ম্যাজিক ডিম

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

‘ওহ, সুজন। আজকেও তুমি দেরি করে এসেছ?’

‘সরি স্যার। আজও দেরি হয়ে গেল।’

‘প্রতিদিনই তো সরি বলো। কোনো দিন তোমার দেরির কারণ জানতে চাইনি। আজ কেন দেরি করেছ? বলতেই হবে।’

‘স্যার, ওটা না শোনাই ভালো।’

‘কী! তুমি আমাকে বলছ ওটা না শোনাই ভালো? প্রতিদিন দেরি করে আসো। এত দিন কিছুই বলিনি। তোমাকে ক্লাসে ঢুকতে দিয়েছি। কিন্তু আজ যদি যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে না পারো, তবে ক্লাসে ঢুকতে দেব না। মনে রেখো, আমি তোমার ক্লাস টিচার। তোমার উপস্থিতির হিসাব কিন্তু আমার কাছেই থাকে।’

‘স্যার, স্কুলে আসার ঠিক আগে আগে ঘটনাটা ঘটে গেল।’

‘কী ঘটনা?’

‘ডিমের ঘটনা।’

‘ভেঙে বলো।’

‘ডিম কেনার জন্য মা টাকা দিলেন। বললেন, এক ডজন ডিম এনে দাও তো বাবা।’

‘খুব ভালো। দোকানও নিশ্চয়ই বাসার কাছে?’

‘জি স্যার, বাসার কাছেই।’

‘তাহলে তো ডিম কিনতে বেশি সময় লাগার কথা নয়।’

‘ডিম কিনতে বেশি সময় লাগেওনি। চট করে ডিম কিনে ফেললাম। দোকানিও বেছে বেছে বড় ডিম দিয়েছেন।’

‘তাহলে দেরিটা হলো কখন?’

‘ডিম কিনে ফেরার সময়।’

‘মানে! কী বলতে চাও তুমি? ফেরার সময় কি রাস্তাটা রাবারের মতো লম্বা হয়ে গিয়েছিল?’

‘না স্যার। হাত থেকে ডিমের থলিটা পড়ে গিয়েছিল।’

‘অ্যাঁ-এ-এ-এ! তারপর?’

‘তারপরই তো ঝামেলার শুরু হলো।’

‘নিশ্চয়ই একটা ডিমও আস্ত ছিল না?’

‘জি স্যার। একটা ডিমও আস্ত ছিল না।’

‘নিশ্চয়ই সব ডিম ফেটে যাচ্ছেতাই কাণ্ড ঘটে গিয়েছিল?’

‘জি স্যার। যাচ্ছে-তাই কাণ্ডই ঘটে গিয়েছিল।’

‘এর জন্য তোমার দেরি হলো?’

‘না স্যার। দেরি হওয়ার আসল কারণ এটা নয়। আসল কারণটা তখনো শুরু হয়নি।’

‘আসল কারণটা বলো। এরপর কী হলো?’

‘এরপরই তো দেরি হওয়ার কারণটা ঘটল।’

‘আহ! কী ঘটল?’

‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা স্যার।’

‘দুঃখজনক তো হবেই। ডিম ফেটে রাস্তায় গড়াগড়ি খেলে তো দুঃখজনকই হয়।’

‘সেটা হলেও স্যার মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু সেটা হয়নি। আর সেটা হয়নি বলেই আমার দেরি হলো।’

‘কী হয়েছে?’

‘বললে বিশ্বাস করবেন তো?’

‘না বললে কী করে বুঝব—কথাটা বিশ্বাসযোগ্য নাকি অবিশ্বাস্য?’

‘অবিশ্বাস করলে বলব না স্যার।’

‘আহা! অবিশ্বাস করার কথা কে বলল? আমি তো বলিনি যে অবিশ্বাসই করব। বিশ্বাসও তো করতে পারি।’

‘বিশ্বাস করলেই বলতে পারি স্যার। নইলে বলব না।’

‘আহ হা! বলেই ফেলো। এত ভণিতা করছ কেন?’

‘ভয়ে আছি স্যার। যদি অবিশ্বাস করেন?’

‘আচ্ছা, বিশ্বাস করব। বলো ঘটনা কী হয়েছে?’

‘হাত থেকে তো ডিমের থলিটা পড়ে গেল। আর সব ডিম ফেটে গেল। কিন্তু একটা ডিমও ভাঙল না।’

‘কী বলছ! নিশ্চয়ই খুব নিচ থেকে পড়েছে। তাই ভাঙেনি। নয়তো বালুর ওপর পড়েছে। এখন তো অলিতে-গলিতে বালু পড়ে থাকতে দেখি। জায়গায় জায়গায় কনস্ট্রাকশনের কাজ চলতে দেখি।’

‘উঁহু। সেসব কিছুই নয় স্যার। বেশ ওপর থেকেই পড়েছে। পড়েছেও খটখটে রাস্তার ওপর। তবে সব ডিম ফেটে গেছে ঠিকই। কিন্তু কোনো ডিম ভাঙেনি।’

‘সেটা কী করে সম্ভব? এ অসম্ভব। একেবারেই অসম্ভব! তুমি বানিয়ে বলছ। আচ্ছা যা-ই হোক। এর সঙ্গে তোমার দেরি হওয়ার সম্পর্ক কোথায়?’

‘ঘটনা তো স্যার শেষ হয়নি। ডিমগুলো সব ফেটেছে কিন্তু কেন ভাঙেনি জানেন?’

‘জানি না। কেন ভাঙেনি?’

‘কারণ সবগুলো ডিম ফেটে ছানা বেরিয়েছিল।’

‘কী!’

‘জি স্যার। তাহলে আর বলছি কী? ওই ছানাগুলোই তো দেরি করিয়ে দিল। ছানাগুলো এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করল। এক ডজন ছানা। টাকা দিয়ে কিনেছি স্যার। ওভাবে রাস্তায় ফেলে রেখে আসাটা কি ঠিক হতো? তাই ধরার জন্য ওদের পেছনে ছুটতে লাগলাম। ছুটতে ছুটতেই সময় চলে গেল। ওদিকে স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। সময়ও নেই। তাই সবগুলো ছানা ধরতে পারিনি।’

‘কী বলছ তুমি! এ মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। নিশ্চয়ই তুমি বানিয়ে বানিয়ে বলছ?’

‘স্যার, বানিয়ে বলি আর যেভাবেই বলি—মুরগির ছানাগুলোর জন্যই আমার দেরি হয়েছে। এটা কিন্তু সত্যি!’