হারিয়ে যাওয়া এক রাজহাঁসের বাচ্চা

অলংকরণ: শামীম আহমেদ
অলংকরণ: শামীম আহমেদ

আমি বড় কানওয়ালা খরগোশ। ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম বনে। হঠাৎ শুনতে পেলাম কে যেন কাঁদছে। কাছে গিয়ে দেখি, কাঁদছে রাজহাঁসের এক বাচ্চা। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছে রে তোর?’

‘ও বলল, ‘আমি হারিয়ে গেছি। আমি জানি না, কোথায় আমার বাড়ি!’
‘চল, আমরা তোর বাড়ি খুঁজি।’ বললাম আমি।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা একটা খুব সুন্দর গর্তের কাছে এলাম। বললাম, ‘এটাই কি তোর বাড়ি?’
‘জানি না। আমি তো বাড়িটা চিনি ভেতর থেকে। বাইরে থেকে কেমন সে বাড়ি, তা তো আমি জানি না। যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, তখনো খেয়াল করে দেখিনি।’ বলল রাজহাঁসের বাচ্চা।
আমরা সে গর্তে ঢুকলাম, দেখলাম। আমরা বুঝতে পারলাম, এটা রাজহাঁসের বাড়ি নয়। তাই আমরা খুব তাড়াতাড়ি সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। কিন্তু সে বাড়ির মালিক শিয়াল চিৎকার করে বলল, ‘এসো এসো, তোমরা আমার বাড়ি এলে খুশি হব।’
আমরা তাকে বললাম, ‘এবার না। সামনে কোনো একদিন আসব।’
একটু সামনেই গাছের ডালে ঝুলছিল একটা বাড়ি।
আমি বললাম, ‘এটাই তো তোর বাড়ি হতে পারে!’
‘এসো, কাছে গিয়ে দেখি!’ বলল রাজহাঁসের ছানা।
আমরা লাফ দিয়ে উঠলাম গাছে। পৌঁছে গেলাম বাড়িটার কাছে।
‘না না, এটা আমার বাড়ি নয়। আমার বাড়িটা তো বড়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এটা দেখো, কেমন ভাঙা ভাঙা!’
এ কথা বলার পরই সেখানে উড়ে এল কাক। কর্কশ গলায় চেঁচিয়ে বলল, ‘ঠিক ঠিক, এটা তোর বাড়ি নয়। এটা আমার বাড়ি। আমি নিজে এটা বানিয়েছি!’
রাজহাঁসের বাচ্চা বলল, ‘তুমি এ রকম অগোছালো বাড়ি বানিয়েছ কেন?’
‘অগোছালো মানে! আমার বাড়ি আমি তৈরি করেছি। আমার যেমন ইচ্ছে, তেমন করেই আমি বাড়ি তৈরি করব, তোর তাতে কী?’ রেগে গিয়ে বলল কাক। তারপর বলল, ‘যা, আমার বাড়ির সামনে থেকে ভাগ!’
কাক ওর বাড়ির কাছ থেকে তাড়িয়ে দিল আমাদের। এরপর আমরা পৌঁছে গেলাম একটা দারুণ বাড়ির কাছে। এই বাড়িতে ছাদ আছে।
‘এটাই কি তোর বাড়ি?’ রাজহাঁসের বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
‘মনে হচ্ছে এই বাড়িটা চিনি। কিন্তু এখনই বলতে পারছি না এটাই আমার বাড়ি কি না!’
‘হ্যাঁ, দরজাটা চেনা চেনা মনে হচ্ছে।’
এভাবেই বাড়ি চেনার কাজ শুরু হলো।
‘বিছানাটা চেনা চেনা লাগছে?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি।
আমরা লাফ দিয়ে বিছানায় উঠলাম। আরে! কী নরম! লাফিয়ে কী আনন্দ!
‘এই বিছানায় আমি ঘুমাই। আর ওখানে আমি খাওয়াদাওয়া করি।’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ওখানে বসে তুই খাস? সব তুই খেয়ে ফেলেছিস?’
‘না না, আমি এখানে খাইনি। তার মানে এটা আমার বাড়ি নয়!’
তখনই দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকল ইয়া বড় এক কুকুর। তাড়াহুড়ায় কুকুরের বাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে রাজহাঁসের বাচ্চা টক্কর খেল কুকুরের সঙ্গে। দড়াম করে পড়ে গেল মেঝেয় আর অজ্ঞান হয়ে গেল।
আমি ভাবলাম, কুকুরের বাড়িতে তো শুধু ঢুকিইনি, এখানে এসে রাজহাঁসের বাচ্চাটা অজ্ঞানও হয়ে গেল। এ তো মহাবিপদ!
কুকুর জিজ্ঞেস করল, ‘আমার বাড়িতে ঢুকেছিস কেন?’
‘এই তো একটু দেখতে। ঘুরলাম, ফিরলাম...,’ বললাম আমি।
‘আমার বাড়িটাকে কি জাদুঘর ঠাওরেছ?’ রেগে চোখ বড় বড় করে বলল কুকুর।
আমি তখন বললাম, ‘আমাদের ক্ষমা করবেন। আমরা বিদায় নিচ্ছি।’
আমি রাজহাঁসের বাচ্চাটাকে ধরে নিয়ে তক্ষুনি বেরিয়ে এলাম কুকুরের বাড়ি থেকে।
সেখান থেকে বের হয়ে আমরা পড়লাম এক ভালুক ছানার সামনে। রাজহাঁসের বাচ্চাটা ভালুককে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার হাতে এটা কী?’
ভালুকছানা বলল, ‘ফল কুড়িয়েছি। ফল খাচ্ছি। আমি ভাঙা ডিমের খোসার মধ্যে নিয়েছি ফলগুলো।’
রাজহাঁসের বাচ্চা ভালুকের হাত থেকে ভাঙা ডিমের খোসাটা একটানে ছিনিয়ে নিল। তারপর বলল, ‘এই তো আমার বাড়ি! আমি আমার বাড়ি খুঁজে পেয়েছি!’ তারপর কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, ‘আমার বাড়ি ভেঙে গেছে। আমি এখন কোথায় থাকব। আমি তো সত্যিই হারিয়ে গেছি!’
তখন ভালুকছানা ওকে বলল, ‘আরে, কিছুই তুই হারাসনি। তুই শুধু এই ডিম থেকে বের হয়েছিলি। ব্যস! ওটুকুই!’