বইয়ের স্বাদ সিনেমায়
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে কি না, এ নিয়ে তর্ক হতে পারে। কিন্তু বই পড়া আর সিনেমা দেখার আনন্দের মধ্যে যে একটা বিস্তর ফারাক আছে, সেটা বোধ হয় সবাই মেনে নেবে। ছোটদের এমন অনেক গল্প আছে, যেগুলো পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া হয়েছে। কেউ বই পড়ে ছবি দেখেছে, কেউ ছবি দেখে বই পড়েছে। তোমরা চাইলে দুটো অভিজ্ঞতাই নিতে পারো। দুটোর মজা দুই রকম। বইয়ের পাতা থেকে বড় পর্দায় স্থান পেয়েছে, এমন পাঁচটি সিনেমা নিয়ে লিখেছেন মো. সাইফুল্লাহ
আমার বন্ধু রাশেদ
রাশেদ নামে কোনো বন্ধু কি তোমার আছে? মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা আমার বন্ধু রাশেদ পড়লে কিন্তু গল্পের রাশেদকেও তোমার বন্ধু মনে হবে। এই গল্প থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম। ১৯৭১ সালে মফস্বলের একদল কিশোর কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখল, সেই গল্প পড়তে পড়তে (কিংবা দেখতে দেখতে) একসময় নিশ্চয়ই তোমার চোখ ভিজে উঠবে। ইবু, রাশেদ, অরু আপা, শফিক ভাই—চরিত্রগুলো কখন তোমার খুব আপন হয়ে যাবে, টেরও পাবে না।
ডায়েরি অব আ উইম্পি কিড
জেফ কিনের লেখা ও আঁকা বিখ্যাত উপন্যাস ডায়েরি অব আ উইম্পি কিড। বইটা যাদের হাতে পৌঁছায়নি, ভাবতে পারো উপন্যাস তো লেখা হয়, ‘আঁকা’ হয় কী করে? এটাই তো মজা! গল্পের সঙ্গে মজার সব ছবি জুড়ে দিয়েছেন জেফ কিনে। ছবিগুলো যেমন মজার, গল্পটাও দারুণ! এখন পর্যন্ত এই উপন্যাসের ১২টি পর্ব বেরিয়েছে। আর ছবি তৈরি হয়েছে ৪টি। এই তো এ বছরও কয়েক দিন আগে বেরোল ডায়েরি অব আ উইম্পি কিড: দ্য লং হল। ঘটনাটা এককথায় এমন—গ্রেগ হেফলি নামে স্কুল পড়ুয়া ছেলেটা নতুন নতুন ফন্দি আঁটে আর সেগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভজকট পাকিয়ে ফেলে। হো হো হা হা করে হাসতে চাইলে বইগুলো পড়তে পারো, ছবিগুলোও দেখতে পারো।
এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী
জার্মান লেখক এরিখ কাস্টনারের লেখা উপন্যাস এমিল অ্যান্ড দ্য ডিটেক্টিভস থেকে এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী নামে ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন বাংলাদেশের পরিচালক বাদল রহমান। বইটি বেরিয়েছে ১৯২৯ সালে, আর ছবিটা মুক্তি পেয়েছে ১৯৮০ সালে। বই আর ছবি—দুটিই অনেক পুরোনো। কিন্তু দুটিই যে তোমাকে মুগ্ধ করবে, সেটা নিশ্চিত। পটভূমি আলাদা, কাহিনি মোটামুটি একই রকম। ছোট্ট ছেলে এমিল ট্রেন ভ্রমণের সময় কিছু টাকা হারিয়ে ফেলে। টাকা উদ্ধারের অভিযানে নামে সে আর একদল কিশোর। এমিলের এই জমজমাট অভিযানের অংশ হতে চাইলে বইটা পড়তে পারো, ছবিটাও দেখতে পারো।
হ্যারি পটার
হ্যারি পটার চরিত্রটা বোধ হয় তোমাদের সবার চেনা। বই কিংবা সিনেমা হাতের কাছে না পেলেও হ্যারিকে নিশ্চয়ই তুমি চেনো। সেই যে জাদুকর ছেলেটা, চোখে চশমা, কপালে কাটা দাগ। ব্রিটিশ লেখক জে কে রাওলিং তাঁর এই এক উপন্যাস দিয়ে মাতিয়েছেন পুরো পৃথিবী। ছোটরা তো বটেই, বড়রাও হ্যারির গল্প এমন গোগ্রাসে গিলেছে যে জে কে রাওলিংকে হ্যারি পটারের মোট সাতটি পর্ব লিখতে হয়েছে। ওদিকে এই উপন্যাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একের পর এক ছবি নির্মাণ করেছে চলচ্চিত্র নির্মাণপ্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রস। মোট আটটি ছবি তৈরি হয়েছে সাতটি উপন্যাসকে কেন্দ্র করে। হ্যারি পটারের বইগুলো না পড়লে কিংবা ছবিগুলো না দেখলে কিন্তু মিস করবে। এমন অদ্ভুত জাদুর দুনিয়ায় যদি উঁকি না দাও, কত কী অজানা থেকে যাবে!
মাটিল্ডা
এই ছবিটার সম্পর্কে বলতে গেলে তিনবার আমাকে ‘বিখ্যাত’ শব্দটা ব্যবহার করতেই হবে। বিখ্যাত ব্রিটিশ শিশুসাহিত্যিক রোয়াল্ড ডালের বিখ্যাত উপন্যাস মাটিল্ডা থেকে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত চলচ্চিত্র মাটিল্ডা। ১৯৮৮ সালে লেখা বইটি চলচ্চিত্রে রূপ পেয়েছে ১৯৯৬ সালে। মূল চরিত্রের নাম মাটিল্ডা ওয়ার্মউড। অদ্ভুত সব প্রতিভা নিয়ে জন্মেছে মেয়েটা। অথচ তার এই প্রতিভার মূল্যায়ন করে না বাড়ির কেউ। মাটিল্ডা যখন স্কুলে ভর্তি হয়, তখন শুরু হয় আসল মজা। উফ্, না দেখে থাকলে (বা না পড়ে থাকলে) মাটিল্ডার মজা বোঝানো মুশকিল। দেরি না করে দেখে (অথবা পড়ে) ফেলো।