বৃত্তের সাহসিকতার গল্প

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

দুটি প্যান্ট, তিনটি টি-শার্ট, তোয়ালে আর একটা গল্পের বই...সব সুন্দর করে গুছিয়ে ব্যাগটার মধ্যে ভরল বৃত্ত। আর সবার ওপরে রাখল বাংলাদেশের পতাকাটা। আজ অনেক দূর যেতে হবে তাকে। সেই সুদূর নেপাল। ছোটবেলা থেকে বৃত্তের স্বপ্ন, সে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত, মাউন্ট এভারেস্ট জয় করবে। বৃত্ত বাংলাদেশ থেকে এ বিষয়ে ট্রেনিং করেছে। যদিও প্রথমে কেউ তাকে এই দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। তবুও সে সবাইকে রাজি করিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়া শেষ। এবার গন্তব্য—নেপাল।
কারও কথার তোয়াক্কা না করে বৃত্ত উড়াল দিল। নানা ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে পৌঁছাল এভারেস্টের কাছাকাছি। বৃত্ত শুনেছে, এখানে যারা আসে তারা আগেই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেয়। কিন্তু সে দমে যায়নি। এক বুক সাহস নিয়ে বৃত্ত এগিয়ে চলল এভারেস্ট জয়ের উদ্দেশ্যে।
এই যাত্রায় তার সঙ্গী হলো চারজন। ওরা পাঁচজন মিলে কেনাকাটা সেরে নিল। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিল। কারণ পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতায় অক্সিজেন ছাড়া যাওয়া অসম্ভব। পাঁচজনের এই দলে বৃত্ত একাই কিশোর। বাকিরা সবাই বড়। সবাই তাকে দেখে অবাক হয়েছিল, জুড়ে দিয়েছিল নানা প্রশ্ন। তবে এখন সে এসব কিছুই ভাবছে না।
বেস ক্যাম্প পেছনে ফেলে শুরু হলো মূল অভিযান। দিনের পর দিন ওরা চলতে থাকে, চলতে থাকে, চলতেই থাকে। আর মাঝেমধ্যে যখন ওরা কোথাও বিশ্রাম নেয়, তখন বৃত্ত ব্যাগের ভেতর থেকে গল্পের বইটা বের করে। দু-এক পাতা করে পড়ে। এভাবে তারা এগোতে থাকে।
এর মধ্যে একদিন ঘটল দুর্ঘটনা। হঠাৎ শুরু হলো তীব্র তুষারপাত। আশপাশে কিচ্ছু দেখা যায় না। দাঁড়িয়ে থাকাই কঠিন। কীভাবে সময়টা কাটল, বৃত্ত জানে না। একসময় তুষারপাত শেষ হলো। চারপাশে তাকিয়ে দেখল, তার সঙ্গীরা কেউ নেই। আশ্চর্য! কোথায় হারিয়ে গেল ওরা।
বৃত্ত তবু হার মানল না। পা বাড়াল। হাঁটতে হাঁটতে শেষ স্টেশনে পৌঁছে আর পা চলছিল না। সেখানেই বৃত্ত দুই দিন বিশ্রাম নিল। এই বিশ্রামের সময়টাতে গল্পের বইটা পড়ে শেষ করে ফেলল। তারপর আবার শুরু করল অভিযান। এদিকে অক্সিজেন প্রায় ফুরিয়ে আসছে...
অবশেষে ২৬ মার্চ ২০১৮, সব বাধা তুচ্ছ করে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে দাঁড়ায় বৃত্ত। তার হাতে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। বৃত্ত জয় করেছে মাউন্ট এভারেস্ট।
পরদিন পত্রিকায় শিরোনাম হলো, ‘এক কিশোরের এভারেস্ট জয়’।

নবম শ্রেণি, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়