বাংলাদেশি এক জঙ্গির সন্ধান চায় ভারত

আইএসের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং আইএসের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন এমন এক বাংলাদেশি জঙ্গিকে খুঁজছে ভারত সরকার। তাঁর নাম শরিফুল ইসলাম। বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটক আইএস জঙ্গি মো. মসিউদ্দীন ওরফে মুসার সঙ্গে বাংলাদেশের এই শরিফুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। ভারত সরকারের ভাষ্যমতে, মুসাকে পরিচালিত করছেন বাংলাদেশের জঙ্গি শরিফুল ইসলাম।
মুসার বিরুদ্ধে যে তদন্ত ও বিচার চলছে, তা সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চায় ভারত। সে জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ‘মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিটেন্স চুক্তির’ আওতায় চলতি এপ্রিলের মধ্যে ভারত সরকার শরিফুলের ব্যাপারে তথ্য সরবরাহ করতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে। বিশেষ করে শরিফুলের বর্তমান অবস্থান ও তার সহযোগী যদি কেউ থাকে, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনি প্রক্রিয়ায় আনতে বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শরিফুলের ব্যাপারে তাদের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত দিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদনসহ পাঠানো একটি চিঠিতে জানানো হয়েছে, শরিফুলের সঙ্গে মুসার সরাসরি টেলিফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ ছিল। তাঁরা বড় ধরনের ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করেছেন। শরিফুল মুসাকে কলকাতাসহ ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিদেশিদের হত্যা, জনবহুল স্থানে বিশেষ করে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দেন। কলকাতায় মাদার তেরেসার মিশনারি সংগঠনের সদর দপ্তর মাদার হাউসকে আক্রমণের তালিকায় রাখতে বলা হয়। পরামর্শ দেওয়া হয় পর্যায়ক্রমে দিল্লি ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে সর্বশেষ পরিস্থিতি বুঝে কাজ করার।
ভারতের তদন্ত সংস্থা শরিফুল ও মুসার এমন অনেক তথ্য, কথোপকথন, সামাজিক যোগাযোগের প্রমাণ অনুসন্ধান করে বের করেছে। এনআইএ বলেছে, শরিফুল ২০১৫ ও ২০১৬ সালে তিনবার ভারতে গিয়েছেন। শরিফুলের ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন নম্বর দিয়ে আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তবে মুঠোফোনটি অন্য ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এ ছাড়া মুসার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হয় ফেসবুক, স্কাইপ, টেলিগ্রাম, থ্রিমা প্রভৃতি ব্যবহার করে। মুঠোফোনের সূত্র ধরে শরিফুলের অবস্থান ও চলাচলের তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ যাবতীয় তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। তা ছাড়া শরিফুলের আর কোনো ফোন নম্বর বা ছবি থাকলে তা-ও দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে শরিফুল আর কোনো অপরাধে জড়িত কি না, তিনি গ্রেপ্তার হয়ে থাকলে এনআইডি, ১০ বছরের ভ্রমণ বিবরণী ইত্যাদি চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।
টেলিগ্রাম নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে মুসা ও শরিফুল যেসব কথোপকথন চালিয়েছেন, তার রেকর্ড পাঠিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৬ জুলাই বর্ধমান রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার হন মো. মসিউদ্দীন ওরফে মুসা। তাঁকে আইএস জঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করেছে ভারতের পুলিশ। আইএসের সঙ্গে তাঁর যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে তারা। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের ও বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের যোগাযোগ থাকার কথাও জানিয়েছে তারা।
১৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল কলকাতায় গিয়ে মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বাংলাদেশের পুলিশ সে সময় বলেছে, তারা জেনেছে, মুসার জন্ম বীরভূমে হলেও বড় তামিলনাড়ুর তিরুপুরে। জিজ্ঞাসাবাদে মুসা বলেছেন, বাংলাদেশের ‘নব্য জেএমবি’র সদস্যরা তাঁকে উগ্রবাদের দীক্ষা দিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের যতটুকু ধারণা, নব্য জেএমবির খালিদই হচ্ছেন শরিফুল ইসলাম। আমাদের কাছে তাঁর ছবি ও বাড়ির ঠিকানা সবই আছে। আমরা তাঁকে খুঁজে বের করার অনেক চেষ্টা করছি। তবে মনে হচ্ছে, এই জঙ্গি ভারতেই কোথাও আছেন।’
সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব ব্যাপারে কাজ করছে। এ ব্যাপারে ভারত সরকারকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।’