জাপানে বাংলার মুখ

বাংলাদেশ শিল্প কর্মশালা’র প্রবেশপথ
বাংলাদেশ শিল্প কর্মশালা’র প্রবেশপথ

বিদেশে বাংলাদেশকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে নানা ধরনের যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন দেশে করা হচ্ছে, তার অধিকাংশই আমাদের সংগীত ও নৃত্যকলার সঙ্গে সম্পর্কিত। এসব অনুষ্ঠানের বেশির ভাগ আবার প্রবাসীদের মনোরঞ্জন আর বিনোদনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত হওয়ায় সেগুলোকে ঠিক বিদেশে বাংলাদেশকে তুলে ধরার ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা যায় না। তাই মাটি, কাঠ, বাঁশ, সুতা আর পিতল-কাঁসা দিয়ে তৈরি নানা উপকরণের মতো আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের যে অংশটি লোকজ ধারার সঙ্গে সম্পর্কিত; বিদেশে উপস্থাপনার বেলায় তা অনেকটাই যেন উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সেদিক থেকে সত্যিকার অর্থে ব্যতিক্রমী ও ভিন্নধর্মী এক আয়োজন কিছুদিন আগে পর্যন্ত বসেছিল জাপানের শিকোকু দ্বীপের কাগাওয়া জেলার তাকামাৎসু শহরে। ছয় সপ্তাহ ধরে চলা বাংলাদেশের লোকশিল্পের নানা দিক জাপানের দর্শকদের সামনে তুলে ধরার বিশেষ সেই প্রদর্শনী ১ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে এবং মাসাধিক কাল ধরে বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কাটানোর পর এতে যোগ দেওয়া চারু, দারু, কারু ও মৃৎশিল্পের কারিগরেরা ইতিমধ্যে দেশে ফিরে গেছেন। ছয় সপ্তাহের সেই আয়োজনে বাংলাদেশের লোকজশিল্পকেই কেবল তাঁরা তুলে ধরেননি, সেই সঙ্গে তাঁদের দক্ষ হাতের ব্যবহার কীভাবে নানা রকম সামগ্রীকে পণ্যের আকার দিয়ে থাকে, সেটাও তাঁরা দর্শকদের দেখিয়েছেন। ফলে তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সেই আয়োজনে সত্যিকার অর্থে যেন উঠেছিল বাংলার মুখ, জাপানের দর্শকেরা যার মধ্য দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও ভালোভাবে বুঝে উঠতে পেরেছেন।

নিজের আঁকা ছবির সামনে রিকশা পেইন্টার সৈয়দ আহমদ হোসেন
নিজের আঁকা ছবির সামনে রিকশা পেইন্টার সৈয়দ আহমদ হোসেন

 কাগাওয়া জেলার ওই আয়োজন ছিল প্রতি তিন বছরে একবার জাপানের সেই জেলায় আয়োজিত সেতো-উচি শিল্পকলা উৎসবের অংশবিশেষ। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো এই ত্রিবার্ষিক আয়োজনের সূচনা এবং এ বছর ছিল এটির দ্বিতীয় আয়োজন, যার বড় একটা অংশজুড়ে ছিল বাংলাদেশের শিল্পকলা আর লোকজ সংস্কৃতি তুলে ধরার বিশেষ সেই ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা।

কুমারের চাকি ঘুরিয়ে মাটির দলা দিয়ে পাত্র তৈরি করছেন মৃত্যুঞ্জয় পাল
কুমারের চাকি ঘুরিয়ে মাটির দলা দিয়ে পাত্র তৈরি করছেন মৃত্যুঞ্জয় পাল

ছয় সপ্তাহের আয়োজনে বাংলাদেশের যে তিনটি দিকের ওপর আলোকপাত করা হয় তা হলো সমকালীন চারুকলা, নৃত্য ও সংগীত এবং লোকজ ধারার শিল্পকলা। সমকালীন চারুকলা অংশে বাংলাদেশের নেতৃত্বস্থানীয় শিল্পীদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী চলে তাকামাৎসু শহরের নগর শিল্পকলা জাদুঘরে, যে প্রদর্শনী তাকামাৎসুর উৎসবের শেষে চলতি মাসের শেষ দিকে টোকিওতে আসবে। দ্বিতীয় অংশে বাংলাদেশের নেতৃত্বস্থানীয় সংগীত আর নৃত্যশিল্পীদের কয়েকটি দল পালাক্রমে তাকামাৎসু সফরে এসে জাপানি দর্শকদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তবে জাপানি দর্শকদের কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল লোকজ ধারার শিল্পীদের নিজেদের দক্ষতা তুলে ধরার জন্য আয়োজিত ব্যবস্থা, যার নামকরণ করা হয়েছিল ‘বাংলাদেশ শিল্প কর্মশালা’। দৈনন্দিন জীবনে শিল্পকলার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্য ও পেশার প্রয়োগগত ব্যবহার এবং এর সঙ্গে যুক্ত পেশাজীবীদের দক্ষতা জাপানি দর্শকদের সামনে তুলে ধরা ছিল সেই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য এবং সমুদ্রতীরের কাছাকাছি এক খোলা চত্বরে এ উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছিল একাধিক স্টল, যার প্রতিটি বরাদ্দ করা হয় বিভিন্ন পেশার অংশগ্রহণকারীদের।

হেনা শিল্পী নিলুফার বেগম জাপানি মহিলা মোয়ে ইয়েজাকির হাতে এঁকে দিচ্ছেন হেনার নকশা
হেনা শিল্পী নিলুফার বেগম জাপানি মহিলা মোয়ে ইয়েজাকির হাতে এঁকে দিচ্ছেন হেনার নকশা

তাকামাৎসুতে বাংলাদেশের সেই শিল্প কর্মশালা ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা পাঠকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে সচিত্র এই প্রতিবেদন। প্রদর্শনীর প্রবেশপথেই রাখা ছিল বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা কয়েকটি রিকশা। জাপানের উৎসাহী দর্শকেরা যেন রিকশা দেখার পাশাপাশি সেগুলো চালানোর চেষ্টাও করে দেখতে পারেন, সে জন্য তাঁদের সাহায্য করতে জাপানি কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই স্বেচ্ছাসেবীরা হচ্ছেন বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন শেষ করে জাপানে ফিরে আসা জাপান সরকারের পাঠানো তরুণ স্বেচ্ছাসেবী বিশেষজ্ঞ। ফলে বাংলাদেশের জীবনধারার সঙ্গে সার্বিকভাবে এঁরা পরিচিত। রিকশা যেন নবীন চালকের হাত ফসকে পথের মাঝখানে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটাতে পারে, স্বেচ্ছাসেবীরা সেদিকে নজর রাখছিলেন। প্রবেশপথের যে জায়গায় রিকশাগুলো রাখা ছিল, তার পাশেই ছিল ঢাকা থেকে আসা দুই রিকশা পেইন্টার সৈয়দ আহমদ হোসেইন ও রফিকুল ইসলামের স্টল। রিকশার পেছনে টিনের যেসব ছবির প্লেট যুক্ত থাকে, সে রকম প্লেটে তাঁরা দর্শকদের সামনে এঁকেছেন নানা রকম ছবি। সৈয়দ আহমদ হোসেইন অবশ্য কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে জানালেন, পেইন্টিংয়ের বাইরে রিকশার সাজসজ্জার কাজও সেখানে তাঁদের করতে হয়েছে। তাঁর মতে, সেই কাজ রিকশা পেইন্টাররা করেন না, বরং সিট ও অন্যান্য সাজসজ্জার সেলাইয়ের কাজের মিস্ত্রিদের কাজ হচ্ছে সেটা। তবে সেই সামান্য ত্রুটি সত্ত্বেও জাপানে অবস্থান করা নিয়ে সার্বিকভাবে তিনি পরিতৃপ্ত।

বাহুতে হেনার নকশা এঁকে নিতে পেরে আনন্দিত আরেক জাপানি তরুণী
বাহুতে হেনার নকশা এঁকে নিতে পেরে আনন্দিত আরেক জাপানি তরুণী

বিশেষভাবে জাপানি দর্শকদের মুগ্ধ হয়ে ছবি আঁকা, দেখা আর সেসব ছবির প্রশংসা করা তাঁকে তৃপ্তি দিয়েছে। রিকশার একটু দূরেই নিজেদের স্টলে কাজে ব্যস্ত ছিলেন জামদানি শাড়ির কারিগর মোহাম্মদ আমিনুল হক, জামাল ও আবুল খয়ের। এক মাসের মধ্যে পুরো একটি শাড়ি তৈরির কাজ শেষ করার ব্রত নিয়ে তাঁত চালাচ্ছিলেন তাঁরা।

ছবি আঁকায় ব্যস্ত পটুয়া শম্ভু আচার্য
ছবি আঁকায় ব্যস্ত পটুয়া শম্ভু আচার্য

তিনজনই এসেছেন রূপগঞ্জ থেকে। তাঁদের পাশেই স্টল নিয়ে বসেছেন বাঁশি, একতারা আর ঢোল তৈরির কারুশিল্পীরা। কুষ্টিয়ার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম একতারা আর দোতারা বানানোয় ব্যস্ত থাকার মুখে ঢোলের কারিগর শিবনাথ শিবু উৎসাহী জাপানি দর্শকদের শিখিয়ে দিচ্ছিলেন ঢোল বাজানোর কৌশল। আর এঁদের স্টলের উল্টো দিকে স্টলের বরাদ্দ পেয়েছেন চার চাকমা বস্ত্রশিল্পী নীতু চাকমা, রিটন চাকমা, কণিকা চাকমা ও দানরাম ম্র। চাকমাদের ব্যবহারের বাহারি রঙের বস্ত্র তাঁরা দর্শকদের সামনে বুনছিলেন। তাঁরা সবাই একবাক্যে জাপানিদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উৎসাহ আর আন্তরিকতা নিয়ে কাজ দেখা এবং সেসব কাজের মূল্যায়ন করায় জাপানিদের মধ্যে কোনো ধরনের কার্পণ্য একেবারেই দেখা যায় না, যা বাংলাদেশ থেকে আসা লোকজ ধারার কারুশিল্পীদের মুগ্ধ করেছে। মূল স্টলগুলো থেকে একটু দূরে রাস্তার পাশে বেশ বড় আকারের একটি নৌকা তৈরিতে নিয়োজিত থাকতে দেখা গেল নৌকা তৈরির দুই কারিগর ভজন সূত্রধর ও আবদুল হালিমকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নৌকা তৈরি শেষ করে জাপানের সাগরে তাঁরা সেটা ভাসিয়েছেন।

যে কয়েকটি স্টলে দর্শকদের ভিড় একটু বেশি লক্ষ করা গেছে, সে রকম দুটি স্টল হচ্ছে নকশিকাঁথা তৈরিতে নিয়োজিত রুনা বেগম এবং টাইগার আর্টিস্ট নাজির হোসেনের স্টল। নাজির হোসেন আঁকেন বাঘের ছবি। বাঘকে তিনি বাংলার প্রতীক হিসেবে মনে করেন। তাঁর সব ছবিতেই কোনো না কোনোভাবে বাঘের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সেতোউচি উৎসবে যোগ দিতে এসে জাপানি দর্শকদের সঙ্গে মিলে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসও সেখানে তিনি পালন করেছেন।

নিজের স্টলে বাঘের ছবি আঁকার শিল্পী নাজির হোসেন
নিজের স্টলে বাঘের ছবি আঁকার শিল্পী নাজির হোসেন

হেনা শিল্পী নিলুফার বেগমকে দেখা গেল জাপানি রমণীর হাতে হেনার নকশা আঁকার কাজে গভীরভাবে মগ্ন থাকতে।

সিনেমার পোস্টার আঁকছেন সীতেষ কুমার সুর
সিনেমার পোস্টার আঁকছেন সীতেষ কুমার সুর

প্রতিদিন কয়েকজন জাপানি আসছেন তাঁর কাছে হাতে নকশা এঁকে নেওয়ার জন্য এবং মনের আনন্দে তা তিনি এঁকে দিচ্ছেন। নিলুফার বেগম জানালেন, জাপানিদের আনন্দিত হতে দেখে তিনি নিজেও আনন্দ অনুভব করছেন। আর যে জাপানি মহিলার হাতে হেনার নকশা তিনি আঁকছিলেন, সেই মহিলা হলেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক মোয়ে ইয়েজাকি। তিনি বললেন, হেনার নকশা হাতে এঁকে নেওয়ার সেই প্রক্রিয়া তাঁর কাছে খুব মজার মনে হচ্ছে।অন্য এক স্টলে শিকার হাঁড়ি আর লক্ষ্মীসরা তৈরির দক্ষতা দেখাচ্ছিলেন রাজশাহী থেকে আসা পিতা-পুত্র সুশান্ত কুমার পাল ও মৃত্যুঞ্জয় পাল। কুমারের চাকি ঘুরানোর দক্ষতা থেকে শুরু করে হাঁড়ি আর সরায় রংতুলির প্রলেপ দিয়ে বাহারি ছবি আঁকা, সবটাই তাঁরা স্টলে বসে করছেন। পিতা-পুত্র দুজনেই জানালেন, এই অভিজ্ঞতা তাঁদের জন্য অভাবনীয়। বিদেশে কখনো যেতে পারবেন, সে কথা কখনো তাঁরা ভাবেননি। তাই মনের আনন্দে কাজ করে চলেছেন জাপানি দর্শকদের আনন্দ দিতে। মাটির তৈরি পটে ছবি আঁকার শিল্পী শম্ভু আচার্য তাঁর অপরূপ সব ছবির ঢালি খুলে বসেছিলেন নিজের স্টলে। ঢাকার বিক্রমপুরের এই পটুয়ার কাজ চোখে পড়ার মতো। রং, তুলি—সবই তিনি নিজে তৈরি করে নেন এবং তাঁর সব ছবিতে এক চোখের মানুষের উপস্থিতি দর্শকদের অবাক করে দেয়। উৎসবে অবশ্য জাপানি উদ্যোক্তাদের সরবরাহ করা রং দিয়ে কিছু ছবি তাঁকে আঁকতে হয়েছে, যাতে তিনি একেবারেই তৃপ্ত নন। কেননা শম্ভু আচার্য মনে করেন, যেসব ছবি তিনি আঁকেন, কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হলে ছবির আসল সৌন্দর্য এর মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে না।

উৎসাহী জাপানি দর্শককে ঢোল বাজানোর কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছেন শিবনাথ শিবু
উৎসাহী জাপানি দর্শককে ঢোল বাজানোর কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছেন শিবনাথ শিবু

তিনি জানালেন, জাপানে আসতে পারার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। আর পটুয়ার পাশেই ছিল ছায়াছবির পোস্টার আঁকার শিল্পী সীতেষ কুমার সুরের স্টল। বেশ কয়েকটি পোস্টার ওই সময়ের মধ্যে তিনি এঁকেছেন। বড় আকারের এক ছবিতে সিনেমার নাম তিনি দিয়েছেন ‘নষ্ট মাথা’, পিস্তল হাতে নষ্ট মাথার ভিলেন যেখানে সরাসরি তাকিয়ে দর্শকদের দিকে। ‘মাতৃস্নেহ’ নামে কল্পনার ছায়াছবির অন্য এক পোস্টারে জাপানি মা ও সন্তানের ছবি তিনি এঁকেছেন।

চাকমা বস্ত্র বুননে ব্যস্ত নীতু চাকমা
চাকমা বস্ত্র বুননে ব্যস্ত নীতু চাকমা

বোঝা গেল, জাপানি দর্শকদের মনোরঞ্জনে তাঁর সেই প্রয়াস। আর এর ঠিক অল্প দূরে ট্রাক পেইন্টার দেবু আচার্যকে ট্রাকের বদলে দেওয়া হয়েছে একটি বাস, যেখানে তিনি সারা মাস ধরে কয়েকটি বড় আকারের ছবি আঁকা শেষ করেছেন। পিতলের নানা রকম পাত্র ও ঘর সাজানোর জিনিসপত্র তৈরির দক্ষতা দেখাচ্ছিলেন ঢাকার অদূরে ধামরাই থেকে আসা কারিগর বাবুল আখতার চৌধুরী। তিনি অবশ্য বললেন, পিতল যে ঠিক কী, সেই ব্যাখ্যা জাপানিদের কাছে দেওয়া ছিল বেশ কষ্টকর। জাপানে পিতলের প্রচলন নেই এবং বাংলাদেশেও এর ব্যবহার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে নিজের পেশার ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

দোতারা তৈরি করছেন মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম
দোতারা তৈরি করছেন মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম

এক দিনের প্রদর্শনী দেখায় সবার সঙ্গে আলাপ করা সম্ভব না হলেও যে ধারণা এঁদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে তা হলো, জাপানে আসার সুযোগ পেয়ে সবাই আনন্দিত। সবাই চাইছেন তাঁদের তৈরি বিভিন্ন পণ্য যেন জাপানে স্থায়ীভাবে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা যায়, সেই সম্ভাবনা যেন সরকার পরীক্ষা করে দেখে। বাংলাদেশ থেকে আসা সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মীর জহিরুল ইসলাম আশ্বাস দিলেন, সেতোউচি ত্রিবার্ষিক উৎসবে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি কারুপণ্যের জাপানের বাজারে প্রবেশের যে সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যেন তা যাচাই করে দেখে, সে রকম সুপারিশ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় করবে। আর কারুশিল্পীদের স্টল যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে তৈরি করা হয়েছিল উন্মুক্ত এক মঞ্চ, বাংলাদেশের শিল্পীরা পুরো ছয় সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন যেখানে নাচ-গানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানপর্বে যোগ দিয়েছেন। পালাক্রমে ১০ দিনের জন্য আসা সেই শিল্পীদের দলে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, পল্লিগীতি, লালনগীতির শিল্পীদের পাশাপাশি দেশের প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পীরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কারুশিল্পীদের তাকামাৎসু শহরে ছয় সপ্তাহ ধরে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে জাপানের যে বেসরকারি সংগঠন সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছে, তা হচ্ছে ওসিকা (OISICA), বাংলাদেশে যারা কৃষি খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে কয়েক দশক ধরে যুক্ত আছে।
সংগঠনের বর্তমান মহাসচিব আশির দশকের প্রথমার্ধে বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশে ছিলেন এবং সেই সূত্রে বাংলাদেশের জন্য তাঁর বিশেষ দরদ। ফলেতাকামাৎসু নগর প্রশাসন বাংলাদেশের কারুশিল্পীদের থাকার ব্যবস্থা নিয়ে ওসিকার শরণাপন্ন হলে দেরি না করে সেই ব্যবস্থা মহাসচিব করে দিয়েছিলেন এবং অতিথিদের সার্বক্ষণিক দেখাশোনার দায়িত্ব  পালনের জন্য বাংলাদেশ থেকে সংগঠনের কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহিমউল্লাহকে নিয়ে এসেছিলেন। কারুশিল্পীরা উঠেছিলেন তাকামাৎসু শহরের অদূরের গ্রাম আইয়া-উতা গুনে ওসিকা প্রশিক্ষণকেন্দ্রের হোস্টেলে ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন��। আর সেই কাজে সক্রিয় সহযোগিতার হাত যিনি প্রসারিত করেছিলেন, তিনি হলেন টোকিওর বাংলাদেশি হালাল ফুড ব্যবসায়ী বাদল চাকলাদার। ফলে দেশের সেই দক্ষ পাচকদের তৈরি করা রান্না খেয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথিদের কোনো �অসুবিধায় একদমই পড়তে হয়নি।