এক দপ্তরে দুই চেয়ারম্যান!

বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান কে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নতুন চেয়ারম্যান যোগদানপত্র দিলেও পুরোনো চেয়ারম্যান তাঁর দপ্তর ছাড়ছেন না। ফলে দুজনই নিজেকে বিসিআইসির চেয়ারম্যান বলে দাবি করছেন।
গত ২৮ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবালকে বদলি করা হয় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে। আর বিসিআইসির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহ মো. আমিনুল হককে।
আমিনুল হক গত ৩০ মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানপত্র দেন। কিন্তু আদেশের ২০ দিন পার হলেও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আমিনুল হককে কিছুই জানানো হয়নি। পরে তিনি তাঁর পুরোনো দপ্তর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কার্যালয়ে গিয়ে বসছেন। আর মোহাম্মদ ইকবাল বদলির আদেশের তোয়াক্কা না করে নথিপত্র স্বাক্ষরসহ সব কাজ করে যাচ্ছেন।
পদ আটকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘আমি কোনো আদেশ পাইনি। আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। এ জন্য আমার পদ ছাড়িনি।’ বদলির আদেশের চিঠি পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনো চিঠি আসেনি।’
তবে বিসিআইসি সূত্র বলছে, মোহাম্মদ ইকবালের বেশি দিন আর চাকরি নেই। বাকি সময়টা তিনি ওই পদেই থাকতে চান। চেয়ারম্যান পদ ধরে রাখতে তিনি মন্ত্রী, সচিবের কাছে দৌড়াচ্ছেন।
বিসিআইসির কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও বিব্রত। চেয়ারম্যানের কাছে তাঁরা বিভিন্ন প্রসঙ্গে এই বদলির কথা আনেন। তাঁরা জানান, গত ১৯ মার্চ জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তির করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট ২৩ মার্চ বিসিআইসিতে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ কেন তদন্ত করা হবে না, তা জানতে চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে রুল জারি করেন এবং তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। রিট আবেদনে বিসিআইসির চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল, কর্মচারী প্রধান মমতাজ বেগম, পরিচালক (বাণিজ্যিক) আবদুল হাই ও পরিচালক (অর্থ) হাইয়ূল কাইউম।
সদ্য পদায়ন পাওয়া বিসিআইসির নতুন চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি কিছুটা বিব্রত। আমি যোগদানের জন্য সচিবের কাছে আমার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে এসেছি। কেউই কিছু বলছেন না।’ মোহাম্মদ ইকবাল তাঁর বদলির আদেশ পাননি জানালে হেসে নতুন নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান বলেন, এই আদেশ তো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেই আছে। এখান থেকেই সবাই দেখে নেয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত নিয়ম হচ্ছে বদলির আদেশ হলে তা দ্রুত কার্যকর করা। ২০ দিনেও যেহেতু স্থগিতাদেশ হয়নি, সেহেতু তাঁর (মোহাম্মদ ইকবাল) নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়া উচিত ছিল।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিসিআইসির চেয়ারম্যানকে সেখানেই রাখার ব্যাপারে আমাদের কাছে অনুরোধ এসেছে। বিষয়টি তো এত সোজা নয়। এটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার আছে। পদায়ন বা বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী, আবার বাতিল করতে হলে তাঁর কাছে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। সুতরাং দেখা যাক কী হয়।’