দেড় হাজার বিঘা খাসজমি জালিয়াতি করে রেকর্ড

সিরাজগঞ্জে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার বিঘা খাস জমি ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও শাহজাদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন।
এজাহার ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া মৌজাসহ পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার ১১টি মৌজার তিন হাজার নব্বই বিঘা খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি ভূমি রয়েছে। গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই জমি ১৯৮২ সালে সরকার বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডকে (মিল্ক ভিটা) ইজারা দেয়। পরবর্তী সময়ে মিল্ক ভিটার আওতাভুক্ত ৫৬টি প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সদস্যদের এ ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রতি একর ৫০০ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করে সমিতির সদস্য বা খামারের মালিকেরা ঘাসের উৎপাদন করে আসছেন। কিন্তু আরএস রেকর্ডের জরিপের সময় পাবনা ও সিরাজগঞ্জের সাঁথিয়া, ফরিদপুর ও শাহজাদপুর উপজেলার বেশ কিছু লোক অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে খাস ভূমি তাঁদের নামে রেকর্ড করেন। কয়েকজন রেকর্ডধারী ১ আগস্ট শাহজাদপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে এসে ভূমির মালিকানা দাবি করেন। তখন বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে জেলা প্রশাসনের নজরে এলে খাস জমি উদ্ধারে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শাহজাদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাদী হয়ে ৯ অক্টোবর শাহজাদপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। মামলায় পাবনা জেলার পাথাইল হাটের শামসুল আলম ওরফে নান্নু মিয়া, তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, দুই বোন রেহানা আক্তার ও তাহমিনা বেগম, ছেলে আবুল হাসানাত এবং মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপককে (সমিতি) বিবাদী করা হয়। একই পরিবারের পাঁচ সদস্যর নামে ৮০ বিঘা ভূমি রেকর্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই দিনই মামলাটি গ্রহণ করে আদালতের বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ মো. তোফাজ্জল হোসেন ওই জমির ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
এ বিষয়ে বিবাদী শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এই জমির পাশে আমাদের পরিবারের প্রায় ৪৫০ বিঘা জমি রয়েছে। এ কারণে তৎকালীন সার্ভের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের নামে রেকর্ড করে থাকতে পারেন। তবে বিষয়টি আমাদের জানা নেই। দখলে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০০৪ সালে শাহজাদপুর উপজেলার আবদুল কুদ্দুস নিকারীসহ ২৪৭ জন নিকারী ১৪৪ বিঘা জমির মালিকানা দাবি করে সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় আমাদের পরিবারের সদস্যদের বিবাদী করা হয়নি।’
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) মালিক আবদুর রহিম বলেন, খাস জমি অবৈধভাবে রেকর্ড করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় এ জমি উদ্ধার করা হবে। এ বিষয়ে আরও মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ভূমিগুলো সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। এই জমি কখনো ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ডের সুযোগ নেই।
মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, অসাধু ব্যক্তিরা অবৈধ কাগজপত্রের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার বিঘা গোচারণভূমি দখল করেছেন। তা উদ্ধারে প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।