পা ভাঙা, তাই মঞ্চে ডাক পড়ে না

শিল্পী নজরুল ইসলাম
শিল্পী নজরুল ইসলাম

লোকগানের শিল্পী নজরুল ইসলাম। গানে গানে শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখতেন। নিজেও আনন্দ পেতেন, গানের মাঝে খুঁজে পেতেন নিজেকে। বাজারে চারটি ক্যাসেটও বেরিয়েছে ঝিনাইদহের এ বাউল-শিল্পীর। তবে সড়ক দুর্ঘটনা তাঁর সংগীতজীবনটা কেড়ে নিয়েছে।

মঞ্চে গান করেই বাড়ি ফিরছিলেন নজরুল। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যায় তাঁর ডান পা। এখন বাড়িতে পড়ে আছেন একটা সময় মঞ্চ কাঁপানো নজরুল।

নজরুল ইসলাম (৫০) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মৃত হানেফ আলীর ছেলে। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি তাঁর প্রবল আকর্ষণ ছিল। একটা সময় ভর্তি হন ঝিনাইদহ শহরের হামদহ বহুমুখী বাউল সমিতিতে। পরে বিবর্তন নাট্যগোষ্ঠীতে। এভাবে তিনি নিজেকে বাউলশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, মাত্র ২০ বছর বয়সে মঞ্চে গান করা শুরু করেন। সহস্রাধিকবার মঞ্চে গান করেছেন। দর্শকের মন জয় করতে পেরে নানা উপহারও পেয়েছেন। এ ছাড়া তার ‘সোনার ময়না রে’, ‘ডুববে প্রেম সাগরে’, ‘হারিয়ে গেছে সেই দিন’সহ চারটি ক্যাসেট বাজারে এসেছে।

বাউলশিল্পী নজরুলের ক্যাসেটগুলো এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। নামডাক ছড়িয়ে পড়ায় কোথাও মঞ্চে গান করতে গেলে দূর-দূরান্ত থেকে শ্রোতারা তাঁর গান শুনতে ছুটে আসতেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় পঙ্গু হওয়ার পর সেসব এখন কেবলই স্মৃতি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে গান করার শক্তি নেই বলে এখন আর কেউ তাঁকে ডাকে না। মাঝেমধ্যে ক্রাচে ভর দিয়ে ভ্যান-রিকশায় চেপে ছুটে যান ফোক গানের আসরে।

নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সালের ২৮ জুন যশোরের চৌগাছা উপজেলায় মঞ্চগানের আসরে গিয়েছিলেন। মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে দুর্ঘটনায় পড়েন। এতে তাঁর ডান পা ভেঙে যায়। প্রথমে যশোর ও পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সাড়ে চার বছরে সাত দফা অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, আরেক দফা অস্ত্রোপচার করালে তিনি দাঁড়াতে পারবেন। কিন্তু আরও তিন লাখ টাকা লাগত। তা জোগাড় করতে পারেননি।

একটা সময় গান করেই চালানো নজরুলের সংসারে আছেন স্ত্রীর পাশাপাশি দুই ছেলে। বড় ছেলে বাক্‌প্রতিবন্ধী। ছোটটা কলেজে পড়েন। সংগীতজীবনের মতো সংসার-জীবনটাও এখন কষ্টের সাগরে ভাসছে।

ঝিনাইদহ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি রাজু আহম্মদ বলেন, শিল্পী নজরুল এলাকার মানুষের সংগীত পিপাসা মিটিয়েছেন। আজ তিনিই হারিয়ে যেতে বসেছেন। অথচ সমাজে বিত্তবান অনেকেই আছেন, যাঁরা এই দুস্থ শিল্পীর পাশে দাঁড়াতে পারেন।