পাখিদের হাসপাতাল

চ্যারিটি বার্ডস হাসপাতালে অসুস্থ টিয়া পাখিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন ধীরাজ কুমার সিং। ছবি: এএফপি
চ্যারিটি বার্ডস হাসপাতালে অসুস্থ টিয়া পাখিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন ধীরাজ কুমার সিং। ছবি: এএফপি

দিল্লির লাল দুর্গের কাছে ছোট একটি হাসপাতাল। এখানকার রোগী পাখিরা। আহত বা অসুস্থ পাখিদের চিকিৎসা দেওয়া হয় এই হাসপাতালে।

চ্যারিটি বার্ডস হসপিটালটি তিনতলার। জৈনধর্মের অনুসারীরা এটি পরিচালনা করেন। জৈনমন্দিরের কাছেই হাসপাতালটির অবস্থান। ৪ হাজারেরও বেশি পাখিকে চিকিৎসা দেওয়া হয় এখানে। পাখা ভাঙলে, পা ভাঙলে, চোখে সংক্রমণ বা পেটের সমস্যা হলে পাখিরা হাসপাতালে চিকিৎসা পায়।

ভারতের প্রাচীন ধর্ম জৈন। এই ধর্মে সৃষ্টির ছোট-বড় সব জীবকে ভালোবাসতে বলা হয়। হিংস্রতা এই ধর্মে নিষিদ্ধ। এই ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস, সব জীব একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই একে অন্যকে সাহায্য করাই তাদের ধর্ম।

ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়েছে অসুস্থ একটি পাখিকে। ছবি: এএফপি
ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়েছে অসুস্থ একটি পাখিকে। ছবি: এএফপি

জৈনধর্মাবলম্বীরা নিরামিষাশী। কিছু ভিক্ষু ও নানরা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন। কোনো পোকামাকড় নিশ্বাসের সঙ্গে যাতে মারা না যায় সে জন্যই এমন ব্যবস্থা।

হাসপাতালে পশুপাখি-বিষয়ক চিকিৎসক ধীরাজ কুমার সিং এএফপিকে বলেন, সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক চিকিৎসাকেন্দ্রে কুকুর, বিড়ালদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু পাখিদের জন্য হাসপাতাল পাওয়া যায় না।

১৯৫৭ সালে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। জৈন সম্প্রদায় ও পর্যটকদের আর্থিক সহযোগিতায় হাসপাতালটি পরিচালিত হয়।

রিকশা, মোটরবাইক, বাইসাইকেল, গাড়ি ও ট্রাকের শব্দ দিল্লির পাখিদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। কুকুর ও বিড়ালের ডাকও তাদের ক্ষতি করে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি আহত বা অসুস্থ পাখিকে শুভানুধ্যায়ীরা হাসপাতালে নিয়ে আসে।

হাসপাতালে খাঁচায় রেখে চিকিৎসা চলছে পাখির। ছবি: এএফপি
হাসপাতালে খাঁচায় রেখে চিকিৎসা চলছে পাখির। ছবি: এএফপি

ধীরাজ সিং বলেন, সকালে হাঁটতে গিয়ে অনেকে পার্কে বা রাস্তায় অসুস্থ পাখি পড়ে থাকতে দেখে। এরপর হাসপাতালে নিয়ে আসে।

ধীরাজ সিংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই রক্তাক্ত একটি চিল হাতে ঢুকলেন মনীশ নামে এক যুবক। জানালেন, চিলটি খাবারের খোঁজে রাস্তায় নেমেছিল। সুতায় লেগে চিলটি আহত হয়। রক্ত পড়তে থাকে।

ডানায় বেঁধে যাওয়া সুতা খুলে চিলটির ক্ষত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন চিকিৎসক। এরপর একটি খাঁচায় চিলটিকে রাখা হয়।

এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাখিদের খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হয়। পাখিরা সাধারণত কীটপতঙ্গ বা ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী খায়। হাসপাতালে থাকলে পাখিদের খেতে হয় পনিরের টুকরো।

সুস্থ হওয়ার পর চিলটিকে হাসপাতালের ছাদে নেওয়া হয়। ডানা মেলে চিলটি উড়ে যায় দূর আকাশে।