দালাল আইনের আসামির মুক্তিযোদ্ধা সনদ

মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে করা মামলায় আসামি ছিলেন, গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। এলাকায় রাজাকার হিসেবে পরিচিত। তবু তিনি সনদধারী মুক্তিযোদ্ধা। মোহাম্মদ জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা নিয়েছেন। তাঁর দুই সন্তান মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ বাহিনি ও প্রশাসনে চাকরি নিয়েছেন।

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের বাসিন্দা জব্বার আলী মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেয়েছেন ২০০৯ সালে। ১৯৯৬ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রকাশিত স্মরণিকা লাল মুক্তিবার্তায় নাম রয়েছে জব্বার আলীর। তবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ময় প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেছেন, দালাল আইনে যাঁর নামে মামলা ছিল, তাঁকে কোন বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া হলো? কারা এ সনদ নিয়ে দিল? লাল মুক্তিবার্তায় নাম ওঠানোও সহজ কথা নয়।

মুরাদনগরের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন জব্বার আলী। ১৯৭২ সালে মুরাদনগর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মামলা চলার সময় তিনি সাধারণ ক্ষমা পান। জব্বার আলীর এক ছেলে ১৭ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। আরেক ছেলে ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির জন্য মনোনীত হয়েছেন।

দারোরা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার রোশন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জব্বার আলীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রাপ্তি অর্থের বিনিময়ে হয়ে থাকতে পারে। এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের মুখে ২০১২ সালে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দেয় মন্ত্রণালয়। মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল চেয়ে নতুন করে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

যোগাযোগ করা হলে জব্বার আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি অসুস্থ, কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তাঁর ছেলে মহসীন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। বাবার নামে সে সময় দালাল আইনে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া আমার ভাই ও আমি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি পেয়েছি বলে এসব ষড়যন্ত্র করছেন স্থানীয় কিছু মুক্তিযোদ্ধা।’

চিঠির বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত শেখ আবদুল হামিদ বলেন, ‘যাদের আমি ঘুষ দিইনি, তারা আমাকে রাজাকার বলছে।’ অন্যদিকে মতিয়ার রহমান নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কীভাবে যে এই রাজাকাররা সনদ পেল তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। প্রায় প্রতিদিনই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সরকারি অফিস, এলাকাবাসীসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক নানা অভিযোগ আসছে। বিশেষ করে গেজেটভুক্তির জন্য নতুন করে আবেদন চাওয়ার পর থেকেই এসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’ মন্ত্রী বলেন, ভুয়াদের বেশির ভাগই স্থানীয় মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জামুকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত সনদ পেয়েছেন। অমুক্তিযোদ্ধাদের সনদও বাতিল করা হবে এবং ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।