যশোরে 'বন্দুকযুদ্ধে' দুজন নিহত

যশোরের চৌগাছা উপজেলার নিমতলা বাজার এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। আজ বুধবার সকালে পুলিশ দুজনের লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি, পুলিশ তাঁদের হত্যা করতে পারে। তবে পুলিশের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীদের দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে তাঁরা নিহত হয়েছেন।

নিহত দুজন হলেন চৌগাছা উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে একসের আলী (৪৫) ও বাগপাড়া বিশ্বাসপাড়া গ্রামের কোহিনুর রহমানের ছেলে সাঈদুর রহমান (৩৫)। একসের আলী কাবিলপুর বাজারের সারের ব্যবসা করতেন আর সাঈদুর রহমান বাসের চালক ছিলেন।
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে স্থানীয় লোকজন খবর দেয় যে যশোর-চৌগাছা সড়কের নিমতলা বাজার এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ের দুজন পড়ে ছিলেন। তাঁদের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।’
দুজনের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেলে পরিবারের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
হাসপাতালের মর্গের সমানে নিহত একসের আলীর স্কুলপড়ুয়া ছেলে মাসুম পারভেজ বলে, ‘মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আব্বু নিখোঁজ হন। মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাতে অনেক খোঁজখবর করেও আব্বুকে পাওয়া যায়নি। সকালে স্থানীয় মানুষের কাছে জানতে পারি নিমতলা বাজারের পাশে লাশ পড়ে আছে। সেখানে গিয়ে লাশ পাইনি। শুধু রক্ত দেখেছি। পরে হাসপাতালে এসে লাশ পাই।’
কারা হত্যা করতে পারে, এমন প্রশ্নের উত্তরে নিহত একসের আলীর চাচা শ্বশুর আবদুল মাজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশে বন্দুকযুদ্ধের যে নাটক হচ্ছে, এটিও তেমনই ঘটনা। পুলিশ তাঁকে ক্রসফায়ারে হত্যা করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘একসেরের বিরুদ্ধে মাদকের ১০-১২টি মামলা রয়েছে। কিছুদিন আগে মাদক ও জঙ্গিবিরোধী সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যশোরে এলে মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হয়। আমি একসেরকে বলেছিলাম, তুমি আত্মসমর্পণ করো। সে বলেছিল, পুলিশ আত্মসমর্পণ করতে দিচ্ছে না। এরপর থেকে সে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াত।’
নিহত অপরজন সাঈদুর রহমানের বাবা কোহিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাদাপোশাকে একদল লোক সাঈদুর ও একসেরকে চৌগাছার কাবিলপুর বাজার থেকে ধরে নিয়ে যায়।’ এরপর থেকে তাঁদের সঙ্গে তিনি আর যোগাযোগ করতে পারেননি। সকালে তাঁদের লাশ দেখছেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে চৌগাছা থানার ওসি মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন,‘পুলিশ কাউকে গুলি করে হত্যা করেনি। মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে মরেছে। দুজনই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। একসের আলীর বিরুদ্ধে ঢাকা, যশোর ও চৌগাছা থানায় ১৯টি মাদকের মামলা রয়েছে। সাঈদুর রহমানের বিরুদ্ধেও চৌগাছা থানায় চারটি মাদকের মামলা রয়েছে।’
বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল, একটি ওয়ান শুটারগান (বন্দুক), একটি গুলি ও একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
নিমতলা বাজার এলাকার স্থানীয় লোকজন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, রাতে তাঁরা গুলির দুটি শব্দ শুনতে পেয়েছেন। ভোরে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থল থেকে পুলিশকে গাড়িতে করে লাশ নিয়ে যেতে দেখেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিমতলা বাজারসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ফুলসরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে বাজারের প্রহরীরা বিকট দুটি শব্দ শুনে আমাকে ডাকতে এসেছিল। কিন্তু আমি রাতে বের হইনি। ভোর পাঁচটার দিকে নামাজ পড়তে গিয়ে দেখি, গাড়িতে করে পুলিশ দুটি লাশ নিয়ে যাচ্ছে। এর বেশি কিছু জানি না।’