রাষ্ট্রপতিকে আইন প্রণয়ন ও ই-ভোটিংয়ের প্রস্তাব আ. লীগের

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি নির্বাচনে ই-ভোটিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির প্রতি তাদের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তাঁর গৃহীত যেকোনো ন্যায়সংগত উদ্যোগের প্রতি আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।

আজ বুধবার বিকেলে বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল। বিকেল চারটার দিকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করে সাড়ে পাঁচটার দিকে বেরিয়ে যায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল। পরে দলটির সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া প্রস্তাবের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এবং দেশের বিরাজমান সকল আইনকানুনের ওপর শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতির সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুগভীর প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার প্রতি আওয়ামী লীগের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া আওয়ামী লীগের চার দফা প্রস্তাব নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সম্ভব হলে এখনই একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন অথবা অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে। সময়স্বল্পতার কারণে আগামী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সময় যাতে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে এখন থেকেই সেই উদ্যোগ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা যায় এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমান বিরাজমান সকল বিধিবিধানের সঙ্গে জনমানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং প্রবর্তন করা যায়।’

আইন করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা জরুরি-বিএনপির এই দাবির বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছি। এই প্রস্তাব কতটা যুক্তিযুক্ত, কতটা বাস্তবসম্মত, তা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তিনি সেটা ঠিক করবেন। এটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো অধিকার আমাদের নেই। বিএনপি কী বলল, কী করল, এটা আমাদের বিবেচনার বিষয় নয়।’

ই-ভোটিং প্রবর্তনের প্রস্তাবের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, ই-ভোটিং দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রবর্তন করা হয়েছিল। এটাকে আরও সংযোজনের মাধ্যমে আপডেট করে এখনকার প্রযুক্তিতে তৈরি করার জন্য ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন অনেক কাজ করেছে। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে শুনেই এটা এখন প্রবর্তন করা যেতে পারে। এটা করলে নির্বাচন অনেক স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয়।

‘গণতন্ত্র ও নির্বাচন: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ শিরোনামে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ১১ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেখানে নির্বাচনকালীন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবল আবশ্যকীয় দৈনন্দিন কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবুল মাল আবদুল মুহিত, এইচ টি ইমাম, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মোহাম্মদ জমির; সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন এবং রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন উপস্থিত ছিলেন।