বৈষম্য বিলোপকে গুরুত্ব দিয়ে আজ আইপিইউ সম্মেলন শুরু

আজ শনিবার থেকে শুরু হবে পাঁচ দিনের ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলন, যেখানে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য বিলোপের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক পরিসরে আলোচনা হবে। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘রিড্রেসিং ইনইকুয়েলিটিজ: ডেলিভারিং অন ডিগনিটি অ্যান্ড ওয়েল বিয়িং ফর অল’ (বৈষম্যের প্রতিকার: সকলের জন্য মর্যাদা ও কল্যাণ নিশ্চিত)।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র চত্বরে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সম্মেলন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানান আয়োজকেরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি চর্চার ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বন্ধন জোরালো করার ক্ষেত্রে আইপিইউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন, গণতন্ত্রের সফল অভিযাত্রা ও সুদূরপ্রসারী উন্নত, সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাগুলো আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সামনে তুলে ধরতে পারব।’
এবারের সম্মেলনে কেন বৈষম্যের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়টির সঙ্গে সহিংস উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসের যোগসূত্র কী সে প্রসঙ্গে আইপিইউ মহাসচিব মার্টিন চুনগুং বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি) বিশ্বনেতারা একজনকে উন্নয়নের বাইরে না রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যেসব কারণে লোকজন উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে পড়ে তার অন্যতম কারণ বৈষম্য। লোকজন কখনো কখনো মনে করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কারণে তাদের ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়েও একধরনের বৈষম্য তৈরি হয়। তাই বাংলাদেশের মতো বন্ধুপ্রতিম দেশে আইপিইউ সম্মেলনে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য নিয়ে আলোচনা হবে।
সম্মেলনে জঙ্গিবাদ ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে আইপিইউর কৌশল কী হবে, তা নিয়ে সংস্থার নির্বাহী কমিটিতে আলোচনা হবে। আমরা মনে করি, শুধু সামরিকভাবে এটাকে মোকাবিলা করাটা ঠিক হবে না। জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলো কী অর্থাৎ আমরা রোগের দিকে তাকাব না, সিম্পটমের দিকে তাকাব না—রোগটা কেন হচ্ছে সেই জায়গায় আমরা আমাদের দৃষ্টি দিতে চাই। এবং সেখানে সংসদের কী ভূমিকা থাকবে, সংসদ সদস্যদের কী ভূমিকা থাকবে—সেটি আমরা দেখব।’
গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির জন্য আইপিইউকে কাজে লাগানো হবে কি না জানতে চাইলে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ঢাকায় আইপিইউ সম্মেলনের আয়োজন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশে বাংলাদেশের কূটনীতিক মিশন নেই, সংসদীয় কূটনীতির মাধ্যমে সে দেশগুলোর কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্র তৈরি করে দেবে। গণহত্যার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সংসদ সদস্যরা তাঁদের অন্য দেশের সতীর্থদের কাছে যাওয়ার সুযোগ আছে।
আইপিইউ সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোর আইনি বাধ্যবাধকতা আছে কি না জানতে চাইলে মার্টিন চুনগুং বলেন, আইপিইউ কিন্তু জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ নয়। এটি কোনো পুলিশি সংস্থা নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে আইপিইউতে যে সিদ্ধান্ত হয়, সদস্য দেশগুলো দেশে ফিরে তাদের সংসদে তা প্রচার করেন। ফলে নৈতিক একধরনের বাধ্যবাধকতা আছে এই সিদ্ধান্তের।
আয়োজকেরা জানান, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৩২ দেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদলসহ মোট ১৬৪টি প্রতিনিধিদল এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৪৮ জন নিবন্ধন করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৪৫টি দেশের স্পিকার ও ৩৭টি দেশের ডেপুটি স্পিকার।
বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে রোমে অনুষ্ঠিত আইপিইউ কাউন্সিলের অংশ নিয়ে সংস্থায় যোগ দিয়েছিল। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ওই অধিবেশনে অংশ নেন।
সাবের হোসেন জানান, ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে চালু হতে যাচ্ছে আইপিইউ টিভি। আর এই টিভির সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান।
এবারের সম্মেলনটি কীভাবে পরিবেশবান্ধব হচ্ছে তা নিয়ে আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ব্যাপক পরিসরে বড় আয়োজন হলে তাতে কার্বন নিঃসরণ হয়ে থাকে। যেটুকু কার্বন নিঃসরণ হয়েছে, তা প্রশমনের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়ে পরিবেশ সুরক্ষার উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব আয়োজন নিশ্চিত হয়।