বাংলাদেশের মতো নেতাবন্দনা কোথাও হয় না: সুলতানা কামাল

সুলতানা কামাল
সুলতানা কামাল

বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে যত আবেগ দিয়ে নেতা-নেত্রীদের বন্দনা করা হয়, পৃথিবীর কোথাও এমন বন্দনা করা হয় না। নেতা-নেত্রীদের বন্দনা বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখতে হবে জনগণ কেমন আছে। একটি দেশের একটি গোষ্ঠীও যদি মনে করে, তারা বৈষম্য, অবহেলা ও অসম্মানের মধ্যে বসবাস করে; তাহলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ দলিত পরিষদ আয়োজিত জাতীয় নীতি সংলাপে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির সহযোগিতায় ছিল মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা এমন একটা জাতি; আমরা যত বেশি আবেগ দিয়ে দেশের কথা বলি, যত আবেগ দিয়ে নেতা-নেত্রীদের বন্দনা করি, পৃথিবীর কোথাও এত বন্দনার প্রয়োজন হয় না, করেও না কেউ। এটা কিন্তু খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়। নেতাবন্দনার কোনো কারণ ঘটে না কোথাও।’ তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা নিজেদের বলছি উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটছি। সেই জায়গায় কিছু জনগোষ্ঠী কেন বোধ করবে তাদের জায়গাটা এ দেশে পাচ্ছে না। এ জায়গায় আমাদের বিরাট প্রশ্ন।’
দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। এ জন্য আমাদের আত্মসমীক্ষার ব্যাপার আছে। নিজেদের দিকে তাকানোর বিষয় আছে। কেন পারিনি, এ জন্য সৎ ও স্বচ্ছ বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন।’
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের সময় নিরাশ হওয়ার কথা উল্লেখ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন নিয়ে আমরা নিরাশ হয়েছি। খুব তড়িঘড়ি করে আইনটি পাস করা হলো। যেন পায়ে বল আছে মারার জন্য গোলটা হচ্ছে না। এত দিন দেরি করলাম, আরেকটু দেরি করতে পারতাম। বিধিও আমরা চাই, কিন্তু এর জন্য দ্রুত যেতে চাই না। এটার জন্য জাতীয় স্বার্থ যেন ক্ষুণ্ন না হয়। দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় ‘জাতীয় দলিত কমিশন’ গঠনের আহ্বানও জানান তিনি।
দলিত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সংসদীয় ককাস গঠনের উদ্যোগ গ্রহণে ভূমিকা রাখার কথা জানিয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘যে এমপিরা এখানে এসেছেন, তাঁদের নিয়ে বৈষম্য বিলোপ আইনের খসড়া দ্রুত সংসদে তোলার চেষ্টা করব। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে একটি সংসদীয় ককাস গঠনের চেষ্টা করব।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম সাংসদদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাদের অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে এই আইনটি সংসদে উত্থাপনের জন্য সহযোগিতা করুন। কারণ, আপনারা জনগণের প্রতিনিধি।’
বাংলাদেশ দলিত পরিষদের উপদেষ্টা মিলন দাসের সভাপতিত্বে জাতীয় নীতি সংলাপে আরও বক্তব্য দেন সাংসদ মমতাজ বেগম, হোসনে আরা লুৎফা, রুস্তম আলী ফরাজি, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলিত পরিষদের সমন্বয়ক বিকাশ দাস।