'স্মৃতির উত্তরাধিকার' নিয়ে কিছু তথ্য

‘স্মৃতির উত্তরাধিকার’ শিরোনামে ১১ আগস্ট ২০১৭ প্রথম আলোর ‘শিল্পসাহিত্য’ পাতায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন নাজেস আফরোজ। নিবন্ধ থেকে আমরা জেনেছি, ১৯৪৭ সালে বাংলা প্রদেশের ভাগ হওয়ার যাঁরা সাক্ষী, তাঁদের তৃতীয় প্রজন্মের ২০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় একটি গবেষণায়। ঢাকা ও কলকাতার গ্যোটে ইনস্টিটিউট ‘এই নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে’ ২০১৫-তে সাক্ষাৎকারভিত্তিক গবেষণার কাজটি করেছে এবং সেই সূত্র থেকেই লেখা হয়েছে নিবন্ধটি।

এখানে নিবন্ধের এক জায়গায় নাজেস লিখেছেন, ‘সম্প্রতি বাঙালি জনগোষ্ঠীর জন্য এই দুই (১৯৪৭-এর দেশভাগ ও ’৭১-এর বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ) সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের কিছু কথ্য ইতিহাস নথিবদ্ধ ও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু যা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি, রচিত হয়নি তার কথ্য ইতিহাস—সেটি হলো বিভাগ-পরবর্তী সময়ের প্রজন্ম; বিশেষত তৃতীয় প্রজন্মের ভেতরে সেই বিভাগের স্মৃতি এবং ওই সংক্রান্ত আবেগ—তা সে ভালো-মন্দ যা-ই হোক—কতটা প্রবাহিত হয়েছে, এ নিয়ে কোনো গবেষণা বা কথ্য ইতিহাস লেখা হয়নি।’
দেশ ভাগের যাঁরা শিকার, তাঁদের তৃতীয় প্রজন্মকে নিয়ে, ‘গবেষণা বা কথ্য ইতিহাস লেখা হয়নি’—আমি যত দূর জানি আফরোজের এই মন্তব্য ঠিক। কিন্তু ‘বিভাগ-পরবর্তী সময়ের প্রজন্ম’ এবং তার কারণে যাঁরা প্রত্যক্ষ শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক গবেষণামূলক কাজ করেছে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব কালচারাল টেক্সটস অ্যান্ড রেকর্ডস (সেরিবান)। পরে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রিদিব চক্রবর্তী, নিরুপমা রায় মণ্ডল ও পৌলোমী ঘোষালের গ্রন্থনা ও সম্পাদনায় ধ্বংস ও নির্মাণ, বঙ্গীয় উদ্বাস্তু সমাজের স্বকথিত বিবরণ নামে একটি বইও বের করেছে তারা। এই বইয়ে দেশভাগের প্রত্যক্ষ শিকার ও দ্বিতীয় প্রজন্মের মোট ৩১ জনের সাক্ষাৎকারসহ তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তিনটি লেখা আছে।
বইতে ‘ভাঙা দিনের ঢেলা’, ‘স্বদেশ সন্ধান’, ‘বিজয়গড় এবং’ ইত্যাদি পর্বসহ আছে দুটি পরিশিষ্ট। প্রথম পরিশিষ্ট: চিত্র ও নথি এবং দ্বিতীয় পরিশিষ্টে আছে তিনটি লেখা। তার মধ্যে বিখ্যাত শিল্পী গণেশ হালুইয়ের লেখাটির শিরোনাম ‘স্বাধীনতা নয়, দেশ বিভাগের পঞ্চাশ বছর’।
নিবন্ধকার আফরোজের মন্তব্য, ‘সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের কিছু কথ্য ইতিহাস নথিবদ্ধ ও প্রকাশিত হয়েছে।’ তিনি ‘কিছু কথ্য ইতিহাস’-এর জায়গায় কিছু ‘নথির’ নাম না লিখলেও, ধ্বংস ও নির্মাণ, বঙ্গীয় উদ্বাস্তু সমাজের স্বকথিত বিবরণ বইটির নাম পাঠককে জানাতে পারতেন, ‘যেহেতু তিনি বাংলাদেশ ও ভারতে চালানো এক গবেষণায় তার রূপ বুঝতে চেয়েছেন।’
জাহিদ হায়দার
সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা।