রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে আবারও আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিউ তিন তাঁর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমকে উদ্ধৃত করে বাসস এ খবর জানায়।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির বিশেষ দূত হিসেবে কিউ তিন গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরে আসেন। গতকাল সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অং সান সু চির একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। ওই চিঠিতে সু চি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

এর আগে গতকাল দুপুরে কিউ তিন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক করেন। এরপর তিনি সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

এসব বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত রাতে কথা বলে জানা গেছে, ওই আলোচনাগুলোতেও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ দূতকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে বলেছে বাংলাদেশ। কিউ তিনকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা আবারও বাংলাদেশে প্রবেশের ফলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। প্রাণের ভয়ে এসব লোকের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বন্ধ করতে মিয়ানমারের সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই সমস্যার সমাধানে মিয়ানমার সহযোগিতা চাইলে বাংলাদেশ হাত বাড়িয়ে দিতে তৈরি আছে।

কর্মকর্তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান মিয়ানমারের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চির দূতের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কয়েক দশক ধরে এ দেশে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। গত অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর হত্যা-নির্যাতন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে এসেছে। কয়েক বছরের বিরতির পর মিয়ানমার থেকে আবার রোহিঙ্গাদের প্রবেশ বাংলাদেশকে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। মিয়ানমারকে সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য এর মূলে যেতে হবে। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটি হলে রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আসা বন্ধ করবে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে অবস্থান নেওয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিতে বাংলাদেশ জোর দিয়েছে।

‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’

মিয়ানমারের বিশেষ দূতকে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রসঙ্গটি পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোনো প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে দেওয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারের জন্য প্রয়োজনীয় যা যা করার আমি করব।’

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ দেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে মিয়ানমার। তিনি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিউ তিন দুই দেশের সীমান্তে বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস চালুর ওপর জোর দিয়ে বলেন, দুই দেশের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে তথ্য বিনিময়ের ওপরও জোর দেন।

গত অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বাহিনীর অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করলে সমস্যাটি নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এতে সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত ঢাকায় আলোচনার জন্য বিশেষ দূত পাঠিয়েছে মিয়ানমার।