প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে আচরণ নিয়ে সমাজ সচেতন নয়

প্রথম আলো আয়োজিত ‘প্রতিবন্ধীবান্ধব জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। পাশে আছেন সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলো কার্যালয় থেকে তোলা। ছবি: সাজিদ হোসেন।
প্রথম আলো আয়োজিত ‘প্রতিবন্ধীবান্ধব জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। পাশে আছেন সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলো কার্যালয় থেকে তোলা। ছবি: সাজিদ হোসেন।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, সমাজে সেই সচেতনতা তৈরি হয়নি। সরকারি স্বাস্থ্য অবকাঠামো প্রতিবন্ধীবান্ধব না হওয়ায় এই ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা পেতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হচ্ছে। কিন্তু সেখান থেকে সেবা নিতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা বেশির ভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নেই। এ কারণে মাঝপথে চিকিৎসা থামিয়ে দিতে হয়। 

‘প্রতিবন্ধীবান্ধব জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এসব মন্তব্য করেছেন। আর তাঁরা সুপারিশ করেছেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাজেট বরাদ্দ এবং জনবলকে প্রশিক্ষিত করা উচিত। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দেওয়া যন্ত্রপাতি যাতে সঠিক হয়, তা যাতে বাড়তি বিড়ম্বনা ডেকে না আনে, সে বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে প্রথম আলো এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। বেসরকারি সংগঠন সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের (সিডিডি) সহায়তায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। এতে আলোচকেরা বলেন:
আলোচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরাপদ প্রসব, মানসম্মত চিকিৎসা, সড়ক নিরাপত্তা, ফুটপাত কেমন হবে—সবকিছুর সঙ্গেই প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি জড়িত। অসংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে প্রতিবন্ধিতা। তাই এ ধরনের রোগের জন্য অপারেশনাল প্ল্যানেও গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। নতুন স্বাস্থ্য স্থাপনায় ঢালু পথ বা র‍্যাম্প থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালে।

‘প্রতিবন্ধীবান্ধব জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো। ছবিটি বৃহস্পতিবার প্রথম আলো কার্যালয় থেকে তোলা। ছবি: সাজিদ হোসেন
‘প্রতিবন্ধীবান্ধব জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো। ছবিটি বৃহস্পতিবার প্রথম আলো কার্যালয় থেকে তোলা। ছবি: সাজিদ হোসেন

জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মানস রঞ্জন চক্রবর্তী স্নাতক পর্যায়ের চিকিৎসা পাঠ্যক্রম এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করেন। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘রোগী কানে শোনেন না। তাঁকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না। অথচ ইশারা ভাষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন কর্মী থাকলে এই রোগীর চিকিৎসা করাটা সহজ হয়ে যেত। হাসপাতালের জন্য আমি চেয়েছি স্পিচ থেরাপিস্ট আর দেওয়া হয়েছে ফিজিওথেরাপিস্ট। আমাদের ধারণাকেও স্পষ্ট করতে হবে।’
গোলটেবিল বৈঠকের মূল বক্তব্যে সিডিডির সহকারী পরিচালক আনিকা রহমান বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার ‘সবার সাধ্যের নাগালে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা’ শীর্ষক পরিকল্পনায় ৪৪টি কার্যক্রম এবং ৫২টি নির্দেশক রেখেছে। তবে এতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
পাবনার দোগাছি ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-সহায়ক দলের সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন নিজের এবং তাঁর দলের এক নারী সদস্যের চিকিৎসাসেবা পেতে যে ভোগান্তি হয়েছে তা তুলে ধরেন।
গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান, প্রতিবন্ধী ও উন্নয়নবিষয়ক পরামর্শক নাফিসুর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ, জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের পরিচালক সৈয়দ মাসুদ আহমেদ, নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক সংগঠন লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের ডিজঅ্যাবিলিটি রাইটস স্পেশালিস্ট লেইক সুইয়ি এবং একই সংগঠনের জেন্ডার অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুশন অ্যাডভাইজার মুরালি পদ্মানাভান, মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ইমরান আলী, সিডিডির পরিচালক নাজমুল বারী।