আমীর উদ্দিন দারোগার নাম বদলে ঘাট মসজিদ

পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি
বর্তমান ছবি
বর্তমান ছবি


নদীর তীরে অনন্যসুন্দর একটি মসজিদ। নিচে বইঠাসহ দুটি নৌকা। একটির পাটাতনে বসে গল্প করছেন কয়েকজন। ঢাকা: ফোর ইয়ারস হিস্ট্রি ইন ফটোগ্রাফসহ বাংলাদেশের পুরোনো ছবির কয়েকটি সাইটে গ্রামীণ পরিবেশের এমন একটি ছবি পাওয়া গেল। তাতে বলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গাতীরে আমীর উদ্দিন দারোগা মসজিদের ছবিটি ১৯১২ সালের। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী বইটিতেও এই মসজিদ এবং আমীর উদ্দিনের বাড়ির একটি ছবি পাওয়া গেল। মসজিদটি সম্ভবত ১৮৪০ সালে নির্মিত। মুনতাসীর মামুন তথ্যসূত্র দিয়ে লিখেছেন, উনিশ শতকে ঢাকার একজন প্রতিপত্তিশালী নাগরিক ছিলেন আমীর উদ্দিন। উপাধি দেখে মনে হয় খুব সম্ভবত কোম্পানি আমলে তিনি দারোগা ছিলেন। প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন। চাকরির উপার্জন দিয়ে ওই যুগের নব্য ধনীদের মতো আমীর উদ্দিন ত্রিপুরা জেলার বরদাখাত পরগনায় জমিদারি কিনেছিলেন, যার মৌজার সংখ্যা ছিল বাইশ। জমিদারি কেনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অর্জন করেছিলেন আভিজাত্যও। কিন্তু জমিদার নয়, সবাই তাঁকে দারোগা আমীর উদ্দিন নামেই চিনতেন। তিনি বুড়িগঙ্গার তীরে বিশাল একটি বাড়ি ও মসজিদ তৈরি করেছিলেন। মসজিদটিতে মোগল আমলের নির্মাণছাপ চোখে পড়ে। বুড়িগঙ্গার আশপাশে যাঁরা থাকতেন, তাঁরা ওই মসজিদে নামাজ পড়তেন। আমীর উদ্দিনের দুই ছেলে দিলওয়ার আলী ও মুনশি ইউসুফ আলী। ইউসুফ আলীর ছেলে মুনশি গোলাম মাওলার মোরগ লড়াই ও ভাটিয়ালি গানের প্রতি গভীর টান ছিল। তাঁর সময়েই জমিদারি হাতছাড়া হয়। ইতিহাসের এই বর্ণনা পড়ে বাস্তবে গিয়ে খুঁজলে এখন আর আমীর উদ্দিনের বাড়ি পাওয়া যাবে না। তবে বাবুবাজার ঘাট এলাকায় আমীর উদ্দিনের স্মৃতিসৌধ ও মসজিদটি এখনো টিকে আছে। আশপাশে উঠে গেছে বহুতল ভবন। এলাকার লোকজন অবশ্য দারোগা আমীর উদ্দিন মসজিদের বদলে এটিকে ঘাট মসজিদ হিসেবেই চেনে। বুড়িগঙ্গার তীর থেকেও মসজিদটি দেখা যায়। তবে মসজিদের আশপাশের জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে দোকান। রাখা হয়েছে ট্রাকসহ নানা ধরনের মালামাল। তবে ধুলোয় বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মসজিদটি এখনো মনে করিয়ে দেয় ঢাকার শত বছরের পুরোনো ইতিহাস।
লেখা: শরিফুল হাসান। ছবি: হাসান রাজা