বাচ্চাহাতির গল্প

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

একটা ছিল বাচ্চা হাতি। ‘না, মোটেও না! আমি বাচ্চা না! আমাকে বাচ্চা বলবে না! আমি বড় হয়ে গেছি।’

অ্যাঁ! হাতির ছানা বলে কী! ওহে হাতির ছানা, আমি তোমাকে নিয়ে গল্প লিখছি। আমি যেমন চাইব, তেমনি লিখব। আর তোমার বয়স তো এক মাসও হয়নি।

 ‘তাতে কী! আমি বড়! দেখছ না আমার কত বড় শুঁড় আর কান!’

বাচ্চা হাতিটা দেখি মহা বিচ্ছু। ওকে নিয়ে গল্প লেখা তো মুশকিল হলো দেখছি!

 ‘আমাকে নিয়ে তোমার গল্প লিখতে হবে না। আমার গল্প আমি নিজেই লিখব।’

কত গল্প লিখেছি। ভূতের গল্প, পেতনির গল্প। কেউ টুঁ শব্দ করার সাহস পায়নি। কিন্তু এমন বিপদে তো কোনো দিন পড়িনি!

আমার গল্পটা হবে এমন—এক যে ছিল হাতির বাচ্চা। নদী পার হতে গিয়ে ওটা স্রোতের টানে ভেসে যাবে। এরপর একটা পিঁপড়া এসে তাকে বিপদ থেকে বাঁচাবে। কিন্তু নাছোড়বান্দা হাতিটা শুরুতেই গোল বাধালো।

‘কী বললে! আমি পানিতে ভেসে যাব? আর ওই পুঁচকে পিঁপড়ে এসে বাঁচাবে? হা হা হা।’

এ দেখি আবার শুঁড় দুলিয়ে, কান দুলিয়ে হাসেও! আচ্ছা মুশকিল।

‘ওহে লেখক মশাই। তুমি মানে মানে কেটে পড়ো। আমার গল্প আমাকেই লিখতে দাও। এই যে দেখো আমি লিখছি। আমি একটা হাতি। আমার আছে এক জোড়া ডানা। অনেক বড় ডানা। ডানার রং নীল। ডানা ঝাপটে আমি নদী পার হব, উড়ে বেড়াব।’

একি কাণ্ড! বাচ্চা হাতির দেখি সত্যি সত্যি ডানা গজাল। নীল ডানা! ওরে বাবা নীল ডানা ঝাপটে আবার বাচ্চা হাতিটা উড়ছেও। উড়ে উড়ে নদীও পার হলো। এই যে দাঁড়াও দাঁড়াও! যাচ্ছ কোথায়! তোমাকে নিয়ে গল্প লিখতে হবে তো!

 ‘আমার গল্প আমি লিখব, যেমন খুশি তেমন লিখব। এই যে দেখো আমি মেঘ দিয়ে আইসক্রিম বানিয়ে খাচ্ছি। তুলতুলে আইসক্রিম। মুখে দিতেই গলে পানি।’

আরে না না। তুমি তো আইসক্রিম খাবে না। তুমি খাবে কলাপাতা, ফলমূল।

‘না না, আমি হাওয়াই মিঠাই খাব। আমি লিখে ফেলেছি, হাতি হাওয়াই মিঠাই খাবে। এই যে অনেক অনেক হাওয়াই মিঠাই। আহা কী মজা!’

আর তোমাকে একটা বিপদে ফেলতে হবে। তা না হলে তো গল্প হবে না। বুঝতে পারছ? তুমি সারা দিন তাইরে-নাইরে করে উড়ে বেড়াবে। এ গল্প তো কেউ পড়বে না।

‘আমাকে কী বিপদে ফেলবে শুনি!’

আমি ভাবছি কী করা যায়। আচ্ছা আমিও গল্প লিখি, হাতির বাচ্চাও লিখুক। আমি লিখলাম, হাতির বাচ্চার ডানা দুটো হঠাৎ করে গায়েব হয়ে গেল। সে আর উড়তে পারছে না। ওই যে দেখো সবাই, হাতির বাচ্চা শোঁ শোঁ করে পড়ে যাচ্ছে। এবার বুঝবে মজা!

‘আমার আছে একটা ইয়া বড় প্যারাসুট। ওটা দিয়ে আরামসে নামছি।’

উফফ, হাতির ছানাটা তো মহা দুষ্টু! সময়মতো দুলাইন লিখে নিজেকে বাঁচিয়ে দিল। কিন্তু ওর প্যারাসুট তো ফুটো হয়ে গেল! এখন উপায়?

‘আমি সোজা গিয়ে পড়লাম নদীতে। একটুও ব্যথা পাইনি। আমি সাঁতারও জানি। ভেসে বেড়াতে পারি খুব সহজে।’

নদীতে কিন্তু অনেক স্রোত! এবার তুমি বিপদে পড়বেই! আর পিঁপড়েও আসছে তোমাকে উদ্ধার করতে।

‘ওহে লেখক! নদীতে যতই স্রোত থাকুক, আমার অনেক ওজন। স্রোতে কিচ্ছু হবে না। আর ওই যে আমার মা। আমাকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে টেনে ওপরে তুলে ফেলল।’

কোথা থেকে দেখি বাচ্চা হাতির মা-ও হাজির। আমার দিকে রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। জোরে জোরে ডাকও ছুড়ছে। যেন বলতে চাইছে, আমার বাচ্চাটা বিপদে পড়বে, এমন গল্প লেখার দুঃসাহস তোমার কী করে হলো! আমি পড়েছি মহাবিপদে। বাচ্চা হাতিটা তার মায়ের সঙ্গে নাচতে নাচতে চলে গেল। আমার গল্পটাও আর লেখা হলো না।