মুষ্টিবদ্ধ হাতে বিপ্লবের লড়াই

হাঁটতে গেলে পা বাঁকা হয়ে যায়, ডান হাতের কবজিতে সমস্যা থাকায় আঙুল দিয়ে ধরতে পারে না পেনসিল। তবু দমে যায়নি বিপ্লব নাথ। এ বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সে। মুঠ করে পেনসিল ধরেই সে লিখছে পরীক্ষার খাতায় l প্রথম আলো
হাঁটতে গেলে পা বাঁকা হয়ে যায়, ডান হাতের কবজিতে সমস্যা থাকায় আঙুল দিয়ে ধরতে পারে না পেনসিল। তবু দমে যায়নি বিপ্লব নাথ। এ বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সে। মুঠ করে পেনসিল ধরেই সে লিখছে পরীক্ষার খাতায় l প্রথম আলো

বিপ্লব নাথের সারা শরীরে যন্ত্রণা। জন্মের পর ধীরে ধীরে তার পা বাঁকা হয়ে যায়। বাঁকা পা নিয়ে হাঁটতে কষ্ট হয় তার। কথাও জড়িয়ে যায়। ডান হাতের কবজিতে সমস্যা থাকায় আঙুলে পেনসিল কলম ধরতে পারে না। দরিদ্র বাবার সামর্থ্য নেই বলে চিকিৎসকের কাছে নিতে পারেননি। চিকিৎসা বলতে কেবল তেলমালিশ। তবু বিপ্লবকে কে দমাতে পারে? মুষ্টিবদ্ধ হাতে পেনসিল ধরেই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে সে।

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপের চরকানাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে বিপ্লব। ২৪ নভেম্বর দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে এক মনে লিখছে সে। লিখতে লিখতে মাথাটা বারবার ঝুঁকে পড়ছে খাতার ওপর। টাল সামলে মাথা সোজা করতে বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। তবু লেখা চালিয়ে যাচ্ছে কারও সাহায্য ছাড়াই।

পরীক্ষা শেষে কথা হয় হাবিলাসদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র বিপ্লবের সঙ্গে। কেমন লাগছে, জানতে চাইলে অনেকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, ভালো। কথা বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। তবু নিজ থেকেই বলল, ‘আমাকে স্কুলের সবাই ভালোবাসে। সবাই আমার বন্ধু। বড় হয়ে ওদের মতো লেখাপড়া চালিয়ে যাব।’

পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল বিপ্লবের ছোট বোন দৃষ্টি নাথ। দৃষ্টি বলে, ‘বিপ্লব প্রতিদিন হেঁটেই স্কুলে আসে। একাই যাওয়া–আসা করে। তবে এখন পরীক্ষা হচ্ছে বলে আমি এসেছি। কখনো মাও আসে।’ বিপ্লব পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী বলে জানায় দৃষ্টি। ছোট বোন ও মা তাকে পড়া তৈরিতে সাহায্য করেন।

হাবিলাসদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পাপিয়া আচার্য বলেন, বিপ্লব নাথ শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ রয়েছে। তার কথাগুলো ভালোভাবে বোঝা যায় না, তবু শিক্ষকেরা যত্ন নিয়ে পড়ান তাকে। তার স্মরণশক্তিও ভালো।

বিপ্লব নাথের বাবা রূপন নাথ বলেন, তাঁর এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বিপ্লব বড়। বিপ্লবের জন্মের পর যখন সে বড় হচ্ছে, তখন তার শারীরিক সমস্যা চোখে ধরা পড়ে। তবে আর্থিক অনটনের কারণে তাকে ভালো কোনো চিকিৎসক দেখাতে পারেননি তিনি।

চরকানাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক আমিনুল হক বলেন, বিপ্লবের এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশে পরীক্ষায় তাকে ২০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে।