ব্লগার হত্যার সূচনাকারী সেই রেদওয়ানুল গ্রেপ্তার

>
রেদওয়ানুল আজাদ
রেদওয়ানুল আজাদ
রাজীবকে হত্যার পর মালয়েশিয়া পালিয়ে যান রেদওয়ানুল। তিনি সেখান থেকে সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে ফিলিপাইনে আবু সায়াফ জঙ্গি দলের কাছে যাওয়ার সময় মালয়েশিয়ার গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েন

দেশে ব্লগার হত্যার সূচনা যাঁর পরিকল্পনায় হয়, সেই রেদওয়ানুল আজাদ ওরফে রানা (২৯) মালয়েশিয়ায় ধরা পড়েন। দেশে ফেরত পাঠানোর পর গতকাল সোমবার ঢাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (বর্তমান নাম আনসার আল ইসলাম) অন্যতম সংগঠক রেদওয়ানুল ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজীবকে হত্যার পর রেদওয়ানুল মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান। তিনি আগে আল-কায়েদার মতাদর্শ অনুসরণকারী আনসারুল্লাহর সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংগঠন আইএসের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সিরিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তিনি ফিলিপাইনে আবু সায়াফ জঙ্গি দলের কাছে যাওয়ার সময় মালয়েশিয়ায় ধরা পড়েন।
গতকাল রেদওয়ানুল ও আশরাফ নামে তাঁর এক সহযোগীকে দেশে ফেরত পাঠায় মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। পরে উত্তরা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ইউনিটটির প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
দেশে প্রথম ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়। ওই দিন রাজধানীর কালশীতে নিজ বাড়ির সামনে যখন ব্লগার রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, তখন শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন তুঙ্গে। এর কিছুদিন আগে উত্তরায় ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। পরে তদন্তে জানা যায়, ওই ঘটনারও মূল পরিকল্পক ছিলেন রেদওয়ানুল।
রাজীব হত্যার পর জড়িত হিসেবে পুলিশ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাঁচ ছাত্রকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও নেতৃত্বে ছিলেন রেদওয়ানুল আজাদ।

আহমেদ রাজীব হায়দার
আহমেদ রাজীব হায়দার

২০১৪ সালেই পুলিশ জানিয়েছিল, রেদওয়ানুল মালয়েশিয়ায় পালিয়ে গেছেন। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজীব হত্যা মামলার রায় দেন আদালত। এতে রেদওয়ানুলসহ দুজনকে ফাঁসি, একজনকে যাবজ্জীবন এবং আনসারুল্লাহর প্রধান তাত্ত্বিক নেতা জসীমুদ্দীন রাহমানীসহ পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।
রেদওয়ানুলকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল জাতীয় শহীদ মিনারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটি দল ২০১৩ সালের দিকে রেদওয়ানুলের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়। তিনি মূলত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের দিয়ে কয়েকটা ছোট ছোট সেল বা গুপ্তঘাতক দল তৈরি করেন। একটি সেল ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনের ওপর হামলা চালায় এবং আরেকটি সেল ব্লগার রাজীবকে হত্যা করে। ২০১৩ সালের শেষ দিকে মিরপুরের মনিপুর স্কুলের এক শিক্ষককে হত্যা করতে দুজনকে পাঠিয়েছিলেন রেদওয়ানুল। তাঁরা পথে পুলিশের সামনে পড়েন, একজন পালিয়ে যান অপরজন ধরা পড়েন।
মনিরুল বলেন, রেদওয়ানুল ঢাকায় আনসারুল্লাহর সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করলেও মালয়েশিয়া যাওয়ার পর একপর্যায়ে আইএসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। আইএসের বাইয়াত নিয়ে সিরিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর ফিলিপাইনে আবু সায়াফ গ্রুপের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, এমন সময় মালয়েশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা রেদওয়ানকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে।
মনিরুল বলেন, মালয়েশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা রেদওয়ানসহ দুজনকে আটক করে ফেরত পাঠায়। গতকাল ঢাকায় নামার পর বিমানবন্দর থেকে দুজনকে অনুসরণ করে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। রেদওয়ানুলের যেসব ইলেকট্রনিক ও যোগাযোগসামগ্রী পাওয়া গেছে, সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নতুন করে মামলা হচ্ছে।
এত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার পরেও রেদওয়ানুল কীভাবে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) তৈরি করে দেশ ছাড়তে পারলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, রাজীব হত্যার পরে ২০১৩ সালের শেষ দিকে রেদওয়ানুলকে শনাক্ত করা হয়। তখনই তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাসপোর্টের নম্বর সংগ্রহ করে সেটি ব্লক করে দেওয়া হয়। এরপর তিনি নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম ও জন্মতারিখ ঠিক রেখে ভুয়া স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা দিয়ে নতুন পাসপোর্ট করেন। এরপর ২০১৪ সালের শুরুতে ছাত্র ভিসায় মালয়েশিয়ায় যায়। সেখানে যাওয়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আনসারুল্লাহর আরেক জঙ্গি জুন্নুন শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রেদওয়ানুল। জুন্নুন আছেন অস্ট্রেলিয়ায়।