লুই কানের নকশা ঢাকায়

জাতীয় সংসদ ভবন l ফাইল ​ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন l ফাইল ​ছবি

লুই ইসাডোর কানের তৈরি করা জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ৪০টি বাক্সে মূল নকশার চারটি করে সেট যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে।
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে সংসদ সচিবালয় ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তা বিমানবন্দরে গিয়ে নকশা সংগ্রহ করেন। এই নকশা আনার জন্য সরকার প্রায় চার লাখ ডলার বরাদ্দ করে, যা ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার কাছাকাছি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই নকশা আসার ফলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজে এক ধাপ অগ্রগতি হলো।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, গণপূর্ত বিভাগ ২০১৩ সালে নকশাবহির্ভূতভাবে সংসদ ভবনে উত্তর ফটক বন্ধ করে সেখানে সংসদ টেলিভিশনের জন্য স্টুডিও নির্মাণের কাজ শুরু করে। এ নিয়ে ওই বছরের ২৩ জুন প্রথম আলোয় ‘সংসদ ভবনের নকশায় আবার আঘাত’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর স্পিকারের হস্তক্ষেপে স্টুডিও নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ডিসেম্বরে সংসদ কমিশনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ ভবনের মূল নকশা সংগ্রহের নির্দেশ দেন। এর আগে সংসদ ভবন এলাকায় স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের আবাসিক ভবন নির্মাণের বৈধতা নিয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গত বছরের নভেম্বরে লুই কানের মহাপরিকল্পনাটি আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, নকশা আসার পর স্থাপত্য অধিদপ্তর ও সংসদ সচিবালয় যৌথভাবে নকশা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করবে। এ কাজটি অচিরেই শুরু হবে।
স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, নকশা যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেবেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার সিদ্ধান্ত জানাবে। তারপর গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কারকাজ শুরু করবে।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, লুই কানের মূল নকশা আনা বা কবরগুলো সরিয়ে দেওয়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে জিয়াউর রহমানের কবর সরানো। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, লুই কানের নকশায় ইতিমধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাড়ি হয়েছে সংসদ এলাকায়, সেখানে একটি কবরস্থান, একটি সম্মেলন কেন্দ্রসহ আরও কিছু স্থাপনা সেখানে দৃশ্যমান। তিনি আরও বলেন, এসব স্থাপনার কারণে সংসদ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটার অভিযোগ কেউ করেননি।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, পাকিস্তান আমলের নকশার প্রতি এই সরকারের এত ভালোবাসা সন্দেহজনক। কেন এই ভালোবাসা তা বুঝতে কারও বাকি থাকার কথা নয়।
অবশ্য সম্প্রতি গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কারও কবর সরানোর জন্য সংস্কারকাজ করব না। লুই কানের নকশা যেভাবে আছে, সে অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যা যা করণীয়, সবই করা হবে।’
পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত আটজন নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় কবর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শেরেবাংলা নগরে আছে লুই কানের নকশাবহির্ভূত আরও সাতটি স্থাপনা। মূল নকশা অনুযায়ী, সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের পাশাপাশি নতুন সচিবালয় শেরেবাংলা নগরে হওয়ার কথা। এখন সরকার সেখানে সচিবালয় স্থানান্তর করতে চাইলেও মূল নকশা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়।