ইশ্, এমন একটা বন্ধু যদি পেতাম!

>

টুথলেসের পিঠে হিকাপ
টুথলেসের পিঠে হিকাপ

ভূতের সঙ্গে কখনো কি তোমার বন্ধুত্ব হয়েছে? কিংবা একটা টিয়া পাখি কি তোমার কাঁধে বসে নাম ধরে ডাকে? কোনো ড্রাগনকে কি তুমি ‘দোস্ত’ বলে ডাকো? সত্যি সত্যি হয়তো এমন বন্ধু পাওয়া কঠিন। তবে ছোটদের গল্প-সিনেমায় আছে এমন মজার সব বন্ধুত্বের কাহিনি। আসছে ৬ আগস্ট (আগস্ট মাসের প্রথম রোববার) বন্ধু দিবস। এই উপলক্ষে গল্প-সিনেমার এমন কিছু অদ্ভুত বন্ধুত্বের গল্প শোনা যাক।

মীনা আর মিঠুকে তো তোমরা চেনো
মীনা আর মিঠুকে তো তোমরা চেনো

হুমায়ুনের সমস্যার অন্ত নেই। ইংরেজি পড়া শেখা হয় না বলে স্যারকে রোগী বানাতে হয়। ফুটবল খেলে জিততে হয় দুর্ধর্ষ বুলেট ক্লাবের বিপক্ষে। আবার মুগদাপাড়ার বদমাশ ছেলেপুলের সঙ্গে মারামারি করে ‘টাইট’ও দিতে হয়। তবে এত শত সমস্যাও তার কাছে পান্তাভাত। কারণ, সমস্যায় পড়লেই সে যায় তার বন্ধুর কাছে। কাতর গলায় বলে, ‘ও ভাই বোতল ভূত, লক্ষ্মী সোনা, চাঁদের কণা—ছয় প্রশ্নমালার তিন নম্বর অঙ্কটা পারছি না। একটু দেখবে কিছু করা যায় কি না?’

বোতল ভূত
বোতল ভূত

এসব আবেদনে সব সময় যে কাজ হয়, তা নয়। তবে বেশির ভাগ সময়ই হয়। খুব জটিল কোনো সমস্যায় পড়লে হুমায়ুনের পাশে এসে দাঁড়ায় তার বন্ধু।

হুমায়ুন নামের ছেলেটাকে কি হিংসা হচ্ছে? হিংসা হলে তোমাকে মোটেও দোষ দেওয়া যাবে না। হিংসা আরও বেড়ে যাবে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হ্‌ুমায়ূন আহমেদের লেখা বোতল ভূত বইটা পড়লে। গল্পের নায়ক হুমায়ুন আর বোতল ভূতের বন্ধুত্বের গল্পটা এককথায়—অদ্ভুত!

দ্য বিএফজি বইয়ের প্রচ্ছদ
দ্য বিএফজি বইয়ের প্রচ্ছদ

আরেক অদ্ভুত বন্ধুত্বের গল্প বলি। ড্রাগনের এক ছানাকে শিকার করতে গিয়ে কী যে কাণ্ড করে বসল হিকাপ নামের ছেলেটা! শিকার করবে কি, উল্টো বন্ধুত্বই হয়ে গেল ওর সঙ্গে। ড্রাগন বন্ধুর নাম রাখল সে টুথলেস (পরে অবশ্য ওর দুই পাটিতে বিশাল বিশাল দাঁত গজায়)। হাউ টু ট্রেইন ইয়োর ড্রাগন নামের অ্যানিমেশন সিনেমায় পাবে দুই বন্ধুর রোমাঞ্চকর অভিযানের গল্প।

অভিযানের সঙ্গে টিনটিনের নামটা সেঁটে থাকে স্টিকারের মতো। আর কী থাকে? হ্যাঁ, অবশ্যই কুট্টুসের কথা। টিনটিনের এই প্রাণের বন্ধু কতবার যে তার প্রাণ বাঁচিয়েছে, তার হিসাব পাবে ‘টিনটিন’ কমিকসগুলো পড়লে। কুট্টুস নামের কুকুর আর টিনটিনের বন্ধুত্ব নিয়ে এই গল্পগুলোর স্রষ্টা বেলজিয়ান কার্টুনিস্ট হার্জ।

টুকুনজিল বইয়ের প্রচ্ছদ
টুকুনজিল বইয়ের প্রচ্ছদ

কার্টুনের কথাই যখন এল, তখন মীনার কথাই বা বাদ যাবে কেন? আর মীনার কথা বললে পাশ থেকে মিঠু কিন্তু শুরু করে দেবে তুমুল চেঁচামেচি! থাক বাবা, মীনার এই পোষা টিয়া পাখিকে বেশি জ্বালাতন করা ঠিক হবে না। না হলে হয়তো পেছনে ধাওয়া করে ধরাশায়ী করে বলবে, ‘কৌতুক বন্ধ করো, কৌতুক বন্ধ করো!’ আর বন্ধু মিঠুর এমন চেঁচামেচি শুনলে ছুটে আসবে মীনাও। তখন আর রক্ষা করার কেউ থাকবে না!

সোফিকে রক্ষা করার জন্য অবশ্য বি-শা-আ-আ-ল এক বন্ধু আছে। সেই বন্ধুর নাম—বিগ ফ্রেন্ডলি জায়ান্ট, সংক্ষেপে বিএফজি। প্রতি রাতে পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন ভয়ংকর সব দৈত্য জ্বালাতন করতে আসে মানুষদের। এই ভয়ংকর দৈত্যগুলোর মধ্যে একটা আবার ভারি দয়ালু। আর তার নামই বিএফজি, যার পকেটে বসে অদ্ভুত সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায় সোফি। শেষমেশ ওরা দুজন মিলে উচিত শিক্ষা দেয় ব্লাডবটলার, ফ্লেশলাম্পইটার আর ওদের সাঙ্গোপাঙ্গ সব দৈত্যকে। বিশ্বখ্যাত শিশুসাহিত্যিক রোয়াল্ড ডালের দ্য বিএফজি নামের বইয়ে লিখেছেন খুদে মানুষ আর বিশাল দৈত্যের বন্ধুত্বের মজার এই গল্প। এটা নিয়ে সম্প্রতি একটা সিনেমাও হয়েছে।

মোয়ানা আর হেইহেই
মোয়ানা আর হেইহেই

অ্যানিমেশন সিনেমা মোয়ানার গল্প বলি এবার। মোয়ানা নামের দুর্দান্ত সাহসী এক উপজাতি মেয়ে আর ওদের দ্বীপটাকে নিয়ে এই গল্প। মোয়ানাদের গোত্রের উপদেবতা মাউই অনেক অনেক বছর আগে সর্বনাশের সূচনা করে। সমুদ্রে দ্বীপ-দেবী তে ফিতির বুক থেকে একটা পাথর চুরি করে আনে সে। যে পাথরটা তে ফিতির হৃৎপিণ্ডের মতো। এর ফলে অনেক দিন বাদে মোয়ানাদের দ্বীপে নেমে আসে বিপদ। কিন্তু মোয়ানা তো খুব ডাকাবুকো ধরনের, দ্বীপটাকে রক্ষা করার সংকল্প করে সে। অনেক নিষেধ পেছনে ফেলে নৌকা ভাসায় সমুদ্রে। সঙ্গে রাখে সেই আশ্চর্য পাথর। যেটা সে ফিরিয়ে দিতে চায় তে ফিতির বুকে। আর এই অভিযানে কাকতালীয়ভাবে ওর নৌকায় উঠে বসে বন্ধু হেইহেই। বোকার হদ্দ এই মোরগটা মোয়ানার খুব ভালো বন্ধু। অভিযানে মোয়ানার মূল্যবান পাথরটা সে বেশ কয়েকবার আগলে রেখে প্রমাণ করে একটা বোকা মোরগবন্ধু পেলে মন্দ হয় না!

টিনটিন আর কুট্টুস
টিনটিন আর কুট্টুস

যেমনটা হয়েছিল বিলু নামের কিশোর ছেলেটার বেলায়। ছুটির এক দুপুরে বাসার ছাদে অদ্ভুত এক প্রাণীর দেখা পেল সে। প্রাণীটা এসেছে সেই অ্যান্ড্রোমিডা নক্ষত্রপুঞ্জের কোনো এক গ্রহ থেকে। বিলু যাকে ডাকতে লাগল টুকুনজিল নামে। মহাক্ষমতাধর এই ভিনগ্রহী বন্ধুকে নিয়ে শুরু হলো বিলুর অভিযান। একসময় জীবনটাই পাল্টে গেল ওর। শেষমেশ বন্ধুটাকে বিদায়ও জানাতে হলো। মুহম্মদ জাফর ইকবালের অসাধারণ কিশোর উপন্যাস টুকুনজিল-এর গল্প এটা। যে গল্প পড়লে বিলু আর টুকুনজিল তোমারও বন্ধু হয়ে যাবে!