ভালো খেলা, মন্দ খেলা

অলংকরণ: আরাফাত করিম
অলংকরণ: আরাফাত করিম

বিশ্বকাপজয়ী স্পেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অবিস্মরণীয় জয়ের পর কেউ কেউ আমাকে বলেছেন, রাশিয়া জিতেছে বটে, কিন্তু ভালো খেলে জেতেনি। তার মানে ভালো খেলে স্পেন হেরেছে।
ভালো খেলে হারার চেয়ে ভালো না খেলে যদি জেতা যায়, তবে ভালো না খেলাই ভালো।
দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তবে তো দাগই ভালো।
আমি চাই সামনে যে তিনটি খেলা এখনো বাকি আছে, সেই খেলাগুলোও রাশিয়া ভালো না খেলেই জিতুক।
জয়টাই বড় কথা।
নোবেল পুরস্কার জয়ের মতো ফুটবলের বা অন্য বেশ কিছু খেলার জয় অতটা নির্দোষ জয় নয়। এখানে খেলার ভেতরে আরও খেলা থাকে। এখানে রক্ত ঝরে, পা-হাত ভাঙে। এমনকি মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনাও ঘটে।
খেলার দর্শন যুদ্ধবৎ না হলেও তারই কাছাকাছি—মারো অরি যেকোনো কৌশলে।
রাশিয়ার জয়ের ঘৃতে তোমার কণ্টক সন্ধানের কারণ ভিন্ন বলেই আমার মনে হলো।
আজকের স্পেনের মতো ভালো খেলে, প্রতিপক্ষের কাছে হেরে গিয়ে রাশিয়াকে যেন কাঁদতে না হয়।
যেন বলতে না হয়, দিন শেষে বুঝি ছাই হলো সবই হুতাশে।
আমি রাশিয়ার নুন একটু বেশি খেয়েছি বলে, রাশিয়ার গুণ একটু বেশি গাইছি।
তাই রাশিয়ার খারাপ খেলাটা আমার চোখে লাগেনি।

দুই.
পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে এই একটি খেলাই—ফুটবল। আহা!
‘এ কী বস্তু ভগবান, বিশ্বেরে করিলা দান,
দেখিয়াও পরান জুড়ায়।’
টেনিস (লং টেনিস ও টেবিল টেনিস), বাস্কেট, হকি বা ক্রিকেট—সব খেলাতেই ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির বল ব্যবহৃত হয়।
বল হলো ভূমণ্ডলের প্রতীক।
‘খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে, বিরাট শিশু আনমনে।’—লিখেছেন নজরুল।
টেনিস, বাস্কেটবল তোমার ভালো লাগে, অথচ ফুটবল তোমার প্রিয় খেলা নয়। কেন নয়, এটা তোমার জানা দরকার।
টেনিস একক এবং দ্বৈত, কিন্তু বাস্কেটবলে তো পাঁচ-সাতজন করে থাকে প্রতি দলে এবং ফুটবলের মতো ওই খেলায় খেলোয়াড়দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও চলে বেশ।
আমার মনে হচ্ছে, সবাই যে খেলাটা জানে, বোঝে, সেই সহজের সঙ্গেই তোমার একটা গোপন দ্বন্দ্ব কাজ করে।
রবীন্দ্রনাথ খেলাধুলার আনন্দবঞ্চিত জীবন কাটিয়েছেন, তাঁর ছেলেবেলা বইয়ে ফুটবলকে
তিনি সাগরপাড়ের ‘লম্ফঝম্প’ বলে বিদ্রূপ করেছেন।
তোমার ওপর কবিগুরুর চিন্তার প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয়।
তুমি ফুটবলের, বিশেষ করে বিশ্বকাপ ফুটবলের আনন্দলোকে নিজেকে যুক্ত করো, এটাই আমি চাই।
ছোটবেলায় আমি আমার কন্যাকে স্টেডিয়ামে নিয়ে যেতাম ক্রিকেট খেলা দেখতে।
তোমার বেলায় তেমনটি হয়নি বলেই, তুমি টেনিস বা বাস্কেটবল খেলা দেখো, কিন্তু ফুটবল, ক্রিকেটে তোমার মন বসে না।
৫০ হাজার থেকে ১ লাখ দর্শকের মধ্যে মাঠে বসে খেলা দেখার একটা আলাদা মজা আছে, তুমি সেই মজাটা পাওনি।
পেলে বুঝতে, কী এক আনন্দজগৎ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছ তুমি।
ম্যাক্সকে নিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের বাকি খেলাগুলো দেখো। ফ্রান্স তো ভালো করছে।

তিন.
ধন্যবাদ শুভ্রা, রাশিয়ার জয়রথ এগিয়ে চলেছে। রাশিয়ার পাশে থাকো, আনন্দ পাবে।
আমাদের বিশ্বজয়ের বাসনা রাশিয়ার মধ্য দিয়ে পূর্ণ হবে। রাশিয়া বড় বাধাটা অতিক্রম করেছে গতকাল।
স্পেনের চেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রাশিয়ার সামনে আর নেই বলেই মনে হয়।

নয়াগাঁও, ২ জুলাই ২০১৮