চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১৩০ মণ চাল আত্মসাতের অভিযোগ

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. নাসির বিদেশে থাকেন। তাঁর নামে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ চাল রয়েছে। তাঁর বাবা চান মিয়া বলেন, ‘ছেলের নামে বরাদ্দ রয়েছে, তা জানি না। চালও পাইনি।’
অন্তত সাতজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বলেন, তাঁরাও ওই বরাদ্দের কথা জানতেন না। তাঁদের নাম ব্যবহার করে তালিকা তৈরি করে ও মাস্টাররোলে ভুয়া টিপসই দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আকন মো. সহিদ বরাদ্দের ১৩০ মণ চালই আত্মসাৎ করেছেন। ওই তালিকায় থাকা ১৯০ জনের কাউকেই চাল দেওয়া হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হোসেন বলেন, ‘অনিয়ম সম্পর্কে শুনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্র জানায়, গত মে মাসের শেষের দিকে রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারের জন্য সরকার ২০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়। জুনের মধ্যে এসব চাল বিতরণ শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে তালিকা চাওয়া হয়। সে অনুযায়ী কালমেঘা ইউপির চেয়ারম্যান ১৯০ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির তালিকা জমা দেন। ২৯ মে ৭১ জনের নামে সাড়ে ৩৫ মণ এবং ৬ জুন ১১৯ জনের নামে ৯৫ মণ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জমা দেওয়া তালিকা ও মাস্টাররোলে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহিনের বাবা আনিসুর রহমানের নাম রয়েছে। আনিসুর রহমান বলেন, ‘গোটা জীবনে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা নিইনি। আমার নাম কী করে তালিকায় এল, তা জানি না। আমাকে চাল দেওয়াও হয়নি।’
৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ শীলের স্ত্রী হেলেন রানিরও নাম রয়েছে তালিকায়। রবীন্দ্রনাথ শীল বলেন, ‘আমার স্ত্রীর নামে চাল রয়েছে, তা এখন শুনলাম। চালও পাইনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, ৯টি ওয়ার্ড থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যে তালিকা ও মাস্টাররোল জমা দেওয়া হয়েছে, তা তাঁদের জানা নেই। এ নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর তাঁরা জানতে পেরেছেন। তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সদস্যদের নিয়ে সভা ডাকেন চেয়ারম্যান। তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর হবে না বলে অঙ্গীকার করেন। এ ঘটনায় সদস্যদের কাছে সহযোগিতাও চান তিনি। সদস্যরাও যথাযথ সহযোগিতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এখন তালিকাভুক্ত অনেককে ‘চাল পেয়েছি’, এমন স্বীকারোক্তি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
ওই কার্যক্রমে সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কবির আহমেদ বলেন, ‘আমি উপস্থিত থেকে চাল বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করে এসেছি। চাল বিতরণ হয়েছে, এমনটাই জানি।’
ইউপি চেয়ারম্যান আকন মো. সহিদ বলেন, তড়িঘড়ি করে তালিকা করতে হয়েছে। আর মাস্টাররোলও পিআইও অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন ধীরেসুস্থে চাল পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে। চাল আত্মসাৎ করা হয়নি।
পিআইও এইচ এম মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, ঢাকায় থাকার কারণে চাল বিতরণ হয়নি। শিগগির তালিকা মোতাবেক চাল দেওয়া হবে।’