এক মায়ের এক ছেলে ফিরিয়ে দিন

.
.

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর মারা যাওয়া মো. হানিফ মৃধার বন্ধু সোহেল হোসেনকে ফিরিয়ে দিতে আকুতি জানিয়েছেন তাঁর মা মমতাজ বেগম। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘এক মায়ের এক ছেলে ফিরিয়ে দিন।’ মমতাজ বেগম জানান, সোহেল তাঁর একমাত্র সন্তান।

আজ সোমবার উত্তরায় র‍্যাব-১ কার্যালয়ের বাইরে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় মমতাজ বেগমের। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে ছেলের জন্ম। ছেলের এক বছরের মাথায় স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি ছেলেকে নিয়ে বরগুনা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভিক্ষা করে ছেলেকে বড় করেন। আজিমপুরে একটি স্কুলে এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়েছেন ছেলেকে। ২০০৬ সালে বিয়ে দেন। ছেলের ঘরে এখন এক নাতি রয়েছে।

সোহেল হোসেন গুলশান-১-এ পুরোনো ফার্নিচারের ব্যবসা করেন।

হানিফের পরিবারের দাবি, হানিফের সঙ্গে সোহেলকেও র‍্যাব ধরে নিয়ে গেছে। হানিফ ও সোহেলের নিখোঁজের বিষয়ে ৪ মার্চ হানিফের ভাই মো. হালিম মৃধা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জিডি করেন।

নিখোঁজের ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মমতাজ বলেন, হানিফ আর সোহেল বন্ধু। বরিশালে চরমোনাই পীরের ওরসে গিয়ে তাঁদের দেখা হয়। সোহেলের এক মামা (মায়ের চাচাতো ভাই) সগীর মাস্টার ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চালান। সোহেল হানিফকে নিয়ে মামার লঞ্চে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তিনি তাঁর মামাকে জানান, হানিফের গাড়ি তাঁদের নিতে আসবে। তাঁদের যেন কাঁচপুরে নামিয়ে দেওয়া। এ সময় তাঁরা কাঁচপুর সেতুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা হানিফের গাড়িটি লঞ্চের ছাদ থেকে মামাকে দেখান। তাঁরা নামার পর মামা লঞ্চের ছাদ থেকে দেখতে পান, তাঁরা গাড়িতে উঠতে গেলে কয়েকজন ধরে অন্য গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। মামা সঙ্গে সঙ্গে সোহেলের মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পান। এরপর তিনি বিষয়টি মমতাজ বেগমকে ফোন করে জানান।

ফোন পেয়েই বরগুনা থেকে মমতাজ বেগম ঢাকায় ধলপুরে ছেলের বাসায় ছুটে আসেন। সোহেলের স্ত্রী নীপা জানান, লঞ্চ যখন চাঁদপুরে, তখন শেষবার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা হানিফের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, হয়তো তাঁর ছেলেও র‍্যাব-১-এর হেফাজতে আছে।

হানিফের মৃত্যুর বিষয়টি জানার পর এখন মমতাজ বেগম তাঁর ছেলের বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। মমতাজ বলেন, এর মধ্যে একদিন একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। জানতে চায়, আপনি কি মন্টুর (সোহেলের ডাক নাম) মা? ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দেন মমতাজ। ওপাশ থেকে কে বলছেন জানতে চাইলে বলেন প্রশাসনের লোক। পরে ফোন দেবেন। কিন্তু কোনো ফোন আসেনি। তিনি বলেন, ‘হানিফের পরিবারের সঙ্গে র‍্যাব যোগাযোগ করেছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে করেনি। তাই আমার ছেলে কোথায়, কেমন আছে কিছুই জানি না। আমি প্রধানমন্ত্রী ও র‍্যাবকে অনুরোধ করছি, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।’


সোহেল ও হানিফের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম রোববার বলেছিলেন, এ ঘটনার সঙ্গে র‍্যাবের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আজ মমতাজ বেগম, সোহেলের স্ত্রী নিপা ও তাঁর চার বছরের ছেলে আবির হোসেন মাহিন এবং তাঁদের আত্মীয় আবদুল জলিল র‍্যাব-১-এর কার্যালয়ে এসেছেন।
আরও পড়ুন:
হানিফকে আগেই তুলে নেওয়ার দাবি পরিবারের