সেই সব সাহসী উচ্চারণ

>

নারীর প্রতি যৌন নিগ্রহ নিয়ে গোটা পৃথিবী এখন সোচ্চার। ‘#মিটু’ আন্দোলন হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের অভিন্ন মঞ্চ। নারীর প্রতি যৌন নিগ্রহ কীভাবে ধরা পড়েছে আমাদের সাহিত্য ও আত্মজীবনীতে? #মিটু আন্দোলনের পূর্বাপর প্রেক্ষাপটই-বা কী? গতকাল পেরিয়ে গেল বিশ্ব নারী দিবস। এই পরিপ্রেক্ষিত মাথায় রেখে আজকের আয়োজন।

বিনোদিনী দাসী ও কানন দেবী—এই দুই অভিনেত্রী তাঁদের আত্মস্মৃতিতে করেছেন সাহসী উচ্চারণ
বিনোদিনী দাসী ও কানন দেবী—এই দুই অভিনেত্রী তাঁদের আত্মস্মৃতিতে করেছেন সাহসী উচ্চারণ

গল্প-উপন্যাস ছাড়া নারীদের আত্মজীবনীতে নিগ্রহের প্রসঙ্গ এসেছে জোরালোভাবে। এ দেশে, এ অঞ্চলে শত বছর ধরে চলা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিধিনিষেধ ডিঙিয়ে কেউ কেউ তবু সাহসের সঙ্গে অকপট সত্য উচ্চারণ করেছেন বৈকি। যেমন বাংলা থিয়েটারের সম্রাজ্ঞী নটী বিনোদিনী দাসী। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে আত্মজীবনী আমার কথায় তিনি লিখেছেন, ‘ভাবিতে হয় এ জীবন প্রথম ঘৃণিত করিল কে? সে সকল পুরুষ কাহারা? যাহারা সমাজ মধ্যে পূজিত, আদৃত, তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ নন কি? আবার এই বিপন্নাদের পদে পদে দলিত করিবার জন্য ওই অবলা প্রতারকেরাই সমাজপতি হইয়া নীতপরিচালক হন!.... শত দোষ করিলে পুরুষের ক্ষতি নাই; কিন্তু নারীর নিস্তার নাই টলিলে চরণ!’ (আমার কথা, প্রকাশকাল: ১৩১৯ বঙ্গাব্দ)। কী নিদারুণ সত্যকথন।

বলেছেন অভিনেত্রী কানন দেবীও। ‘প্রযোজক-পরিচালকদের কথা ছেড়েই দিলাম। তাঁরা তো সবারই প্রভু। কিন্তু অল্প বয়স ও অনভিজ্ঞতার কত সুযোগই না সবাই নিয়েছে।...তোমরা এদেশের মেয়েরা ব্যাকওয়ার্ড বলেই অভিনয়ে এত কাঁচা। ওদেশের অভিনেত্রীদের কত প্রগ্রেসিভ আউটলুক। জড়িয়ে ধরা বা চুমু খাওয়া তাদের কাছে ডালভাত। বলতে বলতে ঘনিষ্ঠ হয়ে এগিয়ে আসা হিরোদের চোখে মুখে ফুটে উঠত কি নির্লজ্জ লুব্ধতা আর স্থূল লোলুপতা। সারা শরীর যেন ঘৃণায়, ভয়ে শিউরে উঠত।’ (সবারে আমি নমি, প্রকাশকাল: ১৯৭৩)।

এখনো হয়তো এই মাধ্যমের কোনো অভিনেত্রী কানন দেবীর মতো সহজ কথা বলতে সাহস করবেন না।