ছোটদের জন্য হুমায়ূন আহমেদের লেখা ৫ বই

১৩ নভেম্বর প্রখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। তাঁকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ নেই, কিন্তু প্রিয় লেখকের স্মরণে তোমরা তাঁর লেখা বই তো পড়তে পারো।

একি কাণ্ড!

টুকুন একটা কাকের সঙ্গে কথা বলে। নানান রকম কথা। এবং বিষয়টা ও সবাইকে বলে বেড়ায়। সেসব শুনে মা-বাবা ওর ওপর বিরক্ত। এই বয়সে যদি এ রকম বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে থাকে তাহলে বড় হয়ে কী করবে? বাবা টুকুনকে বলে দিয়েছেন, কাক নিয়ে যেন আর কখনো কোনো কথা সে না বলে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কাকের সঙ্গে টুকুনের মিতালি চলতেই থাকল।

একবার টুকুনের জন্মদিনে কোনো অনুষ্ঠান হলো না। সে মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকল। ঠিক সে সময় কাকটা এল টুকুনের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে। সঙ্গে নিয়ে এল উপহার—একটা ‘ঝেং-এর বাচ্চা’। ঝেং অদৃশ্য, কেউ দেখতে পায় না কিন্তু অনুভব করতে পারে। সেই ঝেং-এর বাচ্চাকে নিয়েই ঘটতে লাগল মজার সব কাণ্ডকারখানা। মিস করতে না চাইলে বইটা পড়ে ফেলো ঝটপট।

তোমাদের জন্য রূপকথা

‘ইরকিম বিরকিম/ নাগা খিরকিম/ এলট বেলট ইলবিল ঝা/ পোলাও-কোরমা এসে যা’

ভাবছ, এ আবার কেমন ছড়া? এটা ছড়া নয়। ওই যে দূরের কটক পাহাড়, ওখানেই থাকে এক হাজার বছর বয়সী কানি ডাইনি। এমন মন্ত্র পড়েই ডাইনি খাবার আনে, ঘরদোর ঝাড়ু দেয়; আরও কত কী করে! কিন্তু বয়স হয়েছে বলে মন্ত্রটন্ত্র ভুলতে বসেছে ডাইনিটা। এক মন্ত্রের জায়গায় অন্য মন্ত্র বলে, আগের শব্দের জায়গায় পরের শব্দ বলে। তাই মন্ত্র কাজ করে না। ডাইনি পড়ল ভীষণ মুশকিলে। কটক পাহাড়ের নিচেই মনপুকুর গ্রাম। সেই গ্রামের লক্ষ্মী মেয়ে মৌ। ওর একটাই দোষ, গল্প শুনতে চায়। ভাত খাওয়ার সময় গল্প, ঘুমানোর সময় গল্প, স্কুলে যাওয়ার সময় গল্প! কত আর গল্প বলা যায়? ওর মা-বাবা মহা বিরক্ত। শেষমেশ মৌয়ের বাবা বলে বসলেন, ‘আর গল্প গল্প করলে চড় খাবি।’ মৌয়ের খুব মন খারাপ হলো, রাগ করে চলে গেলো কটক পাহাড়ে, কানি ডাইনির আস্তানায়। কানি ডাইনি মৌকে বশ করবে কি, উল্টো মৌ-ই ডাইনিকে কবজা করে নিয়ে এল গ্রামে! কী হলো তারপর?

পুতুল

পুতুলের বয়স ১১। ওর মা-বাবা অনেক ধনী। জন্ম থেকে পুতুলের হার্টের সমস্যা, ফলে মা-বাবা খুব দুশ্চিন্তায় থাকেন। তবে সারা দিন বাড়ির বাইরে কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে পুতুলকে তাঁরা সময়ও দিতে পারেন না। একটা দূরত্ব থেকেই যায়। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পুতুল বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে দেখা হয় তারই বয়সী এক ছেলে অন্তু মিয়ার সঙ্গে। অন্তু তার দুই বছরের ছোট বোন মরিয়মকে নিয়ে থাকে কমলাপুর রেলস্টেশনে। কথায় কথায় ভাব জমে ওঠে ওদের। মা-বাবাকে না জানিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়া পুতুল অন্তুদের সঙ্গে মিশে যায়। ট্রেনে চেপে চলে যায় ময়মনসিংহ পর্যন্ত। দিনভর ওদের সঙ্গে থেকে নানান অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় ও। কেমন ছিল পুতুলের সেই দিনটি? পুতুল বইটি পড়লে জেনে যাবে সব। আরও মজার ব্যাপার হলো, এই পুতুল নিয়ে কিন্তু সিনেমাও হয়েছে। সিনেমার নাম দূরত্ব। পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল।

নীল হাতি

বইটিতে আছে মোট তিনটি গল্প—‘নীল হাতি’, ‘একটি মামদো ভূতের গল্প’, ‘আকাশপরী’। তিনটি গল্পই নীলুকে ঘিরে। প্রথম গল্পে দেখা যায়, নীলুর সঞ্জু মামা থাকেন আমেরিকায়। মামাকে সে কখনো দেখেনি। সেই মামা নীলুকে একটি নীল হাতি উপহার পাঠিয়েছেন। উপহার পেয়ে নীলুর খুশি দেখে কে! হাতির শুঁড় নড়ছে আপনাআপনিই। গলায় রুপার ঘণ্টা বাজছে টুনটুন, ঝুনঝুন শব্দে। নীলুর বন্ধুরা সুন্দর হাতিটা দেখতে এল। বড় খালা, চাচা, মায়ের বান্ধবীরাও এলেন। একদিন মায়ের এক বান্ধবীর ছেলে টিটোর কান্না থামাতে হাতিটা তুলে দিতে হলো ওর হাতে। শুনে মন খারাপের শেষ নেই নীলুর। তবে সেদিন রাতেই নীলু আবার হাতিটাকে ফিরে পায়। কিন্তু কীভাবে, জানতে চাও? পড়তে হবে ‘নীল হাতি’।

দ্বিতীয় গল্পে নীলুর জন্মদিনে মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সবাই তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত। এরই মাঝে ঘটল এক মজার কাহিনি। নীলুর সঙ্গে দেখা করতে এল তেঁতুলগাছের ভূত, সঙ্গে ভূতের মেয়ে হইয়ু। তারপর? বাকিটুকু বই পড়েই জেনে নিয়ো।

আর শেষ গল্পটি আকাশপরিকে নিয়ে। নীলুর বাবা বলেন, ‘পরি বলে কিছু নেই’। মা-ও বলেন, ‘ওসব ফাঁকিবাজি।’ কিন্তু নীলুর বাবার বন্ধু আজিজ চাচ্চু আকাশপরিদের নিয়ে দারুণ একটি গল্প শোনালেন! কী ছিল সেই গল্পে?

 মজার ভূত

এই বইয়ের প্রথম গল্প ‘মিরখাইয়ের অটোগ্রাফ’। নীতু কাল্পনিক গল্প পছন্দ করে না। সে সব সময় সত্যি গল্প শুনতে চায়। নীতুর বড় মামা তাই নীতুকে সত্যিকারের ভূতের গল্প শোনাতে শুরু করেন। ঠিক ভূতের গল্প নয়, আসলে ভূতের বাচ্চা টুতের গল্প। এক রাতে নীতুর বড় মামা বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ কান্নার আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়ালেন। কিন্তু আশপাশে কাউকে দেখতে পেলেন না। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে নিজেই নিজেকে ধমক দিলেন তিনি। আর তখন জোরে শব্দ করে কেঁদে উঠল ভূতের বাচ্চা টুত! বড় মামা কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতেই বলল, সে নাকি পরীক্ষায় ফেল করেছে!

দ্বিতীয় গল্পটির নাম ‘একটি ভয়ংকর অভিযানের গল্প’। সত্যি সত্যিই রোমাঞ্চকর এক অভিযানের গল্প। তবে অভিযানটি মানুষের নয়, মশার। মা মশা একদিন তার তিন কন্যা পি, পিপি, পিপিপি আর এক পুত্র পে-কে নিয়ে রক্ত খাওয়ার অভিযানে বের হলো। শর্ত একটাই, এক চুমুকের বেশি রক্ত খাওয়া যাবে না। কিন্তু পিপিপি খেয়ে ফেলল এক গাদা রক্ত! আর তার পেটটি ফুলে হয়ে গেল ঢোল। এখন এই শরীর নিয়ে সে উড়ে পালাবে কেমন করে?

 ‘ভূত মন্ত্র’ হলো বইটির তৃতীয় গল্প। বাবলুর মা-বাবা এক দিনের সফরে ভৈরব যাচ্ছেন। বাসায় ও একা। একগাদা অঙ্ক দাগিয়ে দিয়ে গেছেন ওর বাবা। শেষ করতে হবে সব। অথচ বাবলুও বেড়াতে যেতে চেয়েছিল। এদিকে বুয়া গ্লাসভর্তি দুধ রেখে যান টেবিলে। বাবলু আবার দুধ খেতে চায় না। এর মাঝে বাসায় অচেনা এক ছেলে এসে হাজির। সে নাকি মন্ত্র পড়ে দুধকে পেপসি বানাতে পারে! এই গল্পের সঙ্গে বইটিতে পাবে ‘রুঁরুঁর গল্প’, ‘মোবারক হোসেনের মহাবিপদ’, ‘পানি রহস্য’সহ মোট ছয়টি গল্প।

এম এ হান্নান