বসন্তের পাদাবলি

মোস্তাক আহমাদ দীন
ঋতুসন্ধি ২

অশ্বত্থগাছের নিচে শতবর্ণ ফলের বাজার

কিন্তু তাও কি সম্ভব? এদিকে-ওদিকে আগুন,
তুমি যাকে বলবে দ্বিস্বর: অগ্নি-জললিপি
যার অগোচরে সুবচন গানের বিস্তার!

লতাপাতা আর তৃণের সম্ভার দেখো
বহুভাবে ঘুরেফিরে দশদিকে গেছে
এবার কেউ লাল ছুরি দিয়ে টুকরো-টুকরো করে নাই হাওয়া
তাই মৃদু বায়ু বয়, মাঘে-মেঘে হয় নাই দেখা
এবার আর কাটা দিয়ে ওঠে নাই শীত

তবু কে আর বিশ্বাস করবে
এ-বসন্তে আগুন নয়, খলবল জল তা-ও নয়...

তাহলে অশ্বত্থগাছের নিচে কেন শতবর্ণ
ফলের বাজার?

কুমার চক্রবর্তী
এপিটাফহীন

শস্যক্ষেত্র পেরিয়ে যখন তোমার
আলো-অন্ধকারের ত্রস্ত জড়িমায়
এপিটাফ খুঁজছিল পৃথিবী, ঠিক তখনই
তার ভাষা জন্ম দেয় আমাদের শেষ কবিতার;
আমি তো যুদ্ধের ঘোড়া, খারিপশস্যের আগে
ছুটি দিগ্বিদিকে, ভিত্তিভূমি অক্লান্ত অদ্ভুত,
যুদ্ধ করে দুই পক্ষ, জয়-পরাজয়ে
আমি অসহায়, অন্ধ, নিজের জন্মের দোষে
রক্তাক্ত হয়েছি আর পড়ে আছি যুদ্ধক্ষেত্রে
ক্লান্ত, রণভঙ্গে; দুর্যোধন নই তবু স্বীয় নিয়তিতে
আজ ঊরু ভঙ্গ, যেনবা মৃত্যুর দিকে একাকী যাত্রার গান—
এপিটাফহীন, শুধু রেখে যাই ক্রন্দন দর্শন:
প্রতিটি জীবন এক সংখ্যালঘুর
প্রতিটি জীবন যেন ধ্বস্ত, কালখণ্ডের স্পন্দন।

আফরোজা সোমা
আত্মঘাতীর নগরে প্রেম

কাননে কুসুম না ফোটে যদি
তবু প্রেম দরজায় দিতে পারে টোকা,
তবু সে আড়চোখে রেখে যেতে পারে
হৃদয়ের দাবি।

এইটুকু মেনে নিয়ে বসন্ত আসে;
জঙ্গিপীড়িত নগরের গলি ও রাজপথে
শিকারি নৌকোর মতন একরোখা
একাকী বয়ে চলে প্ররোচক বায়ু।

এই ভীষণ হাওয়া ডোমকেও ছোঁয়;

আত্মঘাতীর বুক চিরে, ডোম,
পেয়েছ কি কারও মুখ?
পেয়েছ কি আড়চোখে
রেখে যাওয়া দাবি?
এই প্রশ্ন ডোমকে কোরো না জিজ্ঞেস;
এখন সময় খারাপ,
চারদিকে বসন্ত,
চারদিকে জঙ্গির উৎপাত;

তবু জঙ্গলে রুদ্রপলাশ ফোটে
তবু প্রেম জঙ্গির মতো, অকস্মাৎ,
ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে যেতে পারে মনে।