মোহাম্মদ রফিকের কবিতা


সেই লগ্নে
আকালের দিগ্‌দিগন্ত ফুঁড়ে আবির্ভাব,
নিদ্রালু যুগল স্তন সদ্য ফোটা চম্পকের কুঁড়ি
যোনিদেশে প্রফুল্ল গোলাপ,
দুই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে;

তাকে বলো, স্বপ্নময়ী, কিছু দূরে
ভেঙে পড়ে ঢেউ সাগরের বালুতীরে,
তার শব্দ, দুপুরের খাঁ খাঁ রোদে একাকার
জ্বালা-যন্ত্রণায় খাবি খেতে খেতে রচিত হয়েছে জাগরণ গান;

ঢেউয়ের ওপরে ঢেউ ধু ধু ধোঁয়াচ্ছন্ন সীমানায়,
সাদা সাদা অপস্রিয়মাণ শ্রেণিবদ্ধ রেখায় রেখায়
উড়ে যায়, মিলায় মিলিয়ে যায়,
ফের ফিরে আসে
বিন্দু বিন্দু ঘাম, ওগো দেবী, এই লগ্ন এল আজ;

এবার হরণ করে পুনরায় ছুড়ে দেবে
মূর্তিময়ী অভিশাপ, বিসর্জন, সাঙ্গ হলে পর,
দেখা হয়েছিল, দেখা পাওয়া গেল, মাঘী অমাবস্যা চিরে,
কে-বা আছে সাক্ষী তার, নির্বাক বেলায়?


বসন্তের ক্ষত
এসেছিলে
ঘূর্ণিঝড়, বসন্তের প্রথম প্রভাতে,
লন্ডভন্ড করে গেলে জগৎ-সংসার,
মোটামুটি কায়ক্লেশে দেহে-মনে
কামনা-কল্পনা দিয়ে, কোনোমতে ধরে রাখা
ঘরদোর, খুঁটি নড়বড়ে, তবু চলছে তো
গেরস্থালি এতকাল, এখন হঠাৎ, ওই ওই
দূরে উড়ে যায় হাঁড়ি-পাতিল-তৈজস
শণচালা, যেন ধড় থেকে খসে পড়ে
                             মস্তিষ্ক-মগজ চুল;
অবসন্ন শিরা-উপশিরা বেয়ে
নেমে যাচ্ছে পাথরের শিলাখণ্ড, ভূমিধস

কোকিল বা ময়না ডানা ভেঙে পড়ে রইল ফুটপাতে
সমগ্র ফুলের ঝাড় হাহাকার করে, তড়পায়

বসে আছি বুকে পুষে ক্ষত


রাতের ঘটনা
তোমার শরীরে শুনি বাঁধভাঙা স্বর,
নদীতে জোয়ার ঊর্ধ্বশ্বাস শেষ রাতে।