আসামির ডাকনামে আর মামলা নয়

‘ঘোড়া মাসুদ’, ‘কিলার সেলিম’ কিংবা ‘কালা আসলাম’—এ রকম নাম ব্যবহার করে এজাহার না করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পরিবার থেকে রাখা হয়নি—এমন ডাকনাম ও আসামির সামাজিক মর্যাদার হানি ঘটে, আসামির এমন নামে মামলা গ্রহণ করতে পুলিশকে নিষেধ করা হয়েছে। দেশের সব পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

থানায় যাতে এ রকম নামের মামলা বা এজাহার গ্রহণ না করা হয়, সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে বলেছেন উচ্চ আদালত।   

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ১১ এপ্রিল এই আদেশ দেন। প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে ডাকনাম ব্যবহার করে ঢাকার কদমতলী থানায় করা একটি মামলায় এক আসামির আগাম জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ আসে। আদালত বলেছেন, দেখা যায়, অনেক মামলায় আসামির ডাকনাম ব্যবহার করেন কিছু বাদী এবং পুলিশ ওই ডাকনামে মামলা নিবন্ধন করে। এটি দুঃখজনক ও এ ধরনের কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়।

নথিপত্রে দেখা যায়, বলপ্রয়োগ, মারধর ও চুরির অভিযোগে গত বছরের ১০ নভেম্বর কদমতলী থানায় ওই মামলাটি করেন জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি। এজাহারের পাঁচ আসামির একজন হলেন ওমর হক। তাঁকে ওই এজাহারে ‘বাইট্টা ওমর’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। ওমর হক উচ্চ আদালতে আগাম জামিন চাইতে গেলে ডাকনামের ব্যাপারটি আদালতের নজরে আসে।

ওই জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে ২৮ মার্চ আদালত একটি আদেশে বলেন, এফআইআরের কলামে দেখা যায়, প্রতিটি আসামির ডাকনাম দেওয়া রয়েছে, যা বাদী নিজে দিয়েছেন, এগুলো ভালো নাম নয়। বাদী কেন প্রতিটি আসামির বিরুদ্ধে এমন ডাকনাম যুক্ত করলেন, তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। আদালত বাদীর কাছে এর ব্যাখ্যা জানতে চান।

যোগাযোগ করা হলে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে চমৎকার নির্দেশনা। কারণ, মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বললে বলতে হবে, মানবিক মর্যাদাটি হচ্ছে মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় বিষয়।’