পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছেই

সরকার ও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) বিপরীতমুখী দাবি ও অভিযোগের পটভূমিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ২০ বছরে পদার্পণ করছে আজ শুক্রবার। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জেএসএসের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনকামী পাহাড়িদের সঙ্গে মধ্য-৭০ দশক থেকে চলা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটেছিল।
কিন্তু গত ১৯ বছরের ইতিহাস যুদ্ধাবস্থার চেয়ে কম তিক্ততায় পরিপূর্ণ নয়। এই সময়ে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার অনেক উদ্যোগ-আয়োজন করেছে। অনেক পদক্ষেপও নিয়েছে। এরই ভিত্তিতে সরকারের দাবি—পার্বত্য চুক্তির অধিকাংশ, ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে। অনেক পদক্ষেপ আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলোও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির অভিযোগ—গত ১৯ বছরে চুক্তির একটি মৌলিক বিষয়ও বাস্তবায়িত হয়নি। সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের চেয়ে লঙ্ঘন ও ওয়াদা বরখেলাপের দিকে বেশি মনোযোগী। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ ক্ষুদ্ধ ও শঙ্কিত।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার চুক্তি সইয়ের পর তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন, সংরক্ষিত বন এলাকা সম্প্রসারণ, বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনে আদিবাসীদের ভূমি দখল, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন প্রণয়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে মনোনীত সদস্যসংখ্যা বাড়াতে আইন সংশোধন করেছে। সরকার এসব সিদ্ধান্ত খুব দ্রুততার সঙ্গেই নিয়েছে।
কিন্তু ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনটি সংশোধন করতে ১৬ বছর সময় নিয়েছে। এই সংশোধিত আইন প্রয়োগের জন্য অপরিহার্য বিধিমালা এখনো তৈরি করা হয়নি। ফলে আইন সংশোধনের পর ভূমি কমিশন কাজ শুরু করলেও তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমিতিক পরিবর্তনও অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। সেখানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই কমছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় চলয়ে দ্বৈতশাসন ও সমন্বয়হীনতা। এর একদিকে আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন জেলা পরিষদ এক আইনের অধীনে চলে। অন্যদিকে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চলে আরেক আইনের অধীনে। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন হয় না প্রায় ২৭ বছর। সরকারের মনোনীত ব্যক্তিদের দিয়ে চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। আঞ্চলিক পরিষদ আইন প্রায় ১৮ বছর আগে হলেও এখনো বিধিমালা প্রণীত হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির অভিযোগ—সরকার চুক্তি অনুযায়ী ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন না করে সংরক্ষিত বন এলাকা সম্প্রসারণ ও বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন করে পাহাড়িদের আবার উদ্বাস্তুকরণ-প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া আইন সংশোধন করে মনোনীত সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকার পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোকে দলীয় নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসন এবং গণদাবিতে পরিণত হওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছে বলেও তাদের অভিযোগ।