একাত্তরের সমর্থক দেশের পার্লামেন্টের স্বীকৃতি প্রথম অগ্রাধিকার: শাহরিয়ার

মো. শাহরিয়ার আলম
মো. শাহরিয়ার আলম

একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে নারী-শিশুসহ নানা বয়সের নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। ইতিহাসের নৃশংসতম ওই দিনটিকে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের প্রথম ধাপ হিসেবে স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো দেশগুলোর পার্লামেন্টের স্বীকৃতিতে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আজ মঙ্গলবার কোস্টগার্ডের এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘জাতিসংঘ ২০১৫ সাল থেকে ৯ ডিসেম্বর গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। কাজেই এটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হবে না। তাই ২৫ মার্চের কালরাতটি যে গণহত্যা হয়েছিল, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে আমরা মনোযোগ দিয়েছি।’ তিনি জানান, গণহত্যা দিবসের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর এবং জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা দেখবেন স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কীভাবে সরকারকে কাজ করতে হবে। তাঁদের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের পর সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘সময় খুব কম থাকলেও এবারের ২৫ মার্চ যাতে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো বিশেষভাবে পালন করতে পারে, সেটিকে লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করা হয়েছে। এ জন্য মিশনগুলোতে যতটা সম্ভব তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হবে। তারা নিজ উদ্যোগে কিছু ব্যবস্থা নেবে। মুক্তিযুদ্ধে যেসব দেশ আমাদের সমর্থন দিয়েছিল, সে দেশগুলোর পার্লামেন্ট বা আইনসভাকে এটিকে স্বীকৃতি দিতে বলব। ধারণা করি, বন্ধু এসব দেশ এখনো আমাদের পাশে থাকবে। তাদের সমর্থন পেলে অন্য দেশগুলোকে বিষয়টি নিয়ে সংবেদনশীল করা সহজ হবে।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মনে করেন, বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি ৪৬ বছর আগের ঘটনা। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ব রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের পরিস্থিতির বদল হয়েছে। বিশ্বে নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্বে এসেছে। তাই সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশাপাশি সাংসদদেরও বিষয়টি জানানোর প্রয়োজন রয়েছে।

শাহরিয়ার আলমের মতে, গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কোনো কোনো দেশ এর বিরোধিতা করতে পারে, এ জন্য আলাদাভাবে সব দেশের স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রুয়ান্ডার গণহত্যার স্বীকৃতির প্রসঙ্গটি তোলা হবে।

গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কোনো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন—জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। কাজটি কষ্টসাধ্য এবং এ জন্য যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হবে। প্রতিটি রাষ্ট্রকে বিষয়টি আলাদা করে বোঝাতে হবে। একটি চিরাচরিত কূটনৈতিক কায়দায় করার সুযোগ নেই। সৃজনশীলভাবে কাজটি এগিয়ে নিতে হবে।

গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। এর আগে ১১ মার্চ পার্লামেন্টের অধিবেশনে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণার ব্যাপারে জাসদের সাংসদ শিরিন আখতারের প্রস্তাবটি পাস হয়। প্রস্তাবটি পাসের বিষয়ে সংসদে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক। আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক।