আকাশ নীল

আকাশের আজ মন ভালো নেই। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না তার। আকাশের বুকে মেঘেরা ভেসে বেড়ায়। অন্য দিন হলে আকাশ মেঘগুলোকে জোড়া লাগিয়ে কত কী বানিয়ে ফেলত। কোনোটা হয়ে যেত হাতি তো কোনোটা পালকি। আবার কোনোটা তলোয়ার হাতে কোনো যোদ্ধা, এগিয়ে চলেছে শত্রুর দিকে। আজ আকাশের তা-ও করতে ইচ্ছা করছে না। প্রতিদিন দুপুরবেলার নিরিবিলিতে একটা হলদে পাখি জানালার পাশে নারকেলগাছটায় এসে বসে। আকাশ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। প্রথম প্রথম আকাশকে দেখলে উড়ে চলে যেত। আবার ফিরে আসত। তবে এখন আর উড়ে চলে যায় না। ডানা ঝাপটে এদিক-ওদিক তাকায়। মাঝেমধ্যে আকাশের দিকেও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আজ আকাশের পাখিটার জন্যও অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করে না। এমন সময় পাশে এসে দাঁড়ায় নীল। আকাশ তার মনের সব কথা গুছিয়ে বলতে না পারলেও নীল ঠিকই ওর অনেক না বলা কথা বুঝতে পারে।

কী রে ভাইয়া, তোর কি মন খারাপ?

আকাশ অবাক হয়। ও তো মন খারাপের কথা কাউকে বলেনি। নীল বুঝল কী করে? এ জন্যই নীলকে ওর এত ভালো লাগে। আর নীলও আকাশকে ভীষণ ভালোবাসে।

বিকেলবেলা নীল বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে। কত দিন চেয়েছে আকাশকে নিয়ে যেতে। কিন্তু আকাশের যে লাল পুতুলটা বাদে অন্য কোনো খেলা ভালো লাগে না। লাল পুতুলটা ওর ভীষণ প্রিয়। আর নীলের বন্ধুদের ওর পছন্দ নয়। নীল স্কুলে যায়। সুন্দর ধবধবে সাদা জামা পরে স্কুলে যায়। আকাশও গিয়েছিল। স্কুল ওর ভালো লাগে না। তাই মন বসাতে পারে না স্কুলে। একদিন স্কুলের টিচার মাকে ডেকে কী বলল আকাশ তা বুঝতে পারল না। তবে এটুকু বুঝেছে, এ স্কুল ওর জন্য নয়। সেদিন মায়ের ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। মায়ের মন খারাপ দেখলে আকাশেরও মন খারাপ হয়। তা না হলে স্কুলে যেতে হবে না বলে ও তো খুশিই হয়েছিল। তবে মায়ের মন ভালো করার উপায় আকাশের জানা আছে। আকাশ যখন গান গায়, মা ভীষণ খুশি হন। মাঝেমধ্যে মা হাসতে হাসতে কেঁদেও ফেলেন। আকাশ অবাক হয়। মা হাসছেন আবার একই সঙ্গে কাঁদছেন। মা যখন আকাশকে গানের পাখি বলেন তখন আকাশের কী যে ভালো লাগে! আকাশ আরও প্রাণ খুলে গান গায়।

নীল বলে, চল ভাইয়া আমার সঙ্গে। নীল আকাশের হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে। ওর রংতুলির কৌটা খুলে বসে। রঙের খেলায় সাদা কাগজ কীভাবে যে বর্ণিল হয়ে উঠে দেখে আকাশ অবাক হয়। নীল জানে কীভাবে আকাশের মন ভালো করতে হয়। নীল আঁকে। আকাশে সাদা সাদা মেঘ। নদীতে পাল তোলা নৌকা। আর নদীর পাশে সাদা সাদা কাশফুল। এই ফুলগুলো আকাশ চিনতে পারে না।

নীল, এগুলো কী ফুল? এত্ত বড়!

ভাইয়া, এগুলো কাশফুল। শরৎকালে ফোটে, নীল বলে।

কাশফুল আকাশের পছন্দ হয়।

নীল বলে, একদিন বাবাকে বলব কাশফুল দেখতে নিয়ে যেতে।

আকাশ শুনে খুশি হয়। ছবিটা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আকাশ গেয়ে ওঠে, ‘আজ ধানের খেতে রৌদ্র-ছায়ায় লুকোচুরি খেলা...।’ ছবি আর গানে ঘরটা যেন আলোতে ভরে ওঠে। আকাশ সব কথা গুছিয়ে বলতে না পারলেও গানগুলোই যেন ওর কথা। গানই ওর মনের ভাব বুঝিয়ে দেয়। নীল বুঝতে পারে আকাশের মন ভালো। তাই ও এখন আলো-ছায়ার গান গাইছে। মা কখন যে ওদের পাশে এসে বসেছেন, ওরা খেয়াল করেনি। গান শেষ হলে ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন মা। গান আর ছবিতে আকাশের মন খারাপ যে কখন উধাও হয়ে যায়, তা ও টেরও পায় না।