চিঠির হারানো জগৎ

ডাক অধিদপ্তরের পোস্টাল জাদুঘর। সেখানে নানা সময়ের ডাকবাক্সের দুর্লভ সংগ্রহ l ছবি: লেখক
ডাক অধিদপ্তরের পোস্টাল জাদুঘর। সেখানে নানা সময়ের ডাকবাক্সের দুর্লভ সংগ্রহ l ছবি: লেখক

পুরানা পল্টনে ডাক বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে (জিপিও) ঢুকলে বিভিন্ন কাউন্টার। ৪০ নম্বর কাউন্টারের ওপর লেখা, ‘পোস্টাল মিউজিয়াম পরিদর্শন করুন।’ সময় ও স্থান উল্লেখ আছে: শুক্র ও শনিবার বন্ধ; সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

কিন্তু জাদুঘর কোথায়?
কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে অবশেষে সেটির খোঁজ মিলল। জিপিওর মূল ভবনের পেছন দিকে আরেকটি সিঁড়ি বেয়ে তৃতীয় তলায় উঠলে জাদুঘর। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার মধ্যদুপুরেও সেটার কলাপসিবল গেট লাগানো। দেখতে চাইলে প্রহরী আবদুল মালেক গেট খুলে লাইট জ্বাললেন, ফ্যান চালু করলেন। বললেন, লোকজন কম আসে। তাই বিদ্যুতের অপচয় কমাতে কেউ এলে সব চালু করা হয়।
সবার আগে চোখ গেল এক কোনায় একটা কাচের বাক্সে ‘রানার’ বা ডাকহরকরার ভাস্কর্য। হাতে বল্লম আর বল্লমের মাথায় ঝুলন্ত লণ্ঠন। কোমরে বাঁধা বিউগল, কাঁধে চিঠি বা টাকার ব্যাগ। ঝোপ-জঙ্গলে খালি পায়ে ছুটে চলা অতিচেনা চরিত্রটি কবেই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়েছে।

পোস্টাল জাদুঘরে বল্লম, লণ্ঠন হাতে রানারের প্রতিকৃতি
পোস্টাল জাদুঘরে বল্লম, লণ্ঠন হাতে রানারের প্রতিকৃতি


বাঁ-দিকে একনজরে দেখা যাবে ডাক বিভাগের কার্যক্রম। শহর থেকে গ্রামে কীভাবে ডাক পৌঁছায়, তা দেখা যাবে। ব্যক্তিগত কাজে চিঠি লেখা প্রায় উঠেই গেছে। তাই রাস্তার পাশে বসানো লাল রঙের চিঠির বাক্স দেখা যায় না। তবে এ জাদুঘরে দেখা যাবে বিভিন্ন দেশের চিঠির বাক্স। আছে মহারানি ভিক্টোরিয়ার সময়কার একটি চিঠির বাক্স। ব্রিটিশ আমলে ডাক বিভাগে ব্যবহৃত অনেক কিছুই এখানে সংরক্ষিত। ‘চিঠি দিয়া বাকচ’—অহমিয়া ভাষায় লেখা একটি বাক্সও আছে।
একপাশে টাঙ্গাইলের দেলুয়া ডাকঘরের একটি পুরোনো টেলিফোন সেট, তারগুলো ছেঁড়া। বেশ কয়েকটি বিউগল সাজানো আছে। বর্ণনায় লেখা, ব্রিটিশ আমলে রানাররা খেয়ার মাঝিকে বা স্টেজের (ঘোড়াগাড়ি) অন্য রানারদের সংকেতধ্বনি দেওয়ার জন্য বা ঘন জঙ্গলপথে চলার সময় ব্যবহার করত। নরওয়ে থেকে একটি বিউগল উপহার দেওয়া হয়েছে এ জাদুঘরে।
চামড়ার ব্যাগ, চপ্পল, টেবিল ঘড়ি, ব্যাজ, বন্দুক, সিলমোহর, ছুরি, লণ্ঠনসহ অনেক পুরোনো জিনিসের দেখা মিলবে। চিঠি মাপার বাটখারা, দাঁড়িপাল্লা স্মৃতি হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
ডাকটিকিটপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণের জায়গা হতে পারে এ জাদুঘর। একটি ঘর পুরোটাই সাজানো পৃথিবীর নানা দেশের নানা রকম ডাকটিকিটে। জানা যায়, ১৯১টি দেশের প্রায় ৩ হাজার ডাকটিকিট আছে এখানে।
জাদুঘরের অনেক জিনিসেরই তথ্যসংবলিত বিবরণ নেই।
মিউজিয়াম ও ফিলাটেলি বিভাগের সুপারভাইজার এস এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রচারণা তেমন নেই বলে মানুষ কম আসে। দিনে তিন-চারজন আবার এর বেশিও হয়। কোনো কোনো দিন দর্শক হয়ই না।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি নির্মিত জাদুঘরটি ১৯৮৫ সালে সম্প্রসারণ করা হয়। ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাদুঘরের জন্য নতুন গ্যালারি করা হচ্ছে। আগামী জুন-জুলাইয়ে সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে। তখন আশা করছি দর্শক বেশি হবে। নতুন গ্যালারি সামনের দিকে হচ্ছে।’