হাসনাত, সামাদকে কনস্যুলার সুবিধা দিতে তাগাদা

.
.

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক হাসনাত রেজা করিম ও আরেক ঘটনায় বনানী থেকে নিখোঁজ ইয়াসিন মোহাম্মদ আবদুস সামাদকে কনস্যুলার সুবিধা দিতে তাগাদা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন নিজে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হলে সেই দেশের দূতাবাস ওই নাগরিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে প্রয়োজনে আইনিসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে পারে। এটাই হলো কনস্যুলার সুবিধা।
আটক ব্রিটিশ নাগরিকের কনস্যুলার সুবিধা চাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ভিয়েনা কনভেনশন অন কনস্যুলার রিলেশন্সে অনুসমর্থনকারী হিসেবে এর শর্তগুলো পালনে বাংলাদেশ সরকারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, হাসনাত রেজা করিমকে কনস্যুলার সুবিধা দিতে চেয়ে এর আগেও একবার অনুরোধ জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা চলার সময় হাসনাত রেজা করিম ওই রেস্তোরাঁয় উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থলে তাঁর উপস্থিতি ও গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গত ৩ জুলাই হাসনাত করিমকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই মামলার তদন্ত এখনো চলছে। গ্রেপ্তার হাসনাত রেজা করিম বর্তমানে হাজতে আছেন।
এদিকে ব্রিটিশ নাগরিক নিখোঁজ ইয়াসিন মোহাম্মদ আবদুস সামাদ তালুকদারের অবস্থান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ব্রিটিশ সরকার অনুরোধ জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ব্রিটিশ মন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, ইয়াসিন মোহাম্মদ আবদুস সামাদ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর অবস্থান জানানো হয়নি বলে ব্রিটিশ হাইকমিশন কনস্যুলার সুবিধা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তাঁর অবস্থান জানতে চায় ব্রিটিশ সরকার।
ইয়াসিন মোহাম্মদ আবদুস সামাদ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিক, যিনি প্রায় পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল লোক তাঁকে তুলে নিয়ে গেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আইনগত দিক খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে লেখা চিঠিতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী অলোক শর্মা মাহমুদ আলীকে এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। মাহমুদ আলী তখন এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।
হলি আর্টিজানের জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ
হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির কথা ভাবছে সরকার। এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে একটি সারসংক্ষেপ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সেই সঙ্গে ওই জঙ্গি হামলায় নিহত নয় ইতালীয় নাগরিকের প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ হাজার ইউরো (১২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা) সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিহত ইতালীয় নাগরিকদের স্বজনদের পক্ষ থেকে ১৫ জন ইতালীয় নাগরিক প্রধানমন্ত্রীর সদ্য সাবেক মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদারের সঙ্গে দেখা করে চারটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া।