কাজী জাফরের নেতৃত্বে নতুন জাতীয় পার্টি

সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আরেক দফা ভাঙল। জাতীয় পার্টির সাবেক দুই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর আহমদকে চেয়ারম্যান ও গোলাম মসীহকে মহাসচিব করে নতুন এই জাতীয় পার্টি গঠিত হয়েছে।

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দলের বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন জাতীয় পার্টির আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হলো। কাউন্সিলের মাধ্যমে এরশাদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়া নিয়ে মতবিরোধের জেরে গত ২৮ নভেম্বর কাজী জাফরকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এর কিছুক্ষণ পরই সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এরশাদকেই পাল্টা বহিষ্কারের ঘোষণা দেন কাজী জাফর।

এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় গোলাম মসীহসহ জাতীয় পার্টির আরও কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে নিয়ে জাতীয় পার্টির বিশেষ কাউন্সিল করার ঘোষণা দেন কাজী জাফর। সেই কাউন্সিল আজ হলো।

এদিকে বেলা দুইটার দিকে কাউন্সিল শুরুর কিছুক্ষণ পরে মিলনায়তনের গেটে চারটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কাজী জাফর। এর মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মিরপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের যুবসংহতির সহসভাপতি এরশাদ আহমেদ ও টঙ্গীর ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়।

এর আগে জাতীয় পার্টিতে আরও দুই দফা ভাঙন হয়। জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নাজিউর রহমান মঞ্জু গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গঠন করেন জাতীয় পার্টি (জেপি)।

নবগঠিত দলের নেতারা নিজেদের মূল জাতীয় পার্টি হিসেবে দাবি করেছেন। জানতে চাইলে দলের মহাসচিব গোলাম মসীহ বলেছেন, এখন জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে কাজী জাফর আহমদ। বিশেষ কমিটির মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এরশাদ সাহেবকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

গোলাম মসীহ জানান, নবগঠিত জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে ১০১ জন। আপাতত চেয়ারম্যান, মহাসচিব ও ২০ জন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মোস্তফা জামাল হায়দার কাউন্সিলে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের নাম প্রস্তাব করলে তা কাউন্সিলদের কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর পাঁচজন সদস্যকে নবগঠিত জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে। তাঁরা হলেন টি আই এম ফজলে রাব্বী, বর্তমান সাংসদ মোস্তফা জামাল হায়দার, জাহাঙ্গীর মো. আদেল, এস এম আলম ও সাংসদ গোলাম রেজা। এ ছাড়া বর্তমান সাংসদ নওয়াব আলী আব্বাস খানও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন।

কাউন্সিলে সভাপতির বক্তব্যে কাজী জাফর বলেন, জাতীয় পার্টির সামনে এখন তিনটি পথ খোলা আছে। এক. জাতীয় পার্টি নিজেরা নিজেদের মতো পথ চলবে, দুই. ১৮-দলীয় জোটে যাবে, তিন. নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ১৮ দল যে আন্দোলন করছে তার সঙ্গে যুগপত্ আন্দোলন করবে। এই তিনটি বিকল্পের মধ্য থেকে শিগগিরই একটিকে বেছে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির নতুন যাত্রা শুরু হলো।

এরশাদের সমালোচনা করে জাফর বলেন, ‘তিনি নাকি আটক। অথচ তাঁর সঙ্গে সবাই দেখা করছেন। তিনি দলের নেতাদের বহিষ্কার করছেন। তাঁকে মুক্তি দিতে আইনি নোটিশ দিয়ে তা আবার প্রত্যাহার করা হলো। সবকিছু নিয়ে একটা রহস্য তৈরি হয়েছে।’

কাউন্সিলে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, এরশাদ সাহেবের আগেই এই একতরফা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত ছিল। একটা পর্যায়ে এসে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে এটা যদি শেখ হাসিনা ও এরশাদের কোনো সাজানো নাটক হয়, তবে বলতে হবে তা অত্যন্ত নিম্নমানের নাটক হয়েছে।’

কাউন্সিলে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ ও নবগঠিত জাতীয় পার্টির নেতারা।