'আই লাভ ইউ বাবুই'

>
বাবুই
বাবুই


বাবুই
আন্দলিব রাশদী

প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল, প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, প্রকাশকাল: জানুয়ারি ২০১৮, ৯৬ পৃষ্ঠা, দাম: ২০০ টাকা।

 আন্দালিব রাশদীর বাবুই উপন্যাসের কাহিনি চলতি সামাজিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। উপন্যাসের কাহিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে প্রথম পুরুষে এর নায়িকা।

উপন্যাসটির চরিত্র অনেক। মূল ঘটনার পাশাপাশি বেশ কিছু পার্শ্ব ঘটনারও উপস্থিতি। তবে কোনো চরিত্রই প্রধান হয়ে ওঠে না একমাত্র বাবুই ও ঘটনার বর্ণনাকারী ‘আমি’ ছাড়া। উপন্যাসের শেষ বাক্যের ভেতর দিয়ে যার নাম প্রকাশিত হয়—বিবি মরিয়ম।

বাবু ভাইয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ বাবুই, বিশেষত বিবি মরিয়মের কাছে। আদর-ভালোবাসা থেকে সে তাকে এ নামে ডাকে। পাঠককে সে জানাচ্ছে, ‘আমার উচ্চারণে কোনো সমস্যা ছিল কিংবা আমি জেনেশুনেই বাবু ভাই কথাটাকে বিবৃত করে বলতাম বাবুই।’

বাবুইয়ের সঙ্গে বিবি মরিয়মের বয়সের ব্যবধান অনেক। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই-বোন। একই বাড়িতে থাকে। মরিয়মের বর্ণনায়, ‘ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের পেছনের দিকটাতে গুলকিবাড়ি রোডে আমার দাদার চৌদ্দ কাঠা জমিতে তিনি চার ছেলেকে নিজেদের ঠিকানা করে দিয়েছেন। বড় ছেলে ও ছোট ছেলেকে তিন কাঠা করে রাস্তাঘেঁষা জমি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছেলেকে চার কাঠা করে পেছন দিকে। পেছনের দুজন এক কাঠা করে বেশি জমি পাওয়ায় বরং সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁদের বাবার সুবিচারের প্রশংসা করেছেন।’ এমন যে পরিবার ও তাদের পারিবারিক অবস্থানগত পরিচিতি, সেই পরিবারে আছে নানা টানাপোড়েন, পারস্পরিক সম্পর্কগত জটিলতা, স্বার্থগত দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সর্বোপরি জীবনের প্রবহমানতা।

বিবি মরিয়ম, আগেই বলেছি, বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও বাবুইকে গভীরভাবে ভালোবাসে। গভীরভাবে অথচ সেই বাবুই সম্পর্কে চারদিকে নানা কথা প্রচারিত। যেমন ‘বাবুই একটা হারামজাদা’, ‘বাউব্যা হচ্ছে ভয়ংকর এক ক্রিমিনাল’, ‘বাবুর বগলে ইট মুখে শেখ ফরিদ’, ‘বাবুর একটা জঙ্গি কানেকশন আছে’, ‘বাবুর চরিত্র খারাপ। বাজারের মেয়েদের সঙ্গে বাবুর ওঠাবসা’ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বিবি মরিয়ম এসব কিছু বিশ্বাস করে না।

আনন্দ মোহন কলেজে অর্থনীতি নিয়ে বাবুই তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি গান করে। স্থানীয় শহরের নামকরা মঞ্চে ভালো ভালো নাটকের প্রধান সব চরিত্রে অভিনয়ও করে। অভিনেতা হিসেবে তার নামডাকও বেশ। এরই মাঝে একদিন বাবুইকে মারধর করে গুন্ডারা, তার এক নিকটাত্মীয়ের প্ররোচনায়। প্রাণে বেঁচে যায়। এই ঘটনার দিন কয়েক পর তাকে মারধর করা এক গুন্ডার মৃত্যু হলে সে জন্য সন্দেহ করা শুরু হয় বাবুইকে।

এর মধ্যে ঘটে নাটকীয় এক ঘটনা। পারিবারিক রেষারেষি ও জেদাজেদির বশে বিছানার তোশকের নিচে পিস্তল রেখে বাবুইকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়। তার চাচাতো ভাই খুকু এ কাণ্ডটি করে। মরিয়ম জানাচ্ছে, ‘বুলবুলি চাচি ও বাবুইকে বাস্তুচ্যুত করাই তাদের লক্ষ্য। তারপর দুই ভাই জমিটা ভাগাভাগি করে নিয়ে নেবেন। বাবুকে একবার লম্বা সময়ের জন্য জেলে ঢুকিয়ে দিতে পারলে কাজটা সহজ হবে।’ এই অবস্থার মুখে বাবু ভাই অর্থাৎ বাবুই পলাতক হলো।

একদিন বোরকা পরা অবস্থায় ফিরে এল সে। নিজেদের বাড়িতে। আর কারও সঙ্গে নয়, দেখা হলো বিবি মরিয়মের সঙ্গে। মরিয়ম তাকে যেতে দেয় না। তাদের বাড়ির একটা কামরায় বাবুইকে লুকিয়ে রাখে। পুলিশ আসে খানা তল্লাশি করতে। কিন্তু বাবুইকে পায় না। এর মধ্যে একদিন বাবুই মরিয়মদের ঘরে রাখা একটা জুতোর ভেতর থেকে সত্যিকার পিস্তল বের করে। অবাক হয় বিবি মরিয়ম। তার প্রেমিকা। কেন এই অস্ত্র? সে কি নিজের নিরাপত্তার জন্য? নাকি বাবুইয়ের জঙ্গি কোনো কানেকশন আছে?

অবশেষে সে ধরা পড়ে। তবে বাবুইয়ের প্রতি বিবি মরিয়মের ভালোবাসায় বিন্দুমাত্র চিড় ধরে না। মৃত মাকে দেখার জন্য জেল থেকে ছয় ঘণ্টার প্যারোলে আসা বাবুইকে সে চিঠি লেখে। সেখানে থাকে এই কথাগুলো: ‘তুমি যেদিন জেল থেকে ছাড়া পাবে, আমি জেলগেটে তোমাকে রিসিভ করব। তারপর একটা রিকশা নিয়ে সোজা কাজি অফিস। সোনা-গয়না আমার কিছু লাগবে না। দেনমোহর হবে মাত্র এক টাকা।...আই লাভ ইউ বাবুই।’

আন্দলিব রাশদীর এই উপন্যাস পড়ার পর মনে জেগে ওঠে অন্য এক অনুভূতি, এমন এক বোধ; যার সবটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!