'শেষ অব্দি আমি লেখকই হতে চেয়েছি'

হাসনাত আবদুল হাই। ছবি: খালেদ সরকার
হাসনাত আবদুল হাই। ছবি: খালেদ সরকার

শিল্প-সাহিত্যের বহুমাত্রিক শাখায় বিচরণ হাসনাত আবদুল হাইয়ের। গত মে মাসে এই লেখকের ৮০ বছর হলো। লেখালেখিতে এখনো তিনি দারুণ সক্রিয়। কথা বলেছেন নিজের সাম্প্রতিক লেখাজোকা ও নানা বিষয়-আশয় নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলতাফ শাহনেওয়াজ

আলতাফ শাহনেওয়াজ: একটু আগে আমরা যখন আপনার ঘরে ঢুকছিলাম, দেখলাম আপনি গান শুনতে শুনতে কিছু একটা লিখছিলেন।

হাসনাত আবদুল হাই: আমি একটা বড় কাজে হাত দিয়েছি। বাস্তব ও শিল্প নামে একটি বই লিখছি। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত শিল্পে ‘বাস্তব’ কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং শিল্পে বাস্তবের যে বিবর্তন—সেটি কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে, বইটি এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে। একটু আগে বইয়ের ভূমিকা লিখে শেষ করলাম। এখানে আমি শিল্প ও বাস্তবের সংজ্ঞা দিয়েছি। এটা দিতে গিয়ে মজার একটা বিষয় লক্ষ করলাম। ১৯১৪ সালে আর্টের ওপর একটা বই লিখেছেন ক্লাইভ বেল। সেখানে তিনি বলেছেন, আর্ট হলো কতগুলো বস্তুগত উপাদান এমনভাবে সজ্জিতকরণ, যা মানুষকে আনন্দদায়ক অনুভূতি দেয়। অন্যদিকে ১৯৩১ সালে হার্ভার্ড রিড মিনিমাম আর্ট নামে আর্টের ওপর লিখলেন আরেকটি বই। সেখানে তিনি বললেন, আর্ট হলো কিছু জিনিসকে এমনভাবে একত্র করা, যা মানুষকে আনন্দ দেয়। দেখো, আর্ট প্রসঙ্গে দুজনের সংজ্ঞাই প্রায় হুবহু এক। এটি আমার কাছে কৌতুককর মনে হয়েছে। হার্ভার্ড রিড কি তাঁর পূর্বসূরি ক্লাইভ বেলের বই পড়ে সংজ্ঞাটি হুবহু অনুরুক্ত করলেন? আমি তাঁর বইয়ের গ্রন্থপঞ্জির তালিকা দেখলাম। না, ক্লাইভ বেলের নাম সেখানে নেই। একে তাহলে কী বলব? গ্রেট মাইন্ড থিংক এলাইক। যাহোক, বাস্তব ও শিল্প বেশ বড় ধরনের লেখা হবে। এখানে শিল্পের সঙ্গে সাহিত্যের প্রসঙ্গও আসবে।

আলতাফ: শিল্প-সংস্কৃতির নানা শাখায় ঝোঁক আপনার। একাধারে গল্প-উপন্যাস লিখেছেন, চিত্রকলা সম্পর্কে লিখেছেন, আবার চলচ্চিত্রের ওপরও আপনার বই আছে। এই যে বিচিত্র বিষয়ে আপনার আগ্রহ, এটা কীভাবে তৈরি হয়েছে?

হাসনাত: ছোটবেলা থেকেই বই পড়ুয়া ছিলাম আমি। হাতের কাছে যা পেতাম তা-ই পড়তাম। গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, কবিতা, সমালোচনা, তত্ত্ব—বলা চলে নির্বিচারে সবই পড়তাম। সেই অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে। মনে হয়, এভাবেই নানা বিষয়ে আমার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বই কেনা এবং বই পড়া—এই দুইয়ের সমন্বয়ে নানা বিষয়ে লেখার আগ্রহ তৈরি হয়েছে আমার ভেতরে।

আলতাফ: যত দূর জানি আপনার প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। আর প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৬-এ, একা এবং একসঙ্গে নামে। এই বিলম্ব কি ইচ্ছাকৃত?

হাসনাত: ১৯৫৮ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। তখন দৈনিক ইত্তেহাদ-এর সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। তাঁর সম্পাদিত সাহিত্যের পাতায় প্রথম আমার গল্প ছাপা হয়। আর বিলম্বের কারণ হিসেবে বলতে পারি, তখন ঢাকায় সাহিত্য পত্রিকা ছিল খুব কম। মাহে নাও, প্রবাহ—এ রকম কিছু অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা ছিল। ফলে আমাদের প্রধান অবলম্বন ছিল দৈনিকের সাহিত্য পাতা। সেখানেও আমরা খুব একটা জায়গা পেতাম না। সিনিয়র লেখকদের জন্যই জায়গা বরাদ্দ থাকত সেখানে। এ জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠা পেতে দেরি হয়েছে। আর প্রতিষ্ঠা না পাওয়ায় প্রকাশকেরাও আমাদের বই বের করতে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তারপর সাহিত্যের বই কেনার মানুষ ছিল খুব কম। যাও-বা একটু কিনত, তা ওই পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকদের বই। এই সব মিলিয়ে আমার বই প্রকাশ পেতে দেরি হয়েছে।

আলতাফ: আপনার প্রথম বই ছোটগল্পের। তারপর ১৯৭৭-এ বেরোল প্রথম উপন্যাস সুপ্রভাত ভালোবাসা...

হাসনাত: না, আমার প্রথম উপন্যাস সুপ্রভাত ভালোবাসা নয়। প্রথম উপন্যাস যেটা লিখেছিলাম, সেটা হারিয়ে গেছে। ওটা বের হয়েছিল। পদক্ষেপ নামের এক অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকায়। নাম ছিল অরণ্যনগর। সম্ভবত ১৯৫৯ সালে লিখেছিলাম।

আলতাফ: ১৯৬০ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন আপনি। তো, দেশে ফিরেই যোগ দিয়েছিলেন সরকারি চাকরিতে?

হাসনাত: না, ঠিক দেশে ফিরেই নয়। চার বছর পর আমি দেশে ফিরে আসি। প্রথমে যোগদান করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে। সেখানে এক বছর পড়ানোর পর যোগ দিলাম সিভিল সার্ভিসে।

আলতাফ: অনেকের মতে, লেখালেখির জন্য শিক্ষকতা পেশা যেখানে তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক। তবে শিক্ষকতা ছেড়ে আপনি ঢুকলেন সিভিল সার্ভিসে...

হাসনাত: এ কথা ঠিক যে, শিক্ষকতা করলে অনেক সময় পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, বইয়ের জগতেই থাকা যায়। এসব জেনেও আমি পাবলিক সার্ভিসে এসেছিলাম মূলত বাবা-মায়ের আগ্রহের জন্য। ওই সময়ে আমার বড় দুই ভাই-ই ছিলেন শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত—একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের, আরেকজন কলেজশিক্ষক। তো, আমিও যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দিলাম, বাবা মাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতেন, ‘আমাদের সব ছেলেই মাস্টার হয়ে গেল!’ তখন বুঝলাম যে তাঁদের খুব ইচ্ছা, আমি যেন সরকারি চাকরিতে যোগ দিই। সরকারি চাকরি পাওয়া ছিল সে সময় বিরাট মর্যাদার ব্যাপার। ফলে বাবা-মায়ের আগ্রহের কারণে সিএসপি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে পাবলিক সার্ভিসে যোগ দিই।

আলতাফ: স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে অবসরে গেছেন আপনি। যখন সচিব ছিলেন, সে সময় লেখক হাসনাত আবদুল হাই ও সচিব হাসনাত আবদুল হাই—আপনার এই দুই সত্তার মধ্যে কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করত?

হাসনাত: তা বলতে পারব না। তবে আমার মন-মেজাজ সময়ে-সময়ে পরিবর্তিত হয়। ফলে অনেকে আমাকে খুব মেজাজি বলে ভুল করেন। আর সচিব ও লেখক—দুই সত্তা প্রসঙ্গে যদি বলি, আমি তো লেখকই হতে চেয়েছি শেষ অব্দি।

আলতাফ: আপনার লেখা জীবনীভিত্তিক উপন্যাস সুলতান বা নভেরা দারুণ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে বিষয় ও রচনাশৈলী বিবেচনায় ‘আমার আততায়ী’ আপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। এ বইয়ে বিশদভাবে নিজের শক্তিমত্তা জানান দিয়েছিলেন আপনি?

হাসনাত: আমার আততায়ী সম্পর্কে এ রকম কথা এই প্রথম শুনলাম। নভেরা বা সুলতান লেখার আগে তিমিমহাপুরুষ নামে দুটো উপন্যাস লিখেছিলাম আমি। ওই দুই উপন্যাস নিয়ে অনেক আলোচনা শুনেছি। যাহোক, আমার আততায়ী প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ কি ’৭৬ সালে, সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তুমি ঠিকই বলেছ, এই উপন্যাসে আঙ্গিক নিয়ে বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলাম আমি।

আলতাফ: খ্যাতিমান বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনীভিত্তিক চারটি উপন্যাস লিখেছেন আপনি। শিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে সুলতান, ভাস্কর নভেরাকে নিয়ে নভেরা, আরজ আলী মাতুব্বরকে নিয়ে একজন আরজ আলী ও শিল্পী কামরুল হাসানকে নিয়ে লড়াকু পটুয়া। তো, জীবনীভিত্তিক উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

হাসনাত: যাঁর সম্পর্কে যত বেশি তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, তাঁকে নিয়ে উপন্যাস লেখার চ্যালেঞ্জ তত কম। সুলতান সম্পর্কে অনেক তথ্য ছিল, কামরুল হাসান সম্পর্কেও বেশ তথ্য-উপাত্ত ছিল। ফলে সুলতানলড়াকু পটুয়া লিখতে খুব বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে হয়নি। কিন্তু নভেরা আরজ আলী মাতুব্বর দুজনেই ছিলেন মৃত। ফলে তাঁদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। নভেরার তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে তাঁর পরিচিতজনদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। আরজ আলী মাতুব্বর-এর ক্ষেত্রেও তা-ই। বরিশালে অনেক দিন যেতে হয়েছে আমাকে।

আলতাফ: জীবনীভিত্তিক উপন্যাস রচনার একটা অসুবিধা এই যে, যাঁর জীবনকে অবলম্বন করে উপন্যাস রচিত হয়, অনেক ক্ষেত্রে উপন্যাসের মধ্যে ওই ব্যক্তির বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা দেখা যায়। কী বলবেন এ ব্যাপারে?

হাসনাত: কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি হয়তো ঠিক। আসলে যেসব ব্যক্তি আলোকিত বা যাঁদের জীবন বৈচিত্র্যপূর্ণ, জীবনীভিত্তিক উপন্যাসের জন্য তাঁদেরই তো মূলত বেছে নেওয়া হয়। অন্যদের কথা বলতে পারব না। আমি বরং আমার কথা বলি। সুলতান বা নভেরায় আমি কিন্তু এই দুই চরিত্রকে মহামানব বা দেবী হিসেবে তুলে ধরিনি। নভেরা যে বহুবল্লভা ছিলেন, তাঁর যে অনেক পুরুষ বন্ধু ছিল এবং তিনি যে কারও প্রতিই অতটা আন্তরিক ছিলেন না—অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে এ বিষয়টিও নভেরাতে তুলে ধরেছি আমি। আবার সুলতান যে নেশা করতেন, তার বিবরণ আছে সুলতান উপন্যাসে। মোট কথা তাঁদের চারিত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশেও কুণ্ঠিত হইনি। তবে ঘটনা কি জানো, সুলতানবা নভেরা—এঁরা তো ব্যতিক্রমী মাপের মানুষ। সহজ বাংলায় অসাধারণ। সুতরাং যাঁরা অসাধারণ, তাঁদের সাধারণভাবে অঙ্কিত করলে চলবে কেন? তাঁদের তো আমি অযথা খাটো করতে পারব না।

আলতাফ: ভ্রমণসাহিত্যেও আপনি সিদ্ধহস্ত। আন্দালুসিয়া আপনার পূর্ণাঙ্গ এক ভ্রমণ-উপাখ্যান। এটি লেখার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলুন?

হাসনাত: ভ্রমণসাহিত্য পড়া এবং নিজে ভ্রমণ করার মাধ্যমে আমার মধ্যে ভ্রমণকাহিনি লেখার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে রমানাথ বিশ্বাসের লেখা লাল চীন, খগেন্দ্রনাথ মিত্রের তৈমুর লংয়ের দেশে—এসব ভ্রমণকাহিনির সঙ্গে প্রথম পরিচয়। এরপর যৌবনে ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমণের সুযোগ ঘটল। সব মিলিয়ে আমার মধ্যে ভ্রমণকাহিনি লেখার অনুপ্রেরণা তৈরি হলো। আর আন্দালুসিয়া লেখার ক্ষেত্রে আমার প্রধান অনুপ্রেরণা স্পেন। স্পেনের দক্ষিণাঞ্চল আন্দালুসিয়া নামে পরিচিত। উত্তর আফ্রিকা থেকে মুর মুসলমানরা এসে এ অঞ্চল দখল করে নেয়। প্রায় আট শ বছর তারা শাসন করেছিল আন্দালুসিয়া। এই আট শ বছরে সেখানে তারা অনেক কিছু করেছে। খাওয়ার পানি ছিল না, পানি সরবরাহের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে তারা, গ্রিকদের দর্শনশাস্ত্র আরবিতে অনুবাদ করেছে। মুর মুসলমানরা যদি স্পেনে না থাকত, তবে সেখানে প্লেটোর বই, সক্রেটিসের বই, দর্শনের বই, চিকিৎসাশাস্ত্র, বিজ্ঞান প্রভৃতি কোনো বই-ই পাওয়া যেত না। এসব মিলিয়েই লিখেছি আন্দালুসিয়া। এটি সে সময় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল ভোরের কাগজে। দৈনিকটির সেই সময়ের সম্পাদক মতিউর রহমান আমাকে বেশ কিছু বইপত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন, আর সহযোগিতা করেছিলেন তৎকালীন ভোরের কাগজ-এর সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।

আলতাফ: কদিন আগে ৮০ বছরে পা দিয়েছেন আপনি। আশি বছরের জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কিছু বলবেন?

হাসনাত: একদিকে মনে হয়, আমি যথেষ্ট পেয়েছি। অন্যদিকে ভাবি, আমার পক্ষে যতটা করা সম্ভব ছিল তার সবকিছু করতে পারিনি। যেমন মননশীল সাহিত্য আরও বেশি লেখা উচিত ছিল, লিখতে পারিনি। লেখায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা আরও বেশি করা উচিত ছিল, সেটাও করিনি।

আলতাফ: কিন্তু শুরুর দিকে বেশ নিরীক্ষাধর্মী লেখা লিখেছেন আপনি। পরে সে পথ থেকে সরে এলেন কেন?

হাসনাত: সরে এলাম, কারণ এ ধরনের লেখা পাঠক সহজে গ্রহণ করতে চায় না। প্রকাশকও ছাপতে চায় না।

আলতাফ: তার মানে একসময়ে পাঠকের কথা বিবেচনায় রেখে লিখেছেন আপনি?

হাসনাত: হ্যাঁ, লিখেছি তো; বিশেষ করে, গত শতকের নব্বইয়ের দশকের পর থেকে পাঠকের চাহিদা বিবেচনায় রেখে লিখতে হয়েছে আমাকে।

আলতাফ: সমসাময়িক তরুণদের লেখা পড়েন? তাঁদের লেখা সম্পর্কে আপনার ধারণা কী? আপনাদের সময়ের তারুণ্য এবং এই সময়ের তারুণ্যের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখেন?

হাসনাত: হ্যাঁ, অবশ্যই পড়ি। অদীতি ফাল্গুনী, মনিরা কায়েস, জয়া ফারহানা—এদের লেখা পড়েছি। আমার মনে হয়, এখনকার অধিকাংশ তরুণ লেখকই খানিক সাফল্য পেলেই আত্মতৃপ্ত হয়ে যায়, পরিশ্রম করতে চায় না। আর সেই সময় ও এই সময়ের তরুণ লেখকদের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে বলতে হলে প্রথমেই বলব, আমরা যখন তরুণ ছিলাম, সে সময় এখনকার মতো এত পত্রপত্রিকা ছিল না, ছিল না এত প্রকাশনাও। ফলে লেখার এত উৎসাহ পেতাম না। কিন্তু এখনকার তরুণদের সামনে লেখার উৎসাহ অনেক। আমাদের এখানে এখন প্রচুর দৈনিক পত্রিকা, সাহিত্য পত্রিকা ও ঈদসংখ্যা বের হয়। সুতরাং এখনকার তরুণদের কাছে লেখার চাহিদাও আছে ঢের। কিন্তু এই অধিক চাহিদা ও সুযোগের কারণেই কি আমাদের তরুণ লেখকেরা এখন একটু আলসে হয়ে পড়েছে? প্রশ্নটি রাখলাম এই কারণেই যে, তারা এখন আর খুব একটা শহরের বাইরে যেতে চায় না, তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে মিশতে চায় না। যার জন্য আজও আমরা হকারদের নিয়ে, ভিক্ষুকদের নিয়ে ভালো কোনো উপন্যাস পেলাম না।

আলতাফ: নিজের লেখালেখি সম্পর্কে কী বলবেন?

হাসনাত: আমি আমার শ্রেষ্ঠ লেখাটি এখনো লিখতে পারিনি। এই অতৃপ্তি মনে হয় সব শিল্পী-সাহিত্যিকেরই থাকে। আর তৃপ্তির জায়গা যদি বলি, আমার এক শর মতো বই বেরিয়েছে। যদি আমার পাঠক না থাকত, তবে এত বই প্রকাশক ছাপত না। এটি আমাকে সত্যিই তৃপ্তি দেয়।