাটে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি এখন অভিনয় করে দেখাব।

শাওন (হ‌ুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন) বুঝে ফেলেন, তিনি কী দেখাবেন। সঙ্গে সঙ্গে নিষেধ করেন, না, না, এটা দেখাবা না, থামো।

কোথাও কেউ নেই নাটকের সেটে হ‌ুমায়ূন আহমেদ (ডান থেকে তৃতীয়)। ছবি: লেখক
কোথাও কেউ নেই নাটকের সেটে হ‌ুমায়ূন আহমেদ (ডান থেকে তৃতীয়)। ছবি: লেখক

হ‌ুমায়ূন কি আর সব কথা শোনেন! শুরু করলেন অভিনয়। বললেন, আমার লোকেশন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনের গেট। দুজন তরুণী গেট দিয়ে বেরিয়ে দেখে এক পাগল। একেবারে জন্মদিনের পোশাকে। সেই পাগল চরিত্রে তাঁর অভিনয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ড সেই পাগলের হেঁটে যাওয়া এবং তখন তাঁর দুই হাত ও পুরো শরীরী অভিব্যক্তি তিনি অভিনয় করে দেখালেন। এই অভিনয় তিনি খুব বেশি দেখাতেন না। কাছের বন্ধুবান্ধব নিয়ে বাসায় রাতের আড্ডায় বসলে এ রকম করে দেখাতেন। কাউকে ক্যামেরায় ধারণ করতে দিতেন না।

এই অভিনয়ের বাইরে সিলেটিরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শাহজাহান’ কবিতা কীভাবে আঞ্চলিক উচ্চারণে আবৃত্তি করে, তা–ও তিনি দাঁড়িয়ে দুই হাত ছড়িয়ে, মাথা ও মুখ বাঁকিয়ে অভিনয় করে দেখাতেন, আর দর্শক হাসতেন।

কিন্তু সত্যি সত্যিই তাঁর অভিনয় ক্যামেরায় ধারণ করার একটা ইচ্ছা একবার হয়েছিল। বলেছিলেন, নুহাশপল্লীর কাহিনি নিয়ে তিনি একটা নাটক বানাবেন। সেখানে এক বাবার চরিত্রে তিনিই অভিনয় করবেন। একদম পেশাদারি নাটক যেভাবে নির্মিত হয়, অন্য সব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে সঙ্গে নিয়েই তিনি তা অভিনয় করবেন। মাজহারকে (অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম) ডেকে এ–ও বলেছিলেন, এটা কিন্তু ক্যাসেট করে রেখে দেওয়া হবে। প্রচারিত হবে আমার মৃত্যুর পর, তার আগে না।

কিন্তু নুহাশপল্লী নিয়ে তিনি সেই নাটকটি কখনো করেননি।

হ‌ুমায়ূন আহমেদ যে পাকা অভিনেতা ছিলেন, তার প্রমাণ পাই প্যাকেজ নাটকের যুগে এসে, বিশেষ করে প্যাকেজ নাটক শুরু হলে যখন তিনি নিজেই পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়ে নিলেন। ১৯৮৪-৮৫ সালের এইসব দিনরাত্রি থেকে শুরু করে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত একক বা ধারাবাহিক নাটকগুলো সে সময় পরিচালনা করতেন বিটিভির বাঘা বাঘা নাট্য প্রযোজক। প্রায় প্রতিটি নাটকের শুটিংয়ে তাঁর উপস্থিত থাকা হতো। তিনি অনেক সময় সেটে বসে বসেই চোখ মুছতে মুছতে নিজের নাটকের সংলাপগুলো লিখতেন। পরিচালকদের কাছে তাঁর অনুরোধ থাকত, নাটকের সংলাপ বদলানো যাবে না, কিন্তু কোন সংলাপ কীভাবে কোন শিল্পী দেবেন, তা আপনারা ঠিক করে নেবেন। পরিচালনায় তিনি মোটেও নাক গলাতেন না। পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে নীরব দর্শকের মতো প্রযোজকদের নাট্য নির্দেশনা দেখতেন এবং এইভাবে দেখতে দেখতেই তিনি একসময় চলচ্চিত্র পরিচালকও হয়ে যান। পরে প্যাকেজের আওতায় নাটক নির্মাণের সুযোগ তৈরি হলে ‘নুহাশ চলচ্চিত্র’ প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে নাটক বানিয়ে বিটিভি এবং অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলে প্রচার করতে থাকেন।

প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় নাটক বানাতে গিয়েই দর্শকেরা পেয়ে গিয়েছিল হ‌ুমায়ূন আহমেদের নতুন নাট্যভাষা, যা এর আগে দর্শকেরা দেখেনি। ঢাকার এমন কোনো তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিলেন না, যাঁরা হ‌ুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয় করেননি। কিন্তু কোনো এক বিশেষ কারণে একসময় সেই সব তারকা শিল্পী, বিশেষ করে অভিনেত্রীদের তাঁর নাটকে অভিনয় করতে দেখা যায় না। এর পরিবর্তে আগমন ঘটে নতুন নতুন অভিনেত্রী, তাঁর সঙ্গে অভিনেতারাও এবং দেখা যায় যে তাঁদের বেশির ভাগই জীবনে প্রথমবারের মতো হ‌ুমায়ূন আহমেদের ক্যামেরার সামনে এসে ‘অ্যাকশন’ শব্দের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। মজার ব্যাপার, এসব আনকোরা তরুণ-তরুণী একসময় অভিনয়শিল্পী হিসেবে তারকাখ্যাতিও পেয়ে যান। তাঁদের সবাইকে ধরে ধরে অভিনয় শেখাতেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। মা-মেয়ের দুই চরিত্রের দুই নবাগতার কাছে গিয়ে মা ও মেয়ের দুই চরিত্রেই তিনি পুরো সংলাপ অভিনয় করে দেখানো শুরু করেন। কুফল হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় যে সব নাটকে সব চরিত্রেই এই আনকোরা কুশীলবেরা পাকা শিল্পী হয়েও হ‌ুমায়ূনীয় ধারার চরিত্রে অভিনয় করতে থাকেন।

কেউ বড় অভিনেতা না হলে তাঁর ভেতরে অনেক মানুষের চরিত্র লালন করতে পারেন না। আর একজন লেখককে তো প্রতিনিয়তই নানা মানুষের কথা লিখতে হয়। সেই পেশাদারত্বের কারণে হ‌ুমায়ূন আহমেদকেই প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যেতে হতো। বেশির ভাগই প্রকাশিত হতো তাঁর লেখায়। তবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনযাপনে খুব পাকা অভিনেতা ছিলেন না বলে ধরা খেয়েছেন বহু জায়গায়। এই ধরা খাওয়াটাই প্রমাণ করে অভিনয়ের শঠতাকে নিজের জীবনে কখনো সঠিকভাবে স্থান দিতে পারেননি, বা তিনি চানওনি।

অভিনয়জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটুকু আমার কাছে ধরা পড়ে নুহাশপল্লীতেই যখন তাঁর লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই আমেরিকার এক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মরদেহ দেশে আসে তিন দিন পর। এই মরদেহ নিয়ে তাঁর দুই পরিবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তাঁকে নুহাশপল্লীতে সমাহিত করা হবে না অন্য কোথাও, এ নিয়ে দুই পরিবার চূড়ান্ত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। প্রথম পক্ষের সন্তানদের দাবি, বাইরের কোনো গোরস্থানে; দ্বিতীয় পক্ষের সঙ্গীর দাবি, নুহাশপল্লীতে। অবশেষে ২৩ জুলাই মাঝরাতে প্রথম পক্ষের সন্তানদের কাছ থেকে সম্মতি এলে নুহাশপল্লীতেই দাফন করার সিদ্ধান্ত হয়।

সেদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি ছিল গাজীপুরের আকাশজুড়ে। যেন, সে এক শ্রাবণ মেঘের দিন। হ‌ুমায়ূনের লাশবাহী কফিন রাখা হয়েছে একটি গাছের তলায়। এ যেন তাঁরই লেখা নয় নম্বর বিপদ সংকেত ছবির সেট।

নুহাশপল্লীর কাহিনি নিয়ে তাঁর জীবনের শেষ দিকে এই নামের ছবিটি বানিয়েছিলেন হ‌ুমায়ূন। ছবিটির শতভাগ শুটিংও হয়েছিল এই নুহাশপল্লীতে। ছবির ঘোষণায় তিনি বলেও ছিলেন, একটিবারের জন্যও ক্যামেরা নুহাশপল্লীর গেটের বাইরে যায়নি। ছবিটি এক মিছেমিছি মরণ মরণ খেলার। বাবা সোবহান সাহেবের (রহমত আলী) প্রতি অভিমান করে আছে তাঁর কন্যারা। বাবা ঢাকার বাইরে একটা বাগানবাড়ি বানিয়ে চাকর–বাকরদের সঙ্গে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেন। তাঁর মেয়েরা তাঁকে দেখতে আসে না বলে তাঁর খুব অভিমান। একদিন মাথায় বুদ্ধি এল, তিনি মৃত্যুর ভান করবেন। তাঁর চাকর-বাকরদের অভিনয় শিখিয়ে দিলেন, কেমন করে তারা চিত্কার করে কেঁদে কেঁদে মেয়েদের মৃত্যুসংবাদ জানাবে। খবর পেয়ে মেয়েরা সত্যি সত্যি চলে আসে সেই বাগানবাড়িতে। এসেই ‘ও বাবা গো, ও বাবা, তুমি কীভাবে চলে গেলে? এখন আমি কাকে বাবা ডাকব?’ বলে তাঁর বড় মেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদা শুরু করলে মৃত বাবার চরিত্রে অভিনয় করা সোবহান সাহেব খাটিয়া থেকে উঠে বসেন। তাজ্জব বনে যায় মেয়েরা। ও, বাবা তাহলে মরেননি! মৃত লোকটি তখন মেয়েকে শাসায়, ‘থাপড়ায়া দাঁত ফেলে দেব, তিন বছরে একবার খোঁজ নিয়েছিস, ফাজিল মেয়ে।’ তারপর সরল কমেডিতে শেষ হয় সিনেমা। এন্ড টাইটেলে লেখা ওঠে ‘হ‌ুমায়ূন আহমেদের একটি অর্থহীন ছবি’।

এমন মরণ মরণ খেলার অভিনয় তিনি এর আগেও করিয়েছিলেন, ১৯৯৫-৯৬ সালে, তাঁর আজ রবিবার ধারাবাহিক নাটকে। সেখানে এক বৃদ্ধ পিতা (আবুল খায়ের) তাঁর স্থপতি পুত্রকে দিয়ে নিজ কবরের ডিজাইন করিয়েছিলেন। সেই কবরের ভেতর দম বন্ধ করে শুয়ে মৃত্যুস্বাদ উপভোগ করিয়েছিলেন আরেক পাগলা মামাকে (আলী যাকের) দিয়ে।

২৪ জুলাইয়েরশ্রাবণ মেঘের দিনেও দেখি তাঁরই লেখা চিত্রনাট্যের একটা বাস্তব রূপ নিয়েছে। কিন্তু এখানে তাঁর ইউনিটের কোনো ক্যামেরা নেই। গোটা বিশেক টিভি ক্যামেরা ধারণ করছে। তিনটা টেলিভিশন লাইভ ব্রডকাস্ট করছে এই আয়োজন। দেখি তাঁর কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর স্বজনেরা। আগের দিন শহীদ মিনারে যে কন্যারা অনড় ছিল, বাবার লাশ ‘নুহাশপল্লীতে নয়, অন্য কোথাও’ বলে আজ তারা মাথায় কাপড় দিয়ে চুল ঢেকে এসে দাঁড়িয়েছে বাবার কফিনের পাশে। এখানে বাঘে-মহিষে এখন এক ঘাটে জল খাচ্ছে। লাশের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন পরস্পর বিভাজিত তাঁরই একান্ত কিছু প্রিয়জন—ভাই, ভগিনী, কন্যা, স্ত্রী, পুত্র—সকলেই। কফিনের মুখ খোলা হলো। কয়লার মতো কালো হয়ে আছে পুরো চেহারা। মুখটা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ফোলা। চোখের পাতা বন্ধ। কিন্তু এখন হ‌ুমায়ূনের চিত্রনাট্য আর কাজ করছে না।

নুহাশপল্লীর রাজার কী দাপটটাই না ছিল নুহাশপল্লীতে। তাঁর কথায় সবাই চলত, সবাই অভিনয় করত। নুহাশপল্লীর কর্মচারীদের দিয়ে তিনি ভূত বানাতেন, পেতনি বানাতেন। মাঝ রাতে তারা অতিথিদের জানালার পাশে এসে ভূতের অভিনয় করত। কেউবা সাদা কাপড় পেঁচিয়ে দূরের বাঁশঝাড় বা পুকুরপাড়েও হাঁটত। এসব কর্মচারীকে অভিনয়ের ব্রিফিং দিয়ে তিনি অভ্যাগত অতিথিদের নিয়ে রাতে বেরোতেন আর তাঁর অভিনেতা ভূত-পেতনি দেখাতেন। নুহাশপল্লীতে আজ তাঁর কোনো কমান্ড নেই। এত দিন তাঁর কথায় ‘অ্যাকশন’ হয়েছে, তাঁর কথায় ‘কাট’। এখানে ‘অ্যাকশন’, ‘কাট’ বলার কেউ নেই, যিনি বলছেন, যিনি ‘অ্যাকশন’ বলে রেখেছেন, তাঁর নির্দেশেই সব নট-নটী অভিনয় করেই যাচ্ছে। তিনি কখন ‘কাট’ বলবেন, কেউ জানে না।

সেই মহানটরাজের নির্দেশ অমান্য করা গেলে হয়তো তখনই গা মোচড় দিয়ে কফিন থেকে উঠে বসে পড়তেন হ‌ুমায়ূন। একটা সিগারেটে টান দিয়ে বলবেন, ‘এই, আমি কিন্তু মরিনি। দেখলাম—আমার মৃত্যুর পর তোমরা কে কী করো, তার জন্য এই মরণ মরণ খেলা। এবার সবাই আমার ঘরে আসো। এই কুসুম, (শাওনকে তিনি এ নামেই ডাকতেন), তুমি একটু রেস্ট নাও, আমি আমার মেয়েদের সঙ্গে একটু গল্প করব। আর আমার স্যুটকেসটা দাও তো, নিউইয়র্ক থেকে আমার নাতি-নাতনির জন্য যে কাপড়গুলো কিনেছি, ওগুলো বের করো।’

কিন্তু হ‌ুমায়ূনের স্ক্রিপ্ট আজ অচল। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার এক গ্রামে হ‌ুমায়ূন আহমেদ নামে যে চরিত্রটির জন্ম হয়েছিল, ২০১২ সালের ১৯ জুলাই সে চরিত্রের সমাপ্তি ঘটে যায় আমেরিকার নিউইয়র্কে। চরিত্রের সমাপ্তি হলেও রঙ্গমঞ্চ থেকে পর্দা নামার আগেও তাঁর আরও কিছু একজিট অ্যাকটিভিটি ছিল, তার সমাপ্তি যেখানে হলো, সেই নাট্যনির্দেশকের পুতুল নট হিসেবেই হ‌ুমায়ূন তাঁর চরিত্রের শেষ অভিনয়টুকু করেই নুহাশপল্লীতে শায়িত হলেন। সেই চরিত্রের যবনিকা পতন, এখন অন্যদের পালা

আমার দেখা হ‌ুমায়ূন আহমেদের ১০টি বৈশিষ্ট্য

১.   তুচ্ছ কারণে হঠাৎ করে রেগে যেতেন এবং মানুষকে চরম অপমান করতেন। কিন্তু পরে ভুল বুঝে ক্ষমাও চেয়ে নিতেন।

২.   পোশাকের ব্যাপারে কোনো পছন্দ ছিল না। রাতের পোশাক পরে সকালবেলা গাড়িতে উঠে বেরিয়ে পড়তেন। বেল্টের ভেতর শার্ট গুঁজে প্যান্ট পরতে দেখিনি তাঁকে।

৩. মানুষকে খুব বিশ্বাস করতেন। ‘দখিন হাওয়া’ ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে কখনো আটকানো থাকত না। যে কেউ দরজা দিয়ে ঢুকে যেতে পারত, কিন্তু সবাই দরজা খোলার জন্য অপেক্ষা করত।

৪.   নগদ টাকা পছন্দ করতেন বেশি। ক্যাশে লেনদেন করতেন। জীবনের শেষ বছরেও ঠোঙা ভর্তি লাখ লাখ টাকা প্রকাশকের কাছ থেকে অগ্রিম নিতে দেখেছি।

৫. খাবারের ব্যাপারে খুব চুজি ছিলেন। দুপুরের খাবার রাতে খেতেন না। দিনে মাছ খেলে রাতে মাংস খেতেন।

৬. নিজের সমালোচনা সহ্য করতেন না। অপরের প্রশংসা কম করতেন, সমালোচনা করতেন বেশি।

৭.   ব্যক্তিগত আপ্যায়নে অসাধারণ বিনয়ী আচরণ করতেন। কাউকে দাওয়াত দিয়ে আনলে তাঁকে অত্যন্ত সম্মান দেখাতেন।

৮. প্রকাশকদের বিশ্বাস করতেন না। এ কারণে সম্মানীর টাকা আগে নিয়েই তাঁদের বই দিতেন। পরে পার্সেন্টেজের হিসাবে সেটা সমন্বয় করে বাকি টাকা পেতেন।

৯. খুব দ্রুত লিখতে পারতেন। এক রাতে একটি নাটক লিখেছেন, এমন ঘটনা অনেক। মাত্র পাঁচ দিনে নতুন উপন্যাস লিখে ফেলতে দেখেছি।

১০. চেয়ারে বা সোফায় কম বসতেন। ফ্লোরে বসে খেতে ও আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন। চেয়ারে বসলেও পা দুটো তুলে জানু পেড়ে বসতেন। ফ্লোরে বসে টুলের ওপর কাগজ রেখে লিখতেনও।