টাকা আত্মসাতের শাস্তি বদলি!

ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার সত্যতা পাওয়ার পরও দোষী পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোনো শাস্তি না দিয়ে শুধু বদলি করেছে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি)। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সভা করার এখতিয়ার না থাকলেও বিভিন্ন সভার নাম করে আপ্যায়ন ভাতা তুলেছেন তাঁরা। এ ছাড়া তুলেছেন অযৌক্তিক ভ্রমণ বিলও।

টাকার পরিমাণ কম হলে এসব অপরাধের বিচার হয় না এবং বছরের পর বছর ধরে এসব অপরাধ হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন বিসিআইসির কর্মকর্তারা। এবারের অনিয়মের অভিযোগও আমলে নেওয়া না হলে তা সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। কমিটির নির্দেশে তদন্ত হলে পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের সত্যতা মেলে। সংসদীয় কমিটি দোষী ব্যক্তিদের বদলি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এঁদের মধ্যে এক কর্মচারী আদালতে রিট করলে তাঁর বদলি স্থগিত হয়ে যায়।

এবারের অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয়েছে তৎকালীন হিসাব নিয়ন্ত্রক ও বর্তমান পরিচালক শাহীন কামাল, অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষক শুভাশিস অধিকারী, উপপ্রধান হিসাবরক্ষক নাছির উদ্দিন, হিসাব বিভাগের এমএলএসএস হুমায়ুন কবির ও মো. ইসলাম আলীকে। গতকাল মঙ্গলবার শাহীন কামালকে তাঁর দপ্তরেই পাওয়া গেছে।

বিসিআইসির কর্মকর্তারা জানান, বিসিআইসির হিসাব শাখায় ভুয়া বিল-ভাউচারে প্রায় ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তবে পরিচালক শাহীন কামাল গতকাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ৬২ হাজার টাকার বিল ভাউচারে গরমিল হয়েছে। এর বেশি নয়। এ ছাড়া যেসব অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে, তা ঠিক নয়।

তদন্ত কমিটি বলেছে, অযৌক্তিক ও এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে সভা আহ্বান করে বিল তুলে ক্ষমতার লঙ্ঘন করেছেন তাঁরা। দরকার না থাকলেও বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণ ব্যয় দেখানো হয়েছে। তদন্ত কমিটি বলেছে, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৩৪টি সভা দেখানো হয়েছে। সার আমদানিসংক্রান্ত কোনো সভা করার এখতিয়ার তাঁদের না থাকলেও সেই সভাও তাঁরা করেছেন। হিসাব বিভাগে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৭০ টাকা সভার নামে আপ্যায়ন বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৫৮৬ টাকা ভুয়া ভ্রমণ বিলের হিসাব দেখানো হয়।

গত মার্চে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সার আমদানিসংক্রান্ত বিষয়ে হিসাব নিয়ন্ত্রকের কক্ষে গত বছরের এপ্রিল মাসে ১৬ দিন সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ৩ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক সভা অনুষ্ঠানের কথা বলে আপ্যায়ন বাবদ ৬ হাজার ৯৩৮ টাকা খরচ দেখানো হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ১৩টি সভার নামে আপ্যায়ন বাবদ ৫ হাজার ৬৮১ টাকা খরচ দেখানো হয়।

জানতে চাইলে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, অনেক কর্মকর্তাই বলছেন তাঁরা দোষী নন, তাঁরা শুধু স্বাক্ষর করেছেন। যেহেতু তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে তাঁরা জড়িত ছিলেন, তাই তাঁদের বদলি করা হয়েছে। এটাই তাঁদের শাস্তি।