রবীন্দ্রনাথ গদ্যকবিতার কারুকাজ বুঝতে পারেননি

আবুল হোসেন (১৫ আগস্ট ১৯২২—২৯ জুন ২০১৪)। ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম
আবুল হোসেন (১৫ আগস্ট ১৯২২—২৯ জুন ২০১৪)। ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম
১৯৪০–এর দশকের আধুনিক মুসলমান কবিদের প্রথম প্রজন্মের একজন আবুল হোসেন। তিরিশের কবিকুলকে দেখেছেন কাছে থেকে। তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে ২০১১ সালের ১৪ জুলাই তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে নেওয়া এই অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকারে নানা কিছুর সঙ্গে উঠে এসেছে কবিতা নিয়ে কবির নিজের ভাবনাও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাসির আলী মামুন

নাসির আলী মামুন: আপনি যখন লিখতে শুরু করেছিলেন, বাংলা ভাষায় তখন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশ এবং আরও অনেকে জীবিত। তাঁদের বিশালত্বের ছায়ায় নিজেকে আপনার অসহায় মনে হয়নি?

আবুল হোসেন: হয়নি। নিজেকে একা মনে হয়নি। তখন পূর্বসূরিদের উপেক্ষা করার একটা সরব আয়োজন চলছিল। বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দের মতো আধুনিক কবিরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধারা থেকে বেরিয়ে আসছেন। তাঁরা সকলেই আধুনিক বোধসম্পন্ন কবি। তাঁরা রবীন্দ্রনাথ যেমন পাঠ করতেন, পাশ্চাত্যের প্রায় সব ধরনের সাহিত্য একই সঙ্গে শুধু পাঠ করতেন না—অনুবাদও করেছেন। পশ্চিমের কবিদের লেখা থেকে অত সুন্দর অনুবাদ এখন পর্যন্ত করা যায়নি। তাঁদের অনুবাদের প্রশংসা রবীন্দ্রনাথও করে গেছেন। মজার ব্যাপার হলো, অমিয় চক্রবর্তী নিজেও রবীন্দ্রনাথের মতন করে লিখতেন না। তিনি রবীন্দ্রনাথকে তাঁর সমসাময়িকদের লেখা পড়তে দিতেন। যাতে তিনি নতুন এই কবিগোষ্ঠীর লেখা বুঝতে পারেন।
মামুন: আপনার কি মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক কবিদের লেখা বুঝতেন?
আবুল: আমার বিশ্বাস, তিনি বুঝতেন। তিনি আধুনিক কবিতা বুঝতে পারেননি—এটা আমার বিশ্বাস হয় না। তবে মন্তব্য করেছেন। খুব প্রশংসা করেননি। তিনি—রবীন্দ্রনাথ তো রক্তমাংসের মানুষ, নতুনদের কবিতা দেখে তাঁর যতটা আক্ষেপ ছিল, চিন্তাও কিছুটা ছিল বলে আমার অনুমান হয়। কারণ, তাঁর ছায়া থেকে নতুন প্রজন্মের কবিরা যে বেরিয়ে যাচ্ছেন—এটা নিশ্চয় তাঁর ভালো লাগেনি! কখনো তিনি আশাহত হয়েছেন। শুধু গদ্যে কবিতা লিখিত হবে, এটা তিনি মানতে পারতেন না। তাঁর স্টাইল ছিল এক রকম আর আমাদেরটা সম্পূর্ণ অন্য এক মেজাজের। সুতরাং তিনি আধুনিক কবিদের গদ্যকবিতার কারুকাজ বুঝতে পারেননি। সম্পূর্ণ মেনে নিতে পারেননি। এসব লিখেছেন নিজেই।
মামুন: এটি কি রবীন্দ্রনাথের ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতা, নাকি আধুনিক কবিতার প্রতি উপেক্ষা?
আবুল: শুরু থেকেই তিনি বাংলা ভাষায় নতুন এক যুগ প্রবর্তন করলেন। সেটা এককভাবে বহুকাল বাংলা সাহিত্যে নয়, বিশ্বসাহিত্যেও উঁচু আসন করে নিয়েছিল। পশ্চিমারা তাঁকে গ্রহণ করেছিল। প্রায় সব ভাষায় রবীন্দ্রনাথ অনুবাদ হয়েছে, তিনিও হয়েছেন পাঠকদের আগ্রহের কবি। তিনি আধুনিক কবিতা উপেক্ষা করেছিলেন—এ কথা আমি বলতে পারব না। আমার অনুমান, পুরোটা তিনি বুঝতে পারেননি।
মামুন: তিনি যদি আরও কিছুকাল বেঁচে যেতেন, তাহলে কি আপনাদের বুঝতে পারতেন?
আবুল: সেটা বোধ হয় সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে।
মামুন: গত শতকের তিরিশ ও চল্লিশের দশকের কবিরা—আপনারা কি রবীন্দ্রনাথকে পুরোপুরি বুঝতে চেয়েছিলেন?
আবুল: হ্যাঁ, বুঝেছিলাম। তিনি তো আমাদের সবার মাথার ওপরে আর কি। আমরা তাঁর স্নেহের ছায়ায়। অমিয় চক্রবর্তীর বই নিয়ে তিনি প্রবাসীতে লিখেছিলেন, প্রশংসা করেছিলেন। উদার হলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক কবিদের লেখার অন্তর্নিহিত স্বরূপকে অনুধাবন করতে পারেননি—এটা যেমন সত্য, একইভাবে সত্য যে আধুনিক কবিকুলের লেখা নিয়ে তিনি কোনো বিরূপ সমালোচনাও করেননি। আমরা তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান করেছি। আমি তিন-চারবার সাক্ষাৎ করেছি তাঁর সঙ্গে। সব লিখেছি, আমার বইতে আছে।
মামুন: কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেও তো অনেক কাজ হয়েছে।
আবুল: ওরা একটা গোষ্ঠী ছিল। শনিবারের চিঠি...এখন ওই গোষ্ঠীর সব নাম মনে করতে পারছি না। তাদের পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথকে শূলের ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে, এমন একটি ছবি প্রচ্ছদে দেখেছিলাম মনে পড়ে। কবি মর্মাহত হয়েছিলেন। ওরাই তাঁর মৃত্যুর অনেক পর ১৯৬১ সালে সাড়ম্বরে কবির জন্মশততমবার্ষিকী পালন করে। তারা যে ভুল করেছিল, রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতা করে সেটিও তারা ফিরিয়ে নিয়েছিল। সজনীকান্ত একেবারে আদাজল খেয়ে লেগেছিলেন রবীন্দ্র-বিরোধিতায়। তারা নিয়মিত বৈঠক করত, যেখানে বুঝেশুনে কবির শুধু বিরোধিতাই করা হতো না, তাঁর বিরুদ্ধে লিখে বিরূপ সমালোচনাও করা হতো।
মামুন: এসব কি তৎকালীন আধুনিক কবিরা সমর্থন করতেন?
আবুল: কেউ কেউ করতেন। তাঁদের দু-একজন ছিলেন, যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে বড় কবি বলে মানতে চাইতেন না। তখন কলকাতার কিছু তরুণ বোদলেয়ারের মতো লিখতে চাইতেন, কিন্তু স্বদেশের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো নয়।
মামুন: কবির কাছে কি এসব তুচ্ছ খবর পৌঁছাত?
আবুল: তুচ্ছ খবর কানে এলে তিনি আক্রান্ত বোধ করতেন এবং দুঃখ পেতেন। সব খবরই তাঁকে দেওয়া হতো। তিনি ছিলেন ঋষিতুল্য একজন বড় প্রতিভা। তারপরও কখনো কখনো একেবারে সাধারণ হয়ে উঠতেন। নিন্দুকদের কথা কানে এলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন—এমনও হয়েছে।
মামুন: ওই সময় কলকাতায় মুসলমান লেখকেরা কি তাঁর পক্ষে কথা বলেছেন?
আবুল: আজাদ গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে কাজ করত। রবীন্দ্রনাথ কয়েকবার সজনীকান্ত, মোহিতলাল মজুমদার, কাজী নজরুল ইসলাম, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখের প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন।
মামুন: নজরুল তো রবীন্দ্র-ভক্ত ছিলেন?
আবুল: বরাবর তাঁর ভক্তি ছিল। তিনি কখনো তাঁকে কটাক্ষ করে কিছু লিখেননি। নজরুল যে তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন, এটা কবি জানতেন। তাঁদের দুজনের দ্বন্দ্ব লাগানোর জন্য মুসলমান লেখকদের কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন।
মামুন: তাঁরা কারা?
আবুল: আগে বলে নিই, সেটা ছিল একধরনের হঠকারিতা। এ মুহূর্তে নাম আসছে না আমার মনে। তাঁরা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে ভাগ করে রাখতেন। তাঁরা মনে করতেন, রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করলে অন্তত মুসলমানদের মধ্যে নজরুল বড় কবি হয়ে বেঁচে থাকবেন। তা ছাড়া রাজনীতি-সচেতন শিক্ষিত মুসলমানেরা নজরুলকে বেশি পছন্দ করতেন।
মামুন: আপনি কোন দলে ছিলেন?
আবুল: আমি বরাবরই রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা করে তাঁকে বড় কবি হিসেবে মেনে এসেছি। তিনি বাংলা ভাষার প্রধান কবি। আধুনিকতার পথে প্রথম হেঁটেছেন রবীন্দ্রনাথ।
মামুন: আপনারা তাহলে কী করেছেন?

কবি যখন চিত্রকর। ছবি: নাসির অালী মামুন, ফটোজিয়াম
কবি যখন চিত্রকর। ছবি: নাসির অালী মামুন, ফটোজিয়াম

আবুল: আমরাও আধুনিক কবি। কিন্তু আঙ্গিকে, মননে ও ভাষা ব্যবহারে তাঁর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।
মামুন: সে সময়ে বাংলা কবিতায় সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কবি কারা ছিলেন?
আবুল: জীবনানন্দ দাশ ও জসীমউদ্দীন। তাঁরা কারও সাথে ছিলেন না। জীবনানন্দ দাশকে কেউ বুঝতে পারেনি। জসীমউদ্দীন পূর্ব বাংলায় পরে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। ঠাকুরবাড়িতে তাঁর যাতায়াত ছিল। রবি ঠাকুরের পরিবার তাঁকে পছন্দ করত।
মামুন: তারপরও রবীন্দ্রনাথ তাঁর অনুরোধ রাখেননি। তাঁর বইয়ের ভূমিকা লিখে দেননি।
আবুল: তা হয়েছে। তিনি হয়তো ভেবেছেন, এখনই ভূমিকা লেখা ঠিক হবে না। আরও কিছুকাল লিখুক, এ-ও হতে পারে।
মামুন: জসীমউদ্দীনের সঙ্গে নজরুলেরও যোগাযোগ ছিল। তিনি তাঁর কাছে কখনো ভূমিকা চাইতে গেলেন না কেন?
আবুল: রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে লেখালে তাঁর বই বহুল প্রচারিত হবে, এটা হয়তো ভেবেছেন জসীমউদ্দীন। আমি সঠিক জানি না আসলে কী হয়েছিল। সে সময়ে বুদ্ধদেব বসু জসীমউদ্দীনকে বড় কবি বলে মনে করেননি। বহু বছর পর তিনি জসীমউদ্দীনকে কবি বলে মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু উচ্চ প্রশংসা করেননি। বিষ্ণু দে তাঁর সম্পর্কে একেবারে উদাসীন ছিলেন। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের একই মত ছিল।
মামুন: আপনার কি মত?
আবুল: জসীমউদ্দীন আমাদের অসাধারণ এক মৌলিক কবি। গ্রামবাংলার সার্থক রূপকার তিনি ছাড়া আর কে! তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একাই সমকালের অন্য কবিদের সাথে লড়াই করে টিকে আছেন। তাঁর ভাষা গেঁয়ো নয়। তিনি লিখেছেন গ্রামবাংলার মানুষের সুখ-দুঃখের কথা, তাদেরই ভাষায়।
মামুন: রবীন্দ্রনাথ গদ্যকবিতা নিয়ে কয়েকটি লেখা লিখেছেন তিরিশের দশকে।
আবুল: আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, তিনিও গদ্যকবিতা লেখার চেষ্টা করেছেন তিরিশের শুরু থেকে প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত। কিন্তু পরে আর লেখেননি গদ্যে। জীবনের শেষ বছরগুলোতে ছন্দে লিখেছেন। লক্ষ করার বিষয়, তিনি কিন্তু গদ্যকবিতার পক্ষে কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছেন! অন্তত দুটো আমি পড়েছি, মনে পড়ছে। সেগুলো এখন আবার পড়তে পারলে মন্তব্য করতে পারতাম। এখন বেশিক্ষণ পড়তে পারি না। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। ঘাড়ে ব্যথা হয়।
ওহ্, মনে পড়েছে, আমি নিজেও প্রবন্ধ লিখেছিলাম গদ্যকবিতা নিয়ে। সম্ভবত মোহাম্মদীতে, রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর গদ্যকবিতা বিষয়ে।
মামুন: প্রবন্ধটি রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন?
আবুল: ছাপা হয়েছিল বোধ হয় ১৯৩৮ সালে। অনেক পরে তিনি ওটা পড়েছিলেন এবং সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর প্রতিবাদটা ছাপা হয়েছে তাঁর রচনাবলির মধ্যে।
মামুন: রবীন্দ্রনাথ গদ্যকবিতা লিখতে গেলেন কেন, আপনার বক্তব্য কী?
আবুল: বলা মুশকিল, এটা বলা মুশকিল। আমার মনে হয়, তিনি চেষ্টা করতে চেয়েছেন। পরে পছন্দ হয়নি। সরে এসেছেন ছন্দে।
মামুন: নাকি তিনি আধুনিক কবিদের সাথে থাকতে চেয়েছেন? আসলে তাঁর অভিপ্রায়টি কী ছিল?
আবুল: তাঁর মতো বিশ্বমানের একজন কবি তরুণদের দলে থাকতে চাইবেন, আমি মনে করি না। গদ্যকবিতার ধারাকে তিনি বিবেচনায় রেখেছিলেন। একেবারে বিপরীতে অবস্থান করেননি। তাঁর মতো কবি গদ্যে কবিতা লিখবেন—এতে অনেকে অবাক হয়েছিলেন। আসলে তাঁর মনে কী সিদ্ধান্ত ছিল গদ্যকবিতা লেখা নিয়ে, তা তো আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। প্রবোধচন্দ্র সেন বা আবু সয়ীদ আইয়ুব হয়তো লিখেছেন। এসব বিষয়ে তাঁরা নিশ্চয় আলোকপাত করেছেন। আমিও আমার সেই প্রবন্ধে গদ্যকবিতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম। যদিও রবীন্দ্রনাথের গদ্যকবিতাগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
মামুন: ১৯৩৮ সালে লিখলেন প্রবন্ধ গদ্যকবিতার বিরুদ্ধে, কিন্তু দুবছর পর বই বের করলেন নব বসন্ত, গদ্যকবিতারই বই।
আবুল: ওই দুই বছর অনেক পড়লাম কবিতা এবং লিখলাম গদ্যকবিতা। এতে আমার মনে হলো, গদ্যেরও একটা শিল্পরূপ আছে, ছন্দ আছে। কাজেই গদ্য বা পদ্য নয়, কবিতা যেন কবিতা হয়ে থাকে, সেটি লক্ষণীয়। মানুষের মুখের কথ্যভাষা আমার কাছে আদর পেয়েছে। প্রথম থেকে দেখেছি, যাঁরা তিরিশের কবি, তাঁদের কবিতা গদ্য হলেও ছন্দেরই বিমূর্ত রূপ। তাই সাধারণের প্রাত্যহিক ভাষাকে আমিই প্রথম কবিতায় প্রকাশ করলাম। সব ধরনের পাঠক আমার কবিতা খুব সহজে বুঝতে পারে।
মামুন: কবিতার সবকিছু সহজে বুঝতে পারা কি গুরুত্বপূর্ণ?
আবুল: পাঠক যদি কবির কবিতা বুঝতে না পারে, তাহলে কী বলব। কবিতার অর্থময়তা বুঝতে না পারলে লিখে লাভ কী।
মামুন: মানুষকেই নিয়ে সবকিছু...।
আবুল: হ্যাঁ, মানুষের ভাষা কবিতার ভাষা হয়েছে। সেটা আমি চেষ্টা করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। মানুষকে বাদ দিয়ে কোনো সাহিত্য টিকে থাকবে না, এটা রবীন্দ্রনাথও খুব ভালো করে জানতেন। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে তিনি খুব সচেতন ছিলেন।
মামুন: রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতা পড়লে মনে হয়, তিনি ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে যাচ্ছেন অথবা কল্পনার জগতে ঘুরপাক খাচ্ছেন পাঠক।
আবুল: মানুষের ধর্ম যেমন তাঁর কাছে সত্য, কল্পনাও তেমনি সত্য। ঊর্ধ্বলোকের কথা বলছ, এটা তো মানুষের কাজ। মানুষই কল্পনা করে বা স্বপ্ন দেখে মৃত্যুর পর অলৌকিক কোনো জগতে সে প্রবেশ করছে। কল্পনাবিলাসী মানুষ মৃত্যুর অধিক অলৌকিক জগৎকে লালন করে। তাঁর সাহিত্যে অবাস্তব কিছু নেই। রবীন্দ্রসাহিত্য পাঠকের অন্তরাত্মা খুলে দেয়। পাঠক ভাবে, সে একা নয়, কবিতা তার সঙ্গে আছে। রবীন্দ্রনাথ কল্পনার অপ্রতিরোধ্য সত্যকে পাঠকের মগজে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন।
মামুন: স্বপ্ন বা কল্পনা তো সত্যি নয়।
আবুল: মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে হয়। যাঁরা মানবজাতিকে সত্যিকারের স্বপ্ন দেখাতে পারেন, তাঁরা মহাপুরুষ। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সেই দলের মানুষ।
মামুন: এটা আমার অটোগ্রাফ খাতা, যদি কিছু এঁকে দেন।
আবুল: ক্যানভাসও দেখছি। ওটা কী?
মামুন: তুলি। একটু চেষ্টা করলে আপনি পারবেন।
আবুল: কী রং?
মামুন: এটা সবুজ, ওটা কালো, নীল। আঁকার পর এই কলমটা দিয়ে সই করবেন।
আবুল: আচ্ছা, এটা...।
এরপর আবুল হোসেন ছবি আঁকতে শুরু করলেন।