পিঠাপুলিতে শীতের আমেজ

বেইলি রোডের একটি দোকান থেকে পিঠা কিনছেন একজন ক্রেতা l প্রথম আলো
বেইলি রোডের একটি দোকান থেকে পিঠা কিনছেন একজন ক্রেতা l প্রথম আলো

সকাল সকাল গাছ থেকে খেজুরের রস নামিয়ে পিঠা বানানোর তোড়জোড়। উনুনের চারদিক ঘেঁষে ছোটদের অপেক্ষা—কখন নামবে পিঠার হাঁড়ি! কে কত খেতে পারে, তারও একটা প্রতিযোগিতা হতো। গতকাল বৃহস্পতিবার বেইলি পিঠাঘরের সামনে এভাবেই স্মৃতিচারণা করছিলেন লিমা হোসাইন।
ঢাকায় আছেন দীর্ঘদিন। তবে ছোটবেলা গ্রামেই কেটেছে। লিমা বলেন, ‘পুরো শীতটাই কাটত আত্মীয়স্বজনের বাসায় পিঠার দাওয়াতে। আর পিঠা কিনে খাব—কল্পনাই করা যেত না।’ কিন্তু ঢাকায় সেই সময়-সুযোগ না হওয়ায় তিনি পিঠা বানান না। কিনেই খান। রাজধানীর পিঠার দোকানগুলোই তাঁর ভরসা।
ঢাকায় এখনো শীত তেমন প্রবলভাবে না পড়লেও তার আয়োজনে কমতি নেই। বাইরে বের হলেই দেখা যায় দোকানগুলোতে ঝুলছে রংবেরঙের শীতের কাপড়। কাঁচাবাজারে রকমারি সবজি তো আছেই, আর অনুষ্ঠান-উৎসবও চলছে জমজমাট আয়োজনে। তবে পিঠা ছাড়া কি আর শীতের আমেজ পুরো হয় নাকি! রাজধানীতে পিঠার দোকানও রয়েছে বেশ কিছু, তাতে বিক্রিও হচ্ছে যথেষ্ট।
বেইলি রোডে ছোট একটি দোকান বেইলি পিঠাঘর। চলছে প্রায় ২২ বছর ধরে। এর স্বত্বাধিকারী কাজী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ঢাকার মানুষের সময় কই পিঠা বানানোর? মানুষকে খাওয়ানোর চিন্তা থেকেই দোকান শুরু করি।’ এ দোকানের তালিকায় ৪৫ রকমের পিঠার উল্লেখ আছে। শুধু ভাপা পিঠা আর চিতই বাদে সারা বছরই বাকি পিঠাগুলো পাওয়া যাবে। রকমভেদে পিঠার দাম ১৫ থেকে ৪২ টাকা। ছোট দোকান। টোকেন নিয়ে লাইন ধরতে হয়।
মগবাজারের বিশাল সেন্টারের সামনের দোকান সোনারগাঁও পিঠাঘর। এর বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, তাঁরাও সারা বছর পিঠা বিক্রি করেন। বিভিন্ন ঝাল চিকেন পুলি তাঁদের বিশেষ পদ। দাম ৩০ টাকা। নানান পদের পিঠা পাওয়া যাবে ১০ থেকে ৫০ টাকায়।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর খাবারদাবার পিঠাঘর বেশ পুরোনো। এর তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম বললেন, এটি ঢাকার প্রথম পিঠার দোকান। অনেক ধরনের পুলি, ডিম ভাপা, ঝাল ভাপা ছাড়াও বাকি পিঠা তো আছেই। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আলাদা ভাপাও তৈরি হয়। আছে বিশেষ পাটিসাপটা। দাম ৪০ টাকা। রসের পিঠাও তৈরি হয়। এখানে ২৫-৪০ টাকায় পিঠা খাওয়া যাবে। তবে সংস্কারের জন্য দোকানটি সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। দিন দশেকের মধ্যেই আবার চালু হবে।
৩০ পদের ওপরে ভর্তাসহ পিঠা বিক্রি করছে ‘পাগলা পিঠা’। ফার্মগেটেই এ দোকান। ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খেতে বিকেল থেকেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। ৫-১০ টাকায় পিঠা খাওয়া যাবে।
পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার ও আগামসিহ লেনে বেশ কিছু পিঠার দোকান রয়েছে। রাজধানীর উত্তরা, ডেমরায়ও আছে পিঠার দোকান। অনলাইনেও পিঠার ফরমাশ দেওয়া যাবে। বাহারি পিঠাঘর, টেস্ট অ্যান্ড টুইস্টকে পাওয়া যাবে ফেসবুকে। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য চাহিদা অনুযায়ী পিঠার ফরমাশ নেয়।