বছরের শুরুতে বাড়তি ভর্তি ফির বোঝা

নগরের নাসিরাবাদ এলাকায় অবস্থিত সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রাথমিক শাখায় পড়ে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এক অভিভাবকের দুই সন্তান। বছরের শুরুতে তাদের ভর্তিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতিজনের জন্য ভর্তি ফি দিতে হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার টাকা করে। এ ছাড়া বই ও খাতার জন্য দিতে হয়েছে আরও ৪ হাজার ৫০০ টাকা করে।
সন্তানদের ক্ষতি হবে মনে করে নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি ওই অভিভাবক। তাঁর অভিযোগ, গত বছরও প্রতিষ্ঠানটি বাড়তি ফি নিয়েছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বছরের শুরুতে সন্তানদের ভর্তি ফি মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে।
কেবল ওই অভিভাবক নন, নগরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবককে বাড়তি ভর্তি ফির বোঝা টানতে হচ্ছে। সীমিত আয়ের মানুষজন সন্তানের ভর্তি ফি দিতে গিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন। নতুন বছরের শুরুতেই সরকারের শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা না মেনেই নগরের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়িয়েছে। পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। গতবারের মতো এবারও ভর্তি ফি বেড়েছে এই সেবা সংস্থা পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোতে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির অজুহাতে বিদ্যালয়গুলো বেতন ফি বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বাড়তি অর্থ নেওয়া প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তি ফি ও ছাড়পত্রের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ১৭ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে বৈঠক হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান বাড়তি ফি নিয়েছে তা ফেরত দিতে হবে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০১৬ এর ১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মেট্রোপলিটন (নগর) এলাকায় সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকল্যে ৩ হাজার টাকার বেশি হবে না। তবে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নিতে পারবে।
বাড়তি ভর্তি নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অধ্যক্ষ এ জে এম শহীদুল্লাহ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁরা সরকারের নিয়মের বাইরে কিছুই করছেন না। নীতিমালার চেয়ে মাত্র ৫০০ টাকা বেশি ফি নিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি এবং বাড়িভাড়ায় এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
এ দিকে নগরের দামপাড়ার বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে প্রেপ-১ শ্রেণিতে ভর্তি ফি গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ করা হয়েছে। এবার ভর্তি ফি নেওয়া হয় ১০ হাজার ৩৫০ টাকা। গতবার ছিল ৫ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে জানার জন্য বিদ্যালয়টির অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে গত মঙ্গল ও বুধবার একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন: গত ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় ছয়টি কিন্ডারগার্টেন ও ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেতন ও ভর্তি ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কিন্ডারগার্টেনগুলোতে ভর্তি ফরমের দাম ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা করা হয়। এ ছাড়া নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। পুনঃ ভর্তির ক্ষেত্রে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করা হয়। ৪০০ টাকার মাসিক বেতন করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া গত বছর বিবিধ ফি ৮০০ টাকা থাকলেও এ বছর করা হয় ১ হাজার টাকা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ভর্তি ফিও বেড়েছে ৪০০ টাকা করে। এই তিনটি শ্রেণিতে মাসিক ফি ১০০ টাকা বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করা হয়েছে এবার।
সিটি করপোরেশনের অর্থ ও সংস্থাপন–বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর মো. শফিউল আলম ভর্তি ফি বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, এ খাতে করপোরেশনকে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হয়। গত বছর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাড়ায় এ ভর্তুকির পরিমাণ আরও বেড়েছে।
প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবারই বছরের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি ফি ও বেতন বাড়ায়। এটি নিয়ে একধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নীতিমালা থাকলেও তা প্রতিবছরই লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাড়তি ভর্তি ফি আদায়ের প্রতিবাদে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. শামসুল আরেফিন ক্যাবের এই স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।