আবাসিকের বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে খিলগাঁও

>সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হয়েছে প্রায় দেড় বছর হলো। এই সময়ে রাজধানীর অনেক স্থানেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। আবার কোথাও এখনো কোনো কাজই হয়নি। নির্বাচিত কাউন্সিলররাই বা কী করছেন? আবার নতুন করে যেসব এলাকা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেসব এলাকায় হাতই দেয়নি দুটি করপোরেশন। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আছে নানা ক্ষোভ-আক্ষেপ। এলাকার সমস্যা, সম্ভাবনা, অভাব-অভিযোগ, সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ওয়ার্ডের চালচিত্র

খিলগাঁও আবাসিক এলাকার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। গড়ে উঠছে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। শহীদ বাকী সড়কসহ প্রধান সড়কগুলোতে সারা দিন তীব্র যানজট। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী।
একটি পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে খিলগাঁও গড়ে ওঠে ১৯৬০ সালে। তখন কমলাপুর রেলস্টেশন নির্মাণকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খিলগাঁওয়ে পুনর্বাসন করা হয়৷ বর্তমানে এই আবাসিক এলাকার অনেক বসতবাড়িতে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, রেস্তোরাঁসহ বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।
এদিকে অনেক দিন ধরে খিলগাঁও আবাসিক এলাকায় নালা ও পয়োনিষ্কাশন সংযোগ বন্ধ হয়ে আছে। সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে পয়োবর্জ্য অপসারণে সড়কের দুই পাশে তাদের সরু নালাই শুধু রয়েছে৷
খিলগাঁও ‘এ ব্লক’, তারাবাগ, প্রভাতিবাগ, তিলপাপাড়া, ঝিলপাড়, ইমামবাগ, ‘সি ব্লক’ উত্তর ও ‘সি ব্লক’ দক্ষিণ, জোড়পুকুর খেলার মাঠ, আনসার ক্যাম্প রোড, নাদের স্মৃতি সংসদ রোড, খিলগাঁও রোড, গোড়ান রোড, সিপাহিবাগ রোড, নিউ কলোনি এলাকা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১ নম্বর ওয়ার্ড।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বছরের এপ্রিলে ডিএসসিসি নির্বাচনের আগে এই এলাকাগুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, নিরাপত্তা প্রহরীর ব্যবস্থা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কার, একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, মশানিধন, ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াহিদুল হাসান৷ নির্বাচিত হয়ে তিনি গত দেড় বছরেও এলাকার যানজট নিরসন, নালা ও নতুন পয়োনিষ্কাশন সংযোগ নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না৷
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, খিলগাঁও এলাকার প্রায় সব সড়ক গড়ে ৩০ ফুট প্রস্থ৷ প্রায় সব সড়কই যানচলাচলের উপযোগী৷ সড়কে নেই কোনো ময়লা-আবর্জনা৷ তবে বেলা ১১টায় ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও মডেল কলেজের সামনেসহ শহীদ বাকী সড়কে লেগে আছে তীব্র যানজট। সড়কের দুপাশে পার্কিং করে রাখা রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি৷ এসব গাড়িতে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে শিক্ষার্থীরা৷ শহীদ বাকী সড়কের দুপাশে প্রায় শতাধিক রেস্তোরাঁ, কফির ও হালকা খাবারের দোকান। এসব রেস্তোরাঁ ও দোকানের ক্রেতারাও ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কে পার্কিং করে রেখেছেন৷ এই এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য পৃথক কোনো ব্যবস্থা নেই৷
শহীদ বাকী সড়কের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, এই এলাকায় যানজট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে৷
ডিএসসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ড সূত্র জানায়, স্বাধীনতার আগে এই এলাকায় নালা ও পয়োনিষ্কাশন লাইন নির্মাণ করা হয়েছিল৷ কিন্তু কালক্রমে সব পয়োনিষ্কাশন লাইন বন্ধ হয়ে যায়৷ বর্তমানে এই এলাকার বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্যের লাইন সড়কের দুপাশের নালায় সংযোগ দেওয়া হয়৷ কিন্তু প্রতিদিন দুপুরে নালায় পানির চাপ বাড়লে বিভিন্ন স্থানে নালা উপচে পয়োবর্জ্য সড়কে সয়লাব হয়ে যায়৷ এ সমস্যা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে সমাধানে ওয়াসাকে একাধিকবার লিখিত আবেদন করা হয়েছে৷ কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না৷ এ ছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলেই ‘সি ব্লক’ উত্তর ও দক্ষিণ এবং ‘এ ব্লকের’ ১৯, ২০, ২১, ২২ নম্বর সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
খিলগাঁও এলাকার পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে এই এলাকায় পয়োনিষ্কাশন লাইন বসানো হয়েছে। এরপর তা সংরক্ষণ বা সংস্কার করেনি ওয়াসা। অথচ দিনে দিনে এই এলাকায় বহুতল ভবন ও মানুষের চাহিদা বাড়ছে৷ এখন এই এলাকার বাসিন্দাদের স্বপ্ন একটি আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা৷
খিলগাঁওয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে মশার উৎপাত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খিলগাঁও রোডের বাসিন্দা শাহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, ডিএসসিসি থেকে মাঝেমধ্যে এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়। তবে তাতে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। সড়কের দুপাশে নালাগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না।

কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান
কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান

‘১২ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে’
গত বছর ডিএসসিসির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী ওয়াহিদুল হাসান ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন৷ কাউন্সিলর প্রথম আলোকে বলেন, গত অর্থবছরে তাঁর ওয়ার্ডে প্রায় ১২ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে৷ খিলগাঁওয়ের প্রতিটি সড়ক ও ফুটপাত সংস্কার করা হয়েছে। ছিনতাই ও মাদক সেবন বন্ধে সব সড়কে এলইডি বাতি ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এসব ক্যামেরা দিয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৮০ শতাংশ এলাকা পর্যবেক্ষণ করা যায়। বর্তমানে খিলগাঁও একটি আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
যানজট ও পয়োনিষ্কাশন লাইন বন্ধের বিষয়ে কাউন্সিলর বলেন, খিলগাঁও থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো সরানো গেলে মহল্লার পরিবেশ আরও সুন্দর হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে৷ এ ছাড়া পয়োনিষ্কাশন লাইন সংস্কার করতে ওয়াসার কাছে একাধিকবার আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।