মোট ক্ষতি ৭২ কোটি টাকা, পুড়েছে এন্ট্রি ছাড়া ৫৩ লাখ টাকার ট্যাবও

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাখালীর কেন্দ্রীয় পণ্যাগারে ৮ এপ্রিল দিবাগত রাতের অগ্নিকাণ্ডে ৭২ কোটি ৬৬ লাখ ১৪ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সফটওয়্যারে এন্ট্রি না দিলেও পণ্যাগারে থাকা ২০০টি ট্যাবলেট পিসির দামও (প্রায় ৫৩ লাখ টাকা) ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে যোগ করা হয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গঠিত ইনভেন্টরি কমিটির প্রতিবেদনে ক্ষয়ক্ষতির এ হিসাব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের আগে ৬ এপ্রিল পণ্যাগারের সফটওয়্যার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পণ্যাগারে মোট ২১৭ প্রকার পণ্য সংরক্ষিত ছিল। তবে ১৮ এপ্রিল পণ্যাগারের অতিরিক্ত পরিচালক হানিফুর রহমানের (ড্রাগস অ্যান্ড স্টোরস) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০টি ট্যাব আগুনে ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু সফটওয়্যারে এর এন্ট্রি ছিল না। কমিটিও সর্বশেষ পণ্য তালিকায় এর নাম পায়নি। ২০০টি ট্যাবের ক্রয়মূল্য ৫২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অতিরিক্ত পরিচালকের তথ্যের ভিত্তিতে পণ্যাগারে মোট পণ্যের সংখ্যা ২১৭-এর পরিবর্তে ২১৮টি ধরে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ছয় সদস্যের কমিটির পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ইনভেন্টরি কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সফটওয়্যারে এন্ট্রি দেওয়া হয়নি, কিন্তু বলা হচ্ছে আগুনে পণ্য পুড়েছে, এটাকে অনিয়মই বলা যায়। ওই টাকার পরিমাণও একেবারে কম নয়। তবে কমিটি যা পেয়েছে, তাই বলেছে। পরবর্তী সময়ে তদন্ত করলে বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে।
অবশ্য গতকাল অতিরিক্ত পরিচালক হানিফুর রহমান টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ট্যাবগুলো কেনা হয়েছিল অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ইউনিটের জন্য। তখন এ পণ্য এন্ট্রি দেওয়া হয়। তবে এমআইএস বিভাগের পরিচালকের নামে তা ইস্যু হওয়ার পর স্টোরকিপার ভুল করে আর পুনরায় এন্ট্রি দেননি। এটিকে অনিয়ম না বলে ভুল বলা যায়। বিষয়টি ইনভেন্টরি কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়।
প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার টেলিফোনে বলেন, তিনি ঢাকার বাইরে থাকায় প্রতিবেদনটি সম্পর্কে সেভাবে কিছু জানেন না। অগ্নিকাণ্ডের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার সার্ভিসের করা অন্য দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনো অধিদপ্তর পায়নি।
ইনভেন্টরি কমিটির সদস্যরা ১১ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত পণ্যাগার পরিদর্শন করেন। পণ্যাগারের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে কোনো মালামাল এই কমিটি যাচাই করেনি। পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ, মজুতের প্রতিবেদন ও কেন্দ্রীয় পণ্যাগারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ, অক্ষত ভবনগুলোর বর্তমান মজুত নির্ধারণ করা হয়েছে।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুনে পণ্যাগারের ৮৫ প্রকার পণ্য সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু এর আর্থিক মূল্যই ৫০ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া আংশিক পুড়ে যাওয়া ২৯ প্রকার পণ্য, ভবনের পূর্তকাজের ক্ষতি, যন্ত্রপাতি, আসবাবসহ মোট ক্ষতির হিসাব বের করা হয়েছে।
জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের মধ্যে পাঁচ প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ছিল। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেক্টেবলস ডিপো প্রোভেরা। ৫২ লাখ ৫০ হাজার ৯০০ ডিপো প্রোভেরা ভায়ালের ক্রয়মূল্য ছিল ১৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার বেশি। আইইউডি ছিল ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪০০টি, যার ক্রয়মূল্য ৯১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া মাতৃ-শিশু-কিশোরী স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনায় ব্যবহারের জন্য কেনা ওষুধ ছিল পণ্যাগারে। পণ্যাগারে ১৫ প্রকার ৭০৭টি নথি এবং বিভিন্ন রেজিস্টার ছিল, যা পুড়ে গেছে।
ইনভেন্টরি কমিটির আহ্বায়ক ও অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশুস্বাস্থ্য) চিকিৎসক মোহাম্মদ শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ওষুধের যে মজুত আছে, তা দিয়ে আগামী তিন মাসের মতো চলবে। সরকারের অপারেশনাল পরিকল্পনায় ওষুধ কেনা বাবদ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মে মাসে এই পরিকল্পনা অনুমোদন হওয়ার কথা। কিন্তু জরুরি অবস্থায় ওই বরাদ্দ থেকে ওষুধ কেনার জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে অধিদপ্তর।
মোহাম্মদ শরীফ বলেন, পরিবার পরিকল্পনাসামগ্রীর মধ্যে ইনজেকশন, আইইউডি কিনতে হবে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)-সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা সহায়তা দেবে বলে অঙ্গীকার করেছে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।